ফাইল ছবি
বাংলাদেশের রাজনীতির একটি আলোচিত অধ্যায় হলো তারেক রহমানের দেওয়া রাজনৈতিক মুচলেকা-যেখানে তিনি সরাসরি রাজনীতিতে অংশ না নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এই সিদ্ধান্ত ব্যক্তিগত নয়, বরং এক জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নিরাপত্তা সংকট, অভ্যন্তরীণ চাপ এবং রাষ্ট্রীয় প্রক্রিয়ার সম্মিলিত ফল হিসেবে উঠে আসে।
২০০৭ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় গ্রেফতার ও একাধিক মামলার মুখোমুখি হন তারেক রহমান। সেই সময় রাষ্ট্রযন্ত্র এবং আইনশৃঙ্খলা–বাহিনী দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে নেমেছিল, যেখানে রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছিল। বিএনপির অভ্যন্তরে তখনও নেতৃত্ব সংকট ও দ্বন্দ্ব তীব্র আকার ধারণ করেছিল।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তারেকের ওপর চাপ ছিল মূলত দুটি স্তর থেকে- সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের লক্ষ্য ছিল রাজনীতির মাঠে ‘দুই নেতাকে পাশ কাটানো’। বিশেষজ্ঞরা বলেন, সেই প্রেক্ষাপটে তারেক রহমানকে দেশত্যাগ ও রাজনীতি থেকে বিরত থাকার শর্তে তুলনামূলক নিরাপদ পথ দেখানো হয়।
অন্যটি বিএনপির ভেতরে তখন নেতৃত্ব বিরোধ, সংস্কারপন্থী অংশের সক্রিয়তা এবং নীতিগত বিভক্তি তৈরি হয়। এর ফলে দলীয় কোন্দলও তারেককে কোণঠাসা করে তোলে।
সেই সময় চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি, পরিবারের নিরাপত্তা এবং রাজনৈতিক হয়রানি থেকে সাময়িক মুক্তি পাওয়াই ছিল মুচলেকার মূল কারণ। মুচলেকায় উল্লেখ করা হয়, তিনি প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন না, নির্বাচনে অংশ নেবেন না এবং কোনো সংগঠন পরিচালনার দায়িত্ব নেবেন না।
তারেক রহমান পরবর্তীতে যুক্তরাজ্যে দীর্ঘ সময় অবস্থান করেন এবং সেখান থেকে দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। ফলে মুচলেকা রাজনৈতিকভাবে তাকে পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় করতে পারেনি, বরং তাকে দূরবর্তী কিন্তু প্রভাবশালী ভূমিকা পালনের অবস্থানে নিয়ে যায়।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেখা যায়, সে সময়ের এই মুচলেকা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়-যা শুধু একজন নেতার নয়, বরং দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ক্ষমতার বলয়ের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরে।
এসএইচ
আপনার মতামত লিখুন :