জয়ে মরিয়া আ.লীগ-বিএনপি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মে ২৪, ২০১৮, ০১:৩৭ পিএম
জয়ে মরিয়া আ.লীগ-বিএনপি

ঢাকা : রাজধানী লাগোয়া গাজীপুর সিটি করপোরেশন (জিসিসি) নির্বাচনে বিজয়ী হতে মরিয়া ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি। খুলনার মতো গাজীপুরও হাতছাড়া করতে চায় না জাতীয়তাবাদী দলটি। ফলে সর্বশক্তি নিয়োগের প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি।

অন্যদিকে গাজীপুরকে দ্বিতীয় গোপালগঞ্জ মনে করে আওয়ামী লীগ। খুলনা জয়ের মতো আরেকটি নজির স্থাপনে সর্বোচ্চ চেষ্টায় দলটি। দুটি দলই গাজীপুরকে জাতীয় নির্বাচনের একটা মহড়া বলে মনে করছে।  

এ বিবেচনা থেকে দুই দলের প্রধান শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া নিজ নিজ নেতাকর্মীদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা গাজীপুরেও খুলনার মতো ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে বলেছেন দলের লোকজনকে। নির্বাচন নিয়ে যাতে কোনো ধরনের দলীয় কোন্দল ও বিভেদ সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়ে উদ্যোগী হতে গাজীপুরের সংসদ সদস্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, নারী ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকিকে কড়া নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।

আর কারাবন্দি বিএনপিপ্রধান খালেদা জিয়া খুলনার পরাজয়কে সরকারের কারচুপি আখ্যা দিয়ে গাজীপুরে জিততে দলীয় নেতাকর্মীদের আপ্রাণ চেষ্টা চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ও গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলনসহ দলের নীতিনির্ধারকদের বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে পুরো বিষয়টি তদারকি ও কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠনের পরামর্শ দিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও।  

খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে নৌকা জিতেছে, হেরেছে ধানের শীষ। কিন্তু উভয় দলই নিজেদের বিজয়ী দাবি করেছে। শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভার বৈঠকে বলেছেন, আওয়ামী লীগের প্রতি মানুষের আস্থা আছে, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতেই খুলনাবাসী নৌকাকে বিজয়ী করেছে।

গাজীপুরবাসীও নৌকার বিজয় চায়, তারা নৌকায় ভোট দেবে। অন্যদিকে বিএনপির কাছে সিটি নির্বাচনে জয়-পরাজয় মুখ্য বিষয় নয়। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সরকার পরিবর্তন হয় না। তবে এমন নির্বাচনেও যে সরকার নগ্ন হস্তক্ষেপ করে, সে বার্তাটি জনগণের সামনে রাখতে চায় দলটি। এতে করে বিশ্বও হয়তো ধরে নিতে পারে এ সরকারের পক্ষে সংসদ নির্বাচন নিরপেক্ষভাবে করা সম্ভব নয়। এটাই বিএনপির সফলতা- এ দাবি দলটির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহানের।  

খুলনা নির্বাচন নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে নানা আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আরো গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের তাগিদ দিয়েছেন  বিবিসি ও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) কেসিসি নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এসব কারণে সবার দৃষ্টি এখন গাজীপুরের দিকে।  

আগামী ২৬ জুন গাজীপুর সিটি করপোরেশনে ভোটগ্রহণ করা হবে। তফসিল অনুযায়ী ১৫ মে সেখানে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এক রিট আবেদনের পর হাইকোর্ট নির্বাচন তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন। পরে বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার, আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম এবং নির্বাচন কমিশন (ইসি) এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেন।  

গাজীপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. তারিফুজ্জামানের তথ্য মতে, সিটিতে ৫৭টি ওয়ার্ডে বর্তমানে ভোটার ১১ লাখ ৩৭ হাজার ১১২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৮১৬ এবং ৫ লাখ ৬১ হাজার ২৯৬ জন নারী। ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৪৩০টি।  

আওয়ামী লীগ : আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা গাজীপুর নির্বাচন নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে বসেছিলেন। তাতে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় মন্ত্রী, এমপি, কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় ডজনখানেক নেতা। বৈঠকে দলীয় প্রতীক নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত করতে ও গাজীপুরের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড এবং নির্বাচন-সংক্রান্ত বিভিন্ন সাংগঠনিক কৌশল নিয়ে আলোচনা করা হয়। সেখানে বেশ কিছু গাইডলাইন দেওয়া হয় প্রার্থী জাহাঙ্গীরকে। বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয় আজমত উল্লাকেও।

দলটির পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে লিয়াজোঁয় আছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।  তিনি বলেন, গাজীপুরকে আমরা দ্বিতীয় গোপালগঞ্জ মনে করি। ২০০১ সালে শত অত্যাচার-নির্যাতনের পরও জাতীয় নির্বাচনে গাজীপুরে আওয়ামী লীগের জয়জয়কার ছিল। তাই সিটি নির্বাচনে ভোটাররা নৌকায় ভোট দেবে। আমরা বিজয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। তিনি বলেন, গাজীপুরবাসীর স্মৃতিপটে বেঁচে আছেন আহসান উল্লাহ মাস্টার।

তার খুনির পরিবারের সদস্য হাসান উদ্দিন সরকারকে বিএনপি মনোনয়ন দিয়েছে, এটা গাজীপুরবাসী ও আহসান উল্লাহ মাস্টারের রক্তের সঙ্গে বেইমানি। সিটি নির্বাচনে এর জবাব দেবে স্থানীয়রা। দলের সব স্তরের নেতা এই নির্বাচনে অতন্দ্র প্রহরীর মতো কাজ করছেন বলে জানান আওয়ামী লীগের এই কেন্দ্রীয় নেতা।  

বিএনপি : বিএনপির তরফ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে গাজীপুরে ‘খুলনা মার্কা’ নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। খুলনার ‘ভোট ডাকাতি’ ঠেকাতে গঠন করা হচ্ছে ভোটার ও ভোটকেন্দ্র সুরক্ষা কমিটি। তফসিল ঘোষণার পর দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে বিএনপির প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়। জেলার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ক হিসেবে আছেন গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন। তারা স্থানীয় নেতাদের সমন্বয়ে ভোটকেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠন করবেন।  

গাজীপুরে আওয়ামী লীগের স্থানীয় মন্ত্রী, এমপি-নেতাদের বৈঠককে নির্বাচন প্রভাবিত করার নকশা হিসেবে আখ্যা দিয়েছে বিএনপি। নিজেদের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে ফজলুল হক মিলন বলেন, দেশবাসী খুলনায় ভোট ডাকাতি দেখেছে। সেখানে ভোটারদের ভোট প্রদানের সুযোগ দেওয়া হয়নি।

যারা ভোট দিয়েছেন, তাদেরটাও সুরক্ষা পায়নি। তবে খুলনা আর গাজীপুর এক নয়। বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে আমরা পাশে থেকে গাজীপুরবাসীর ভোটের সুরক্ষা দেব। এর জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। ভোটকেন্দ্র ও ভোটের বাক্স পাহারা দেব। তবে নির্বাচন কমিশনের সদিচ্ছায় ঘাটতি আছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Link copied!