‘ব্রেক্সিট’ বাংলাদেশি অভিবাসীদের জন্যও উদ্বেগ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ২৭, ২০১৬, ০৩:০০ পিএম
‘ব্রেক্সিট’ বাংলাদেশি অভিবাসীদের জন্যও উদ্বেগ

ব্রিটেনসহ ইউরোপের অন্যান্য দেশের অভিবাসীদের সাথে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছেন সেখানে বসবাসরত বাংলাদেশিরাও। ব্রেক্সিটের কারণে অর্থাৎ ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে ব্রিটেন বের হয়ে আসলে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত অভিবাসীদের কী হবে, এতদিনের ভোগ করা সুবিধা, চাকরি-বাকরি থাকবে কি-না, ব্রিটেন ছেড়ে চলে যেতে হবে কি-না, চলে যেতে হলে নিজের দেশে কী করে খাবে, ভবিষ্যতে ব্রিটিশ সীমান্ত বন্ধ হয়ে যাবে কিনা-এসব প্রশ্ন তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে তাদেরও।

বিশেষ করে ইউরোপীয় ও দক্ষিণ এশীয় অভিবাসীরা চাকরি হারানোর শঙ্কায় পড়েছেন বেশি। কেননা, ব্রেক্সিটে নামের এই বিচ্ছেদের মূল কারণই হলো অভিবাসী। তাই অভিবাসী ইস্যুতে হাজারো প্রশ্ন দেখা দিলেও এখনও জবাব মিলছে না কোনোটিরই।

সূত্র মতে, ব্রিটেনে বর্তমানে ইইউভুক্ত দেশের অভিবাসীর সংখ্যা ৩৩ লাখ। অন্যদিকে ইইউভুক্ত দেশগুলোতে ব্রিটেনের নাগরিক রয়েছে ১২ লাখ। যুক্তরাজ্যে থাকা ইইউভুক্ত দেশের অভিবাসীদের মধ্যে ৭১ শতাংশ পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে ব্রিটেনে বসবাস করছেন। সেই হিসাবে তারা ব্রিটেনের নাগরিকত্ব পেলেও বাকিদের কী হবে, সেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে ব্রেক্সিটের কারণে।

লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের এক কর্মকর্তার সরবরাহ করা তথ্য মতে, গত ২০১১ সালে বৃটেনে সর্বশেষ শুমারি হয়। সেখানে বৈধ-অবৈধ মিলে প্রায় ৫ লাখ বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত রয়েছেন বলে জানিয়েছিল দেশটি। সেই সময়ে প্রায় ৫ ভাগের কম অর্থাৎ ২০-২২ হাজার অবৈধ বাংলাদেশি ছিলেন।

২০১১ সালে পর গত ৫ বছরে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নাগরিকদের সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি অবৈধদের সংখ্যাও উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ওই সংখ্যা এখন ৫০ হাজারের বেশি হবে। এছাড়া বৈধ অভিবাসীর সংখ্যা গত কয়েক বছরে আরও বেড়েছে। এদের ভবিষ্যত কি হবে তা নিয়ে চলছে উৎকন্ঠা, আলোচনা। 

যুক্তরাজ্যে এমপি রুশনারা আলী মনে করেন, ব্রেক্সিট হলে সেটা বাংলাদেশিদের জন্য ভালো হবে না। কারণ ব্রেক্সিট হলে চাকরি হারাবে পাঁচ লাখের মতো বাংলাদেশি। তিনি বলেন, এই জন্য বাংলাদেশিরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আনুপাতিক হিসেবে দেখা যাচ্ছে ব্রিটিশদের চেয়ে বাঙালিসহ অন্য অভিবাসীরাই বেশি চাকরি হারাবে। গণমাধ্যমের কাছে তিনি এমন মন্তব্য করেছেন। 

তিনি বলেছেন, ইইউ থেকে বেরিয়ে গেলে অর্থনৈতিক দুরাবস্থার কারণে বাংলাদেশিসহ এথনিক মাইনোরিটির লোকজন বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ইইউতে থাকার কারণেই বাংলাদেশসহ নন ইউরোপিয় দেশ থেকে কারি শেফ আনতে ভিসা পাওয়া যাচ্ছে না।

জানা গেছে, পরিচ্ছন্নতা কর্মী, দোকান-হোটেল-রেস্তোরাঁর কর্মচারীর মতো অদক্ষ ও স্বল্প দক্ষ শ্রমিকের ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশীয় তথা বাংলাদেশি প্রবাসীদের ওপর নির্ভরশীল যুক্তরাজ্য। এসব কাজে নিয়জিত রয়েছেন বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের ৫৭ লাখ প্রবাসী। ইইউ শ্রম আইনে অদক্ষ শ্রমিকের জন্য সমস্যা ছিল না।

কিন্তু ব্রেক্সিট-পরবর্তী ব্রিটেনের অভিবাসন নীতিতে অদক্ষ শ্রমিকের জায়গা হবে কি-না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশসহ ভারত, পাকিস্তানের কয়েক লাখ অদক্ষ শ্রমিকের চাকরি নাও থাকতে পারে।

বলা হচ্ছে, দীর্ঘ ৪৩ বছরের সম্পর্ক ছেদ করে ইইউ জোট থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়া কিছুটা কষ্টের হলেও ব্রেক্সিট সমর্থনকারীদের কাছে সবচেয়ে বড় ইস্যু অভিবাসী। তাদের মতে, অভিবাসীরা সস্তায় শ্রম দিয়ে ব্রিটেনের শ্রমিকদের কাজ কেড়ে নিয়েছে, বেতনের মাত্রা কমিয়ে দিয়েছে এবং সরকারি সুযোগ-সুবিধায় ভাগ বসিয়ে চাপ বাড়িয়েছে। এর চেয়েও ব্রিটিশদের মনে বড় আতঙ্ক হয়ে চেপে বসেছিল, জেনোফোবিয়া (অভিবাসীদের প্রতি ভয়)। 

ব্রিটেনের নিজস্ব নাগরিকদের চেয়ে বেশি হয়ে যাচ্ছে অভিবাসী। বিদেশিদের আধিক্য একদিন গ্রাস করবে আদি বাসিন্দাদের- এই বিদেশি আতঙ্ক বা জেনোফোবিয়াই ব্রেক্সিটের অন্যতম কারণ। ১৯৯৩ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন গঠনের আগে ব্রিটেনে প্রবেশকারী অভিবাসীর সংখ্যা ব্রিটেন থেকে চলে যাওয়া লোকেদের চেয়ে বছরে এক লাখের বেশি হতো না। কিন্তু ১৯৯৩ সাল থেকে ২০১৪ পর্যন্ত বিদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ জনসংখ্যা ৩৮ লাখ থেকে দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে হয়েছে ৮৩ লাখ।

অক্সফোর্ডের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ওই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকারী বিদেশি নাগরিক ২০ লাখ থেকে বেড়ে হয়েছে ৫০ লাখ। এদিকে, স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে যুক্তরাজ্যসহ ইইউয়ের অন্যান্য দেশে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পায় বাংলাদেশ। কিন্তু যুক্তরাজ্য ইইউ থেকে বেরিয়ে গেলে ওই সিদ্ধান্ত আর কার্যকর থাকবে না।

যুক্তরাজ্য ইইউ থেকে বের হয়ে গেলে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধার জন্য স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে নতুন করে আলোচনা করতে হবে। ব্রেক্সিটের ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য, সহযোগিতা, আর্থিক লেনদেন, পরিবহনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলবে। তার ধাক্কাও কিছুটা বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানিকারকদের উপর পড়বে।

সূত্র মতে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ব্রিটেনে ২.২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করেছে বাংলাদেশ। রফতানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কাছে ব্রিটেন অবস্থান তৃতীয়। স্বাভাবিকভাবে ধারণা করা যায়, ব্রিটেনের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত যেসব ক্ষেত্রে ইইউর সঙ্গে আর মিলবে না সেখানেই বাংলাদেশকে নতুন করে খাপ খেয়ে নিতে হবে। 

বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা বলছেন, এর প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের রফতানি বাণিজ্যে। যুক্তরাষ্ট্রের পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশ থেকে বেশি পণ্য আমদানি করে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের রপ্তানির বাজারেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এএম

Link copied!