ক্যাসিনো কানেকশন

ফাঁসতে পারেন যুবলীগ চেয়ারম্যানসহ বেশকিছু মন্ত্রী-এমপি!

  • বিশেষ প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: অক্টোবর ১১, ২০১৯, ০৬:৪৫ পিএম
ফাঁসতে পারেন যুবলীগ চেয়ারম্যানসহ বেশকিছু মন্ত্রী-এমপি!

ঢাকা : ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাটকে নানা অপকর্মে প্রশ্রয় ও সহযোগিতা করার কারণে ফাঁসতে পারেন যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুকসহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য।

ইতোমধ্যে যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুকের দেশছাড়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দেশের সব ইমিগ্রেশনে সতর্ক নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনও তার সম্পদের অনুসন্ধানে মাঠে নেমেছে।

র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, যুবলীগ নেতা সম্রাটকে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বেশকিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। প্রায় অর্ধশত সরকারদলীয় মন্ত্রী-এমপি, আমলা ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নিয়মিত তার কাছ থেকে মাসোহারা নিতেন। তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় উচ্ছৃঙ্খল হয়ে ওঠেন সম্রাট। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখলদারিত্ব ও ক্যাসিনো ব্যবসাসহ নানা ধরনের অপকর্মে মেতে ওঠেন সম্রাট। গড়ে তোলেন নিজস্ব বাহিনী।

কেউ তার কথার অবাধ্য হলেই তুলে এনে কাকরাইলের ভূঁইয়া ট্রেড সেন্টারের টর্চার সেলে চালানো হতো অমানুষিক নির্যাতন। তাকে চাঁদা না দেওয়ায় আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের একটি ভবন নির্মাণের কাজও বন্ধ হয়ে যায়। পরে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেও তার অপকর্ম বন্ধ থাকেনি। একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই তাকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

গ্রেপ্তারের পর তাকে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে দেওয়া হয় ৬ মাসের কারাদণ্ড।

এছাড়া অস্ত্র ও মাদক আইনে রমনা থানায় দায়ের করা মামলায় তার ১০ দিন করে ২০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। তবে অসুস্থতার অজুহাতে আদালতে হাজির না হওয়ায় তাকে এখনো রিমান্ডে দেওয়া হয়নি।

নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে সুস্থ আছেন সম্রাট। রিমান্ডের হাত থেকে রক্ষা করতে তাকে এখনো অসুস্থ বলা হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হূদরোগ হাসপাতালের একজন চিকিৎসক জানান, ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের আইএনআর, ট্রপোনিন-আই, ব্লাড সুগার, ইলেকট্রোলাইট, বিলোরুবিন, ইসিজি এবং ইকোকার্ডিওগ্রাফি করানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে আল্ট্রাসনোগ্রাফি হয়েছে। এর রিপোর্টে সম্রাটের পিত্তথলিতে পাথর আছে বলে জানা গেছে।

এছাড়া বাকি সব রিপোর্টে অবস্থা স্বাভাবিক রয়েছে। এর আগে, গত বুধবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে সম্রাটের বুকের এক্স-রে করানো হয়।

জাতীয় হূদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সমীর কুমার কুণ্ডু বলেন, ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের যে রিপোর্টগুলো হাতে পেয়েছি, সেগুলো ভালো। বৃহস্পতিবার সকালে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করানো হয়েছে। এই রিপোর্ট এখনো হাতে আসেনি। তবে আগে থেকেই তার হূদরোগ ও পিত্তথলিতে পাথর আছে। সবকিছু ঠিক থাকলে কারাগারে ফেরত পাঠানোর প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছি আমরা। এ বিষয়ে বিস্তারিত পরে জানানো হবে বলে জানান তিনি।

জানা গেছে, বুকে ব্যথা অনুভব করলে গত বুধবার সকাল সাড়ে ৭টায় সম্রাটকে কারাগার থেকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে ঢামেক চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে এনআইসিভিডি হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।

জাতীয় হূদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আফজাল হোসেন জানান, সম্রাটের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। তবে মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা তাকে আপাতত হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী শারীরিক বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র সেবন করছেন সম্রাট।

আর কদিন তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট করে কবে নাগাদ তাকে রিলিজ দেওয়া হবে সে সম্পর্কে বলা সম্ভব নয়। তিনি সুস্থ হয়ে উঠলে মেডিকেল বোর্ডের মাধ্যমে তা গণমাধ্যমকে জানানো হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

হূদরোগ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সম্রাট হাসপাতালের সিসিইউ-১’র বি-১২ শয্যায় আছেন। সেখানে তার পাশে কারা কর্তৃপক্ষ, পুলিশ ও গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যরা রয়েছেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Link copied!