বিশ্বের সপ্তম দুর্বলতম পাসপোর্ট এখন বাংলাদেশের, কারণ কী

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: অক্টোবর ২৫, ২০২৫, ০৮:৫২ পিএম
বিশ্বের সপ্তম দুর্বলতম পাসপোর্ট এখন বাংলাদেশের, কারণ কী

ফাইল ছবি

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গত এক বছরে বাংলাদেশের পাসপোর্টের গ্রহণযোগ্যতা ক্রমেই হ্রাস পেয়েছে। ভিসা নিষেধাজ্ঞা, মানবপাচার, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও কূটনৈতিক টানাপোড়েনের কারণে পাসপোর্টের অবস্থান বিশ্বের অন্যতম দুর্বল স্তরে নেমে এসেছে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স প্রকাশিত ২০২৫ সালের হেনলি পাসপোর্ট সূচকে বাংলাদেশ ১০৬ দেশের মধ্যে ১০০তম অবস্থানে রয়েছে-অর্থাৎ বিশ্বের সপ্তম দুর্বলতম পাসপোর্ট। বাংলাদেশের সঙ্গে একই স্থানে রয়েছে উত্তর কোরিয়া, আর যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিন রয়েছে এক ধাপ ওপরে, ৯৯তম স্থানে।

বর্তমানে বাংলাদেশিরা মাত্র ৩৮টি দেশে ভিসামুক্ত প্রবেশাধিকার ভোগ করেন। তবে অনেক ভ্রমণকারী অভিযোগ করছেন, তথাকথিত ভিসামুক্ত দেশগুলোতেও প্রবেশে জিজ্ঞাসাবাদ, সন্দেহ ও বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রশাসনিক দুর্বলতা ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এ অবস্থার জন্য দায়ী। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এরপর ভারত নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশে ভিসা ইস্যু সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়। পরে চিকিৎসা ও শিক্ষার্থী ভিসা সীমিত আকারে চালু করা হয়।

এদিকে শ্রীলঙ্কা ভ্রমণে আগাম ইলেকট্রনিক ট্রাভেল অথরাইজেশন (ইটিএ) বাধ্যতামূলক করেছে। সৌদি আরবও ২০২৫ সালের মে থেকে বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশের কর্মভিসা সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে।

মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনামসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশও ভিসা প্রক্রিয়া কঠোর করেছে। ফলে বৈধ ভিসাধারীরাও এখন অনেক সময় ইমিগ্রেশনে ‘অফলোড’-এর শিকার হচ্ছেন।

২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরেই কিরগিজস্তান থেকে ফেরত পাঠানো হয় ১৮০ জন বাংলাদেশিকে। যুক্তরাষ্ট্র ফেরত পাঠিয়েছে ৩০ জনকে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অন্তত ১৮৭ জন বাংলাদেশিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। একই সময়ে ইতালি, অস্ট্রিয়া, গ্রিস, সাইপ্রাস, যুক্তরাজ্য ও মালয়েশিয়া থেকেও শতাধিক বাংলাদেশি ফেরত এসেছেন।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ট্রাফিকিং ইন পারসন্স (টিআইপি) রিপোর্ট ২০২৫ অনুযায়ী, মানবপাচার পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্তরে (টায়ার–২) রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, গত এক বছরে ৩,৪১০ জন বাংলাদেশি পাচারের শিকার হয়েছেন-এর মধ্যে ৭৬৫ জন যৌন পাচার, ২,৫৭২ জন জোরপূর্বক শ্রম ও ৭৩ জন অন্যান্য ধরনের পাচারের শিকার।

সরকারের তথ্য অনুযায়ী, একই সময়ে ১,৪৬২ জন পাচারভুক্ত ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়েছে।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত মব হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ১৭৯ জন। 

একই সময়ে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিদের প্রতি সন্দেহ ও হেনস্তা বেড়েছে। প্রবাসী কল্যাণ উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, “আমি লাল পাসপোর্ট নিয়ে কম সমস্যায় পড়েছি, কিন্তু সবুজ পাসপোর্টে নানা হয়রানি সহ্য করতে হয়েছে।”

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশিদের প্রতি আন্তর্জাতিক অবিশ্বাসের জন্য শুধু বিদেশিরা নয়, আমরাও দায়ী।’ 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আয়নুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশের ই-পাসপোর্ট এখনো আন্তর্জাতিক ডেটাবেসের সঙ্গে পুরোপুরি সংযুক্ত নয়। রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর ভুয়া তথ্য ও আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। ফলে বহু দেশ বাংলাদেশি পাসপোর্ট গ্রহণে সতর্কতা অবলম্বন করছে।,

এসএইচ

Link copied!