উপজেলা নির্বাচন

ভোটে থাকছেন বিএনপির বহিষ্কৃতরা, দুষছেন দলকেই

  • বিশেষ প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মে ৪, ২০২৪, ১০:২০ এএম
ভোটে থাকছেন বিএনপির বহিষ্কৃতরা, দুষছেন দলকেই

ঢাকা : উপজেলা ভোটে প্রার্থী হওয়ায় বিএনপি যাদের দল থেকে বহিষ্কার করেছে, তাদের মধ্যে একজন বাদে কেউ ছাড়েননি ভোটের ময়দান। তাদের কেউ কেউ এখন কেন্দ্রীয় নেতাদের সমালোচনা করছেন।

বহিষ্কৃত একাধিক নেতা বলেছেন, এভাবে টানা বর্জন করতে থাকলে স্থানীয় পর্যায়ে রাজনীতি করা তাদের জন্য ‘কঠিন’ হয়ে যাবে।

একজন নেতা বলেছেন, কেন্দ্রীয় নেতারা ‘তৃণমূলের পরিস্থিতি জানেন না।’ আরেকজন প্রশ্ন করেছেন, বারবার ভোট বর্জন করে, এমন দলে থেকে লাভ কী?

একাধিক নেতা বলেছেন, তারা তৃণমূলের মানুষের চাপে ভোটে দাঁড়িয়েছেন। একাধিক প্রার্থী আছেন, যারা আগে থেকেই জনপ্রতিনিধি। তারা এখন দূরে সরে থাকতে নারাজ।

অন্যদিকে বিএনপির সন্দেহ, ভোটে আসা এই নেতাদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের ‘যোগাযোগ’ হয়েছে। কেবল প্রার্থী নয়, যারা তাদের সঙ্গে আছে, তাদেরকেও ছাড় দেয়া হবে না।

আগামী ৮ মে প্রথম ধাপে যে দেড়শ উপজেলায় ভোট হতে যাচ্ছে, তার মধ্যে চেয়ারম্যান পদে অন্তত ২৮টিতে প্রার্থী হয়েছেন বিএনপির রাজনীতিতে বিশ্বাসীরা, যদিও দল থেকে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে ভোটে দাঁড়াতে।

চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত নারী ভাইস চেয়ারম্যান মিলিয়ে ভোটে আছেন সব মিলিয়ে অন্তত ৭৯ জন। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তাদের দলীয় সব পদ কেড়ে নেওয়া হয়েছে।

বহিষ্কারের যে চিঠি দেওয়া হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, তারা সরকারের সঙ্গে ‘আঁতাত’ করেছেন। এটা মেনে নেওয়া হবে না।

নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি পূরণ না হওয়ায় ২০১৪ সালের মত এবারের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটও বর্জন করেছে বিএনপি। তবে দশম সংসদ নির্বাচনের তুলনায় এবার ভোটে প্রার্থী ছিল বেশি। বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় নেতা স্বতন্ত্র নির্বাচন করে জিতে এসেছেন, একজন ভাইস চেয়ারম্যান সরাসরি আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে নৌকা প্রতীকে জিতে এসেছেন।

আরও বেশ কয়েকজন অন্য দলে বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটে লড়েছেন।

জাতীয় নির্বাচনের মত উপজেলা নির্বাচনেও যাচ্ছে না বিএনপি। এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়- এই সিদ্ধান্তে অটল তারা।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে অন্তত দেড় বছর কোনো স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নেয়নি দলটি।

তবে এবারের উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগেরও আছে ভিন্ন কৌশল। তারা ভোট জমিয়ে তুলতে দলীয় প্রতীক তুলে দিয়ে প্রার্থিতা উন্মুক্ত করে দিয়েছে।

বিএনপি ভোটে না এলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নেওয়া একাধিক নেতা বলছেন, তাদের এলাকায় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা অংশ নিচ্ছেন। তাতে আওয়ামী লীগপন্থিদের ভোট ভাগের সুযোগ নিতে চাইছেন তারা।

তবে বিএনপি ছাড় দিচ্ছে না। গত ২৬ এপ্রিল ৭৬ জনকে, পরদিন তিন জনকে এবং সবশেষ ৩০ এপ্রিল বহিষ্কার করা হয় চারজনকে।

এরপর সংবাদ সম্মেলন করে ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন মেহেরপুর সদর উপজেলায় সংরক্ষিত নারী আসনের প্রার্থী রোমান আহমেদ। বিএনপি তখন তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে।

দ্বিতীয় ধাপে ২১ মে যে ১৬১টি উপজেলায় ভোট হতে যাচ্ছে, সেখানেও বিএনপির অন্তত ৬৩ জন নেতা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাদেরকে কারণ দর্শাতে বলেছে বিএনপি। প্রথম দফায় যাদের কারণ দর্শাতে বলা হয়েছিল, তাদের মধ্যে প্রায় সবাই তা উপেক্ষা করেছিলেন।

বহিষ্কৃত নেতাদের বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, যারা অশুভ শক্তির সঙ্গে আঁতাত করে নির্বাচনে যাচ্ছেন, তারা নিজেদের আত্মপক্ষ সমর্থনে এ রকম খোঁড়া যুক্তি দিতেই পারে, সে বিষয়ে কিছু বলার নেই। আমাদের দল মনে করে এই সরকারের অধীনে অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না, হতে পারে না। এটাই সত্য, এটাই বাস্তবতা।

কেন্দ্রীয় নেতারা দলকে ধ্বংস করে দিচ্ছেন : সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ভোট করে আগেও জিতেছিলেন গণেন্দ্র চন্দ্র সরকার। এবারও ভোটে আছেন। বিএনপি ভোটে না থাকায় তিনি এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী।

গণেন্দ্র ছিলেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি। বহিষ্কারাদেশ পেয়েও তিনি দমে যাননি। বরং ভোটের প্রচারে নেমে কেন্দ্রীয় নেতাদের তীব্র সমালোচনা করছেন।

তার সঙ্গে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যেই ভোটের প্রচারে আছেন। তবে দায়িত্বশীলরা সামনে না এসে পেছন থেকে সহযোগিতা দিচ্ছেন বলে তথ্য মিলেছে।

গণেন্দ্র বলেন, আমার ৫০ বছরের রাজনৈতিক জীবন। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে তৃণমূলের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা কেন্দ্রে বসে নির্দেশনা দেয়। বাস্তবে মাঠের খবর নেয় না।

তৃণমূলের কর্মীদের থেকে কেন্দ্রীয় নেতারা ‘দূরে সরে যাচ্ছেন’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, তারা দলকে ধ্বংস করে দিচ্ছেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের বহিষ্কারের এই হঠকারী সিদ্ধান্তকে আমি মানি না। আমি নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাব।

এ উপজেলায় আওয়ামী লীগের তিন জন প্রার্থী ভোটে আছেন। তারা হলেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান অবনী মোহন দাস, গত নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী আওয়ামী লীগ নেতা দিপু রঞ্জন দাস ও ক্ষমতাসীন দলের আরেক নেতা এস এম শামীম।

সরকার সমর্থকদের ভোট ভাগাভাগির সুযোগ দিতে মুখিয়ে আছেন বিএনপির রাজনীতিতে বিশ্বাসী আনারস প্রতীক পাওয়া গণেন্দ্র। তিনি বলেন, আগামী ৮ মে জনগণ আমার পক্ষেই রায় দেবেন আশা করি।

একই জেলার দিরাই উপজেলাতেও পরোক্ষভাবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির লড়াইয়ের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছে।

এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ভোটে দাঁড়িয়ে বহিষ্কৃত গোলাপ মিয়া হারিয়েছেন বিএনপির উপজেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ। এর আগে ভাইস চেয়ারম্যান পদে জয় পেয়েছিলেন। তারও প্রতীক আনারস।

গণেন্দ্রর মত গোলাপ মিয়াও বিএনপির সিদ্ধান্ত পাত্তা দিচ্ছেন না। তিনি বলেন, বিএনপি আমাকে বহিষ্কার করলেও সাধারণ নেতাকর্মীরা আমার পক্ষে আছেন। অনেক নেতা আড়াল থেকে কাজ করছেন।

এই দলে থেকে লাভ কী : নাটোর সদর ও নলডাঙ্গা-প্রথম ধাপে ভোট হতে যাওয়া দুই উপজেলাতেই ভোট নিয়ে উৎসাহ তৈরি হয়েছে। কারণ বিএনপির দুই জন বহিষ্কৃত নেতা জনপ্রিয়তার লড়াইয়ে আছেন।

২০১১ সালে নলডাঙ্গার ব্রহ্মপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে জয় পাওয়া সরদার আফজাল হোসেন এবার উপজেলা চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন কৈ মাছ প্রতীক নিয়ে।

বিএনপির ভোট বর্জনের সিদ্ধান্তে বিরক্ত এই নেতা বলেন, বারবার নির্বাচনে যাচ্ছে না, এই দলে থেকে লাভ কী? নির্বাচনে না গেলে আঞ্চলিক রাজনীতিতে আমরা টিকে থাকব কীভাবে?

নিজেকে এখন বিএনপির নেতাই বলেন না আফজাল। তিনি বলেন, উনারা কী কারণে আমাকে শোকজ করে, বহিষ্কার করে আমিতো বুঝি না। আমি তো এখন কোনো পদ পদবিতে নাই, সদস্যও নাই। তিন বছর আগে সব বাদ দিছি, বিএনপির সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নাই।

নাটোরের নলডাঙ্গায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী আফজাল হোসেন বিএনপির ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন করে বলেছেন, এমন দলে থেকে লাভ কী।

অবশ্য বিএনপি সমর্থকদের ভোটেই নির্বাচনি বৈতরণি পার হওয়ার আশা করছেন আফজাল। এ বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, বিএনপির লোকজন আমার সঙ্গে থাকবে। নির্বাচনি মাঠে সবাই আমার সঙ্গে শতভাগ জয় হবে, ইনশাআল্লাহ।

সদর উপজেলায় মোটরসাইকেল প্রতীকে চেয়ারম্যান পদে লড়া মো. ইসতেয়াক আহম্মেদ হীরা ছাত্র জীবনে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা কলেজে ছাত্রদল থেকে ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন।

বিএনপি থেকে বহিষ্কারের আদেশের বিষয়ে মন্তব্য জানতে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি তা ধরেননি।

জেলা বিএনপির সদস্য মো. দেওয়ান শাহীন বলেন, এই দুই নেতাই ১৮ থেকে ২০ বছর আগে বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় অবস্থানে ছিলেন। দলের কেউ কেউ প্রচার-প্রচারণায় তাদের সঙ্গে অংশ নিয়েছে, কেন্দ্রীয় নির্দেশে তাদের নিবৃত, নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে দাঁড়িয়ে উপজেলা শাখার আহ্বায়কের পদ হারানো গৌছ খানও নাটোরের আমজাদ হোসেনের সুরে কথা বলেছেন।

তিনি বলেন, দল জাতীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। তবে আমার বয়স ৬০ বছর; পাঁচ বছর পর কোনো নির্বাচনে অংশ নেওয়ার মত অবস্থা থাকবে না। এসব বিষয় চিন্তা করা উচিত। আমরা দীর্ঘদিন ধরে জনসম্পৃক্তার বাইরে থেকে লাভ কী হচ্ছে?

কেন্দ্র নয়, তাদের কাছে মুখ্য ‘স্থানীয় চাওয়া’ : বহিষ্কারাদেশ পাওয়ার আগে ও পরে মানিকগঞ্জের সিংগাইর ও হরিরামপুর উপজেলায় বিএনপির রাজনীতিতে জড়িতদের প্রচার বা কর্মকাণ্ডে কোনো পার্থক্য নেই। তারা বলছেন, দলের কেন্দ্র নয়, তারা গুরুত্ব দিচ্ছেন ‘স্থানীয় প্রত্যাশাকে’।

হরিরামপুর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীদের একজন উপজেলা যুবদলের বহিষ্কৃত যুগ্ম আহ্বায়ক জাহিদুর রহমান তুষার। তিনি বয়রা ইউনিয়নের পরপর তিনবারের চেয়ারম্যান।

তুষার বলেন, আমি বয়রা ইউনিয়ন পরিষদে মানুষের সেবা করেছি। যখন তফসিল হয়েছে তখন সুনির্দিষ্টভাবে বুঝতে পারিনি দল নির্বাচন করবে না। এখন মাঠে নেমে গেছি, গণসংযোগ শুরু করেছি, পরে ১৪ এপ্রিল দলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পেলাম, নির্বাচন করবে না।

জেলা বিএনপির নেতারা আমাকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের কথা বলেছিলেন। কিন্তু সেই সুযোগ আর নেই। মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিলে মানুষের মধ্যে আমার আর কোনো গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না। আমার লাইফ জনগণের কাছ থেকে ধ্বংস হয়ে যাবে।

মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলা যুবদলের বহিষ্কৃত যুগ্ম আহ্বায়ক জাহিদুর রহমান তুষার বলছেন, ভোট থেকে সরে দাঁড়ালে তিনি ধ্বংস হয়ে যাবেন

মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলা যুবদলের বহিষ্কৃত যুগ্ম আহ্বায়ক জাহিদুর রহমান তুষার বলছেন, ভোট থেকে সরে দাঁড়ালে তিনি ধ্বংস হয়ে যাবেন

নির্বাচন থেকে সরে গেলে ‘কলঙ্ক রটবে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, মানুষের মনে নানান কথা রটবে, যে আমি টাকা খেয়ে বসে গেছি। ফলে ভবিষ্যতে আমার ডাকে কেউ সাড়া দেবে না। এজন্যই আমি দলের সিদ্ধান্তের বাইরে ইলেকশন করছি।

একই উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে লড়ছেন মোশারফ হোসেন মুসা। তিনি উপজেলা বিএনপির সদস্য ছিলেন। তিনি কাঞ্চনপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান।

তিনি বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরেই জনগণের পাশে আছি। জনগণ আমাকে ভালোবাসে, তাই নির্বাচনে এসেছি। আশা করি ভালো কিছু হবে। দল বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে কিছু করার নেই।

সিংগাইর উপজেলা বিএনপির বহিষ্কৃত সিনিয়র সহ-সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন লড়ছেন ভাইস চেয়ারম্যান পদে।

তোফাজ্জল বলেন, আমরা তো জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি, প্রচারণা চালিয়েছি। তারা আমাদের প্রতি আস্থা রেখেছে। তারা অনেক দিন ধরে ভোট দিতে পারেন না। এবার নির্বাচনে যেহেতু দলীয় প্রতীক নাই, তাই বিএনপিপন্থিরা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী হলে পাস করা সম্ভব। দল বহিষ্কার করলেও এখন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো সম্ভব নয়। জনগণের দাবিকেই গুরুত্ব দিতে হচ্ছে।

সংরক্ষিত নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন সিংগাইর উপজেলা মহিলা দলের বহিষ্কৃত সভাপতি আফরোজা রহমান লিপি।

বহিষ্কার কোনো বিষয় না : কুমিল্লার মেঘনা উপজেলায় চেয়ারম্যান ধড়ে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়কের পদ হারিয়েছেন মো. রমিজ উদ্দিন।

এ নিয়ে অবশ্য কোনো আক্ষেপ নেই তার। তিনি বলেন, তাদের ক্ষমতা আছে বলেই বহিষ্কার করেছে, এটা কোনো বিষয় না। আমি নির্বাচনের মাঠে আছি এবং শেষ পর্যন্ত থাকব।

জয়ের বিষয়েও আশাবাদী বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী চারজন। ফলে আমার জয়ের সম্ভাবনা আছে। বাকিটা ৮ মে আপনারা দেখবেন।

বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকরা পাশে আছেন বলেও দাবি করেন রমিজ উদ্দিন।

কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ভোটে দাঁড়িয়ে বিএনপি থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত জেনেছেন উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মাজহারুল ইসলাম ছুপু। তবে তিনি ভোট থেকে সরে দাঁড়াতে রাজি নন

কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ভোটে দাঁড়িয়ে বিএনপি থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত জেনেছেন উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মাজহারুল ইসলাম ছুপু। তবে তিনি ভোট থেকে সরে দাঁড়াতে রাজি নন

নাঙ্গলকোট উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মাজহারুল ইসলাম ছুপুও বহিষ্কারাদেশকে পাত্তা দিচ্ছেন না। তিনি বলেন, বর্তমানে দলে আমার কোনো পদ-পদবি নেই। তাই আমার কাছে বহিষ্কারের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ নয়।

মক্রবপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যানের দাবি, কেন্দ্র যাই করুক না কেন, বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীরা তার পক্ষেই আছে।  

এই উপজেলায় আওয়ামী লীগের দুই জন নেতা ভোটে অংশ নিয়েছেন। তাদের মধ্যে ভোট ভাগাভাগিতে জয়ের স্বপ্ন দেখছেন ছুপু তিনি বলেন, ইনশাআল্লাহ, মানুষ আমাকে ভোট দিয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী করবে।

কর্মী সমর্থকদের অবস্থান কী : দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে দাঁড়ানো বিএনপি নেতা সারওয়ার হোসেন বলেন, এ বিষয়ে আমার কোন প্রতিক্রিয়া নেই, দল ভালো মনে করেছে দল আমাকে বহিষ্কার করেছে। আমি স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করছি এবং জনগণ আমার পাশে আছে। এই আমার প্রতিক্রিয়া। আমি অন্য কোনো মন্তব্য করতে চাই না।

দলীয় নেতা-কর্মীদের মনোভাব কী- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, এবার কৌশলগতভাবে নির্বাচন হবে। দলের যেহেতু একটি সিদ্ধান্ত আছে সেখানে নেতারা তো সেভাবে সামনে আসবে না। তবে মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা আমার সঙ্গে আছে।

উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ছিলেন সারওয়ার।

স্থানীয় সাংবাদিক জিল্লুর রহমান বলেন, উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাহ মো. শামিম চৌধুরীও চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছিলেন। পরে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। তার অনুসারীরা ভোটে না থাকলেও বিএনপিতে সারওয়ারের অনুসারী নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যেই ভোটের প্রচারে আছেন।

কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলায় ভোটে নেমে জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সদর উপজেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়কের পদ হারিয়েছেন নাজমুল আলম।

তার পুরনো সহকর্মীরা কেউ পাশে নেই। আত্মীয়-স্বজন এবং দলীয় পদে নেই, এমন কিছু সমর্থকদের নিয়েই তিনি গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।

তবে বহিষ্কারাদেশ আসার আগে বিএনপির পদধারীরাও তার পাশে ছিলেন।

গত ২৭ এপ্রিল বিএনপি থেকে বহিষ্কারের চিঠিটি নাজমুলের হাতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম।

বিএনপি থেকে বহিষ্কারের আগে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী নাজমুল আলমের প্রচারে দলটির নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যেই অংশ নিতেন। এখন আত্মীয় স্বজন এবং দলীয় পদে নেই এমন কর্মী সমর্থকরা তার পাশে

বিএনপি থেকে বহিষ্কারের আগে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী নাজমুল আলমের প্রচারে দলটির নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যেই অংশ নিতেন। এখন আত্মীয় স্বজন এবং দলীয় পদে নেই এমন কর্মী সমর্থকরা তার পাশে

দলের সিদ্ধান্তের পর পর কিশোরগঞ্জ বিএনপি কার্যালয়ে প্রতিনিধি সভা করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স। পরে তিনি নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানিয়ে লিফলেটও বিতরণ করেন।  

নাজমুল প্রতীক পেয়েছেন আনারস। বহিষ্কারাদেশের আগে ও পরে তার তৎপরতায় কোনো পার্থক্য নেই।

যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, দীর্ঘ ৪০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে আমি তৃণমূল জনগণের সুখ-দুঃখে পাশে থেকেছি। সেই মানুষদের জন্যই কিছু করার ইচ্ছা নিয়ে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছি। তাছাড়া নির্বাচন অংশ নিতে জনগণের চাপ ও ইচ্ছার প্রতিও সম্মান জানিয়েছি।

গতবারও আমি চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছিলাম। দলের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান জানিয়ে প্রত্যাহার করেছিলাম। তার উপর এবার দলীয় প্রতীকবিহীন নির্বাচন।

ছাত্রজীবন থেকে বিএনপির রাজনীতিতে বিশ্বাসী নাজমুল এর আগে ছাত্রদলের জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এবং জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ছিলেন।

বিএনপির বহিষ্কারাদেশের বিষয়ে তিনি বলেন, দলের সিদ্ধান্তের সঙ্গে আমার দ্বিমত নেই। তবে উপজেলার কয়েক লাখ মানুষের চাওয়া-পাওয়া এবং তাদের সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততাকে আমলে নিয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপি বিবেচনা করবে বলে আশা করি।

বিএনপি তার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে বলেও বিশ্বাস করেন এই নেতা। তিনি বলেন, আমি বিএনপিতে ছিলাম, আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকব।

এই উপজেলায় আওয়ামী লীগের দুই জন নেতা লড়াই করছেন, ভোটের ময়দানে যারা প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী। তাদের মধ্যে ভোট ভাগ হলে জয় পেতে পারেন- এমন আশায় বিভোর নাজমুল। এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে উপজেলা নির্বাচনে। সংসদ নির্বাচনে ১৯৭০ সাল থেকে এই আসনে আওয়ামী হেরেছে কেবল দুই বার। তবে স্থানীয় সরকারের বেশি কিছু নির্বাচনে দলের একাধিক নেতার মধ্যে লড়াইয়ের ফাঁক গলে জিতেছেন অন্য দলের নেতারা।

আওয়ামী লীগ- বিএনপির লড়াই : ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া ও ফুলপুর উপজেলায় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ৯ জন বহিষ্কৃত নেতা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোটে লড়ছেন।

চেয়ারম্যান পদে হালুয়াঘাটে আছেন আব্দুল হামিদ (আনারস), ঢাকা আইনজীবী ফোরামের সদস্য হাসনাত তারেক (ঘোড়া)।

ধোবাউড়ায় চেয়ারম্যান পদে উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি শামছুর রশীদ মজনু (হেলিকপ্টার) ও উপজেলা বিএনপির সদস্য ফরিদ আল রাজী কমল (মটর সাইকেল) লড়ছেন।

ফুলপুর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এমরান হোসেন পল্লব (হেলিকপ্টার) প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন।  

দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ভোটে অংশ নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে পল্লব বিএনপির নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তেরই সমালোচনা করেন।

তিনি বলেন, দীর্ঘ বছর ধরে মানুষের সেবা করার সুযোগ পাচ্ছি না সিদ্ধান্তহীনতার কারণে। এ বছর জেনে শুনেই নির্বাচনে নেমেছি; দল আমাকে বহিষ্কার করেছে তাতে কোনো দুঃখ নেই। আমার পক্ষে জনগণের ভালোবাসা রয়েছে।

হালুয়াঘাটের আবদুল হামিদ বলেন, দলীয় প্রতীক না থাকায় নির্বাচনে লড়ছি; এর মধ্যে শুনেছি দল থেকে আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। মানুষের ভালোবাসা আমার বড় শক্তি পদ-পদবি দিয়ে কী হবে?

ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়ে বিএনপির সদস্যপদ হারিয়েছেন আবদুল হামিদ। তবে ভোট থেকে সরতে নারাজ তিনি। একই উপজেলায় আছেন ঢাকা আইনজীবী ফোরামের সদস্য হাসনাত তারেক। তিনিও বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত।

স্থানীয় বাসিন্দা শহীদুল ইসলাম বলেন, মার্কা না থাকলেও হালুয়াঘাটে মূলত আওয়ামী লীগ-বিএনপির নির্বাচন হচ্ছে। বলা যাচ্ছে কে নির্বাচিত হবেন। তবে আমরা চাই শান্তিপূর্ণ নির্বাচন।

ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মোতাহার হোসেন তালুকদার বলেন, আমাদের কিছু নেতাকর্মী উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, কেন্দ্রীয় কমিটি তাদেরকে বহিষ্কার করেছে। আমরা সেই বার্তা তাদেরকে পৌঁছে দিয়েছি।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা সফিকুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনকে উৎসবমুখর করতে সকল ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। দলীয় প্রতীক না থাকায় কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে বলেও আশা করা যাচ্ছে।

এক উপজেলায় ‘বিএনপির’ দুই জন : সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়ে দলের সদস্য পদ হারিয়েছেন বিএনপির দুই জন নেতা।

এদের একজন গৌছ খান, যিনি দলের উপজেলা শাখার আহ্বায়ক ছিলেন। অপরজন হলেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেবুল মিয়া।

সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ভোটে অংশ নেওয়া বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা গৌছ খানের প্রশ্ন, দীর্ঘদিন ধরে জনসম্পৃক্তার বাইরে থেকে লাভ কী হচ্ছে?

সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ভোটে অংশ নেওয়া বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা গৌছ খানের প্রশ্ন, দীর্ঘদিন ধরে জনসম্পৃক্তার বাইরে থেকে লাভ কী হচ্ছে?

দুই নেতার পাশেই বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রচারে আছেন বলে জানিয়েছেন বিশ্বনাথ উপজেলার সাংবাদিক নবীন সোহেল। তিনি বলেন, প্রচার-প্রচারণায় দায়িত্বশীলরা প্রকাশ্যে অংশ নিচ্ছেন না, তবে অনেক নেতাকর্মী গোপনে কাজ করছেন, কর্মীরাও মাঠে রয়েছেন।

এ উপজেলায় আওয়ামী লীগের পাঁচজন আছেন ভোটের লড়াইয়ে। এরা হলেন বিশ্বনাথ আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আকদ্দুছ আলী, পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আলতাব হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন আহমদ, পৌর আওয়ামী লীগের সদস্য মো. আব্দুল রোসন চেরাগ আলী ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সদস্য শামসাদুর রহমান রাহিন।

বিএনপির দুই নেতা আশা করছেন, ক্ষমতাসীনদের ভোট ভাগাভাগির ফাঁক গলে বাজিমাত করে দেবেন তারা।

এমটিআই

Link copied!