নির্বাচন শেষ

বাংলাদেশের রাজনীতিতে কী ঘটতে যাচ্ছে

  • বিশেষ প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৫, ২০২৪, ০৩:২৩ পিএম
বাংলাদেশের রাজনীতিতে কী ঘটতে যাচ্ছে

ঢাকা : বিরোধীদল বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর বর্জন সত্ত্বেও সংসদ নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নিয়েছে। পাশাপাশি হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি থেকেও সরে এসেছে বিএনপি। কিন্তু তারপরেও নির্বাচনের আগে কয়েক মাসের সহিংস ঘটনাবলী ও পরিস্থিতির পর নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা কতটা এলো সেই প্রশ্নও এখনো আলোচনায় আসছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনটি অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি বলে মন্তব্য করেছে। তবে বিরোধীদল বিএনপি সাতই জানুয়ারির নির্বাচনের দিন পর্যন্ত হরতাল পালন করলেও নির্বাচনের পর থেকে এখন পর্যন্ত এ জাতীয় কোন কর্মসূচি ঘোষণা করেনি।

দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী রবিবার (১৪ জানুয়ারি) বলেছেন ‘সরকার আরও একটি ইলেকশন ক্রাইম করায় তাদের নিরাপদ প্রস্থানের পথ সংক্ষিপ্ত হয়ে গেছে’ এবং আন্দোলনের মুখেই তাদের পতন ঘটানোর আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নতুন সরকার দেশি বিদেশি চাপ অতিক্রম করে এগিয়ে যাবে। তার অভিযোগ দেশের ‘অর্থনীতিকে বিপন্ন করার ষড়যন্ত্র চলছে’।

সবমিলিয়ে আপাতত দৃশ্যমান রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ সরকারের সামনে না থাকলেও এতে করে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এসেছে কি-না বা আসার ইঙ্গিত মিলছে কি-না সেই প্রশ্নও এখন বড় হয়ে উঠছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক জোবাইদা নাসরিন বলছেন, রাজনীতিতে দৃশ্যমান সহিংসতা নেই সত্যি কিন্তু এবারের নির্বাচনটি রাজনীতিকে স্থিতিশীল না করে একদলীয় শাসনের দিকে নিয়ে গেছে।

অন্যটিকে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ডঃ ইফতেখারুজ্জামান বলছেন, দেশে বিরোধীদল বিহীন গণতন্ত্রের পাশাপাশি মানুষের মধ্যে অসন্তোষ আছে। এখন তার সাথে অর্থনৈতিক সংকট তীব্র হলে এখনকার আপাত স্থিতিশীল পরিস্থিতি নাও থাকতে পারে।

তবে তারা দুজনেই বলেছেন- পরিস্থিতি কোন দিকে যায় কিংবা স্বাভাবিক রাজনৈতিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে টেকসই স্থিতিশীলতা আসে কি-না সেটি বুঝতে আরও সময় লাগবে।

নির্বাচনের পর দ্রুততার সাথে সরকার গঠনের কাজ শেষ করলেও সরকারের শীর্ষ নেতাদের মুখ থেকেই নানা ধরনের চাপের কথা উঠে আসছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমারা নির্বাচনকে গ্রহণ করেনি। এখন তারা কী করে সেদিকে তীক্ষ্ণ নজর রেখেছে সরকার।

শপথ গ্রহণের পর রোববার (১৪ জানুয়ারি) প্রথম সচিবালয়ে অফিস করেছেন নতুন সরকারের মন্ত্রীরা। সেখানেই সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্বাচনের আগের পরিস্থিতি তারা মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছেন।

এখন আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে সরকার দেশি–বিদেশি সব চাপ অতিক্রম করে এগিয়ে যাবে বলে জানান কাদের।

এর আগে নির্বাচনের পর থেকেই কাদেরসহ সিনিয়র নেতারা বারবারই বলেছেন যে, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে সরকারকে। বিশেষ করে ‘অর্থনৈতিক সংকটে’র প্রসঙ্গটি কীভাবে মোকাবেলা হবে তা নিয়ে দলের ভেতরে বাইরে উদ্বেগ আছে।

দলের নেতারা অনেকেই মনে করেন বিরোধীদল ছাড়া নির্বাচন করে সরকার গঠন করার মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা গেলেও অর্থনৈতিক সংকট না কাটলে মানুষের মধ্যে অসন্তোষ বেড়ে যেতে পারে।

অবশ্য নতুন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী তার প্রথম কর্মদিবসে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকে অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন।

এদিকে, বিএনিপর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা ইঙ্গিত দিয়েছেন আপাতত বড় ধরনের কোন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে আর যাচ্ছে না দলটি। অবশ্য নির্বাচনের পর থেকেই কার্যত আর কোন কর্মসূচি দেয়নি তারা। এর মধ্যে কয়েকটি সমমনা দলগুলোর সঙ্গে নতুন পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা।

এসব আলোচনায় নিজেদের সাফল্য-ব্যর্থতা মূল্যায়নের প্রসঙ্গ এসেছে, বিশেষ করে কয়েক দফা ক্ষমতায় থাকা বিএনপি কেন পশ্চিমা বিশ্বের সমর্থন পেয়েও চূড়ান্ত কূটনৈতিক বিজয় আনার পরিস্থিতি তৈরি করতে পারলোনা-সেই প্রশ্ন এসেছে জোটসঙ্গীদের দিক থেকে।

বিএনপি নেতারা অবশ্য বলছেন ভারতের কারণেই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করার মতো পরিস্থিতি শেষ পর্যন্ত তৈরি করা যায়নি, তবে নির্বাচনকে যে প্রকাশ্যে পশ্চিমারা গ্রহণ করেনি সেটিকে তারা সাফল্যই মনে করছেন।

এখন সরকার গঠন হয়ে যাওয়ায় দলটির নেতারা মনে করছেন স্বাভাবিক রাজনৈতিক ধারায় ফিরে আসাটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে জেলে থাকা অসংখ্য নেতাকর্মীর মুক্তিই এখন আপাতত প্রাধান্য পাবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন দলের নেতারা।

রুহুল কবির রিজভী রবিবারের (১৪ জানুয়ারি) সংবাদ সম্মেলনে ভারতের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন- আওয়ামী লীগ বিদেশিদের ওপর ভর করে ক্ষমতায় টিকে আছে। অন্য দেশের মদদে ইলেকশন ক্রাইম করেছে শেখ হাসিনা। নিরাপদ প্রস্থানের পথ অতি সংক্ষিপ্ত হয়ে গেছে। জনগণের আন্দোলনে সরকারের পতন হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিকল্প নেই। কিন্তু এই আন্দোলনের কোন কর্মসূচির ইঙ্গিতে তার বক্তব্যে পাওয়া যায়নি। সূত্র : বিবিসি

এমটিআই

Link copied!