রাজস্ব কমে যাওয়ার শঙ্কা

৯ বছরেও নিলাম হয়নি সওজের অকেজো ফেরি

  • মঈনউদ্দিন সুমন, মুন্সীগঞ্জ | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২২, ২০১৭, ১২:৫৯ পিএম
৯ বছরেও নিলাম হয়নি সওজের অকেজো ফেরি

মুন্সীগঞ্জ : মুক্তারপুরের পুরনো ফেরি ঘাটে ১০টি ফেরি ও ২টি পন্টুন ৯ বছরের বেশি সময় ধরে সওজের ডাম্পিং জোনে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। মুন্সীগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতায় থাকা এসব ফেরি ও পন্টুনের মূল্য প্রায় ১৫ কোটি ৮ লাখ টাকা। কোটি কোটি টাকার এসব ফেরি ও পন্টুনের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত গ্রহণনা করায় সরকারি এসব সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। ফলে সওজের অকেজো ফেরি ৯ বছরেও নিলাম হয়নি এবং রাজস্ব কমে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে ।

মুন্সীগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সালের জানুয়ারি মাসে মুন্সীগঞ্জ শহর-নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা সরাসরি যোগাযোগের জন্য ফেরি পারাপারের পরিবর্তে নির্মাণ করা হয় ষষ্ঠ বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী ‘মুক্তারপুর ’সেতু। সেতু উদ্বোধনের পরেই বন্ধ হয়ে যায় ফেরি সার্ভিস এবং মুন্সীগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা থেকে এনে মুক্তারপুর সেতুর নিচে বিভিন্ন স্থানে রাখে সওজের ফেরি রক্ষনাবেক্ষন বিভাগ।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ধলেশ্বরীর নদীর তীরে চর মুক্তারপুর নৌপুলিশ ফাঁড়ির ফেরি ঘাট এলাকায় সেতুর নিচে অনেকটা পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেরি ও পন্টুনগুলো পড়ে আছে। এগুলোর ইঞ্জিন অনেক আগেই বিকল হয়ে গেছে। ফেরি ও পন্টুনগুলোর গায়ে মরিচা ধরে ক্ষয় পড়ছে ও ফেরির মাঝে সৃষ্টি বড় আকারের গর্ত। অনেক অংশের লোহা চুরি হয়ে গেছে ও পানির নিচে ডুবে আছে কয়েকটি ফেরি। রাতের বেলায় চলে মাদকাসক্তদের আড্ডা খানা। কর্তৃপক্ষের দাবী অকেজো ফেরিগুলো দেখা শুনা করতে নিরাপত্তা প্রহরী নিযুক্ত থাকলেও, তাদেরকাউকে খুজে পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, দীর্ঘ ৯ বছরের বেশি সময় ধরে অব্যবহৃত পড়ে আছে ফেরিগুলো। এগুলো সরিয়ে না নেয়ায় এবং রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা না করায় বিভিন্ন অংশে মরিচা ধরে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হতে চলেছে। ফেরি ও পন্টুনের বিভিন্ন অংশ এরই মধ্যে চুরি হয়ে গেছে এবং এখনো হচ্ছে। দীর্ঘদিন একই স্থানে পড়ে থাকায় এসব ফেরি ও পন্টুনের একাংশ নদীর কাঁদায় দেবে গেছে।

অকেজো ফেরি গুলো স্ক্রেব হিসাবে বিক্রি করলে ও সরকারি কোষাগারে বিপুল পরিমান রাজস্ব যোগ হতো। বর্ষা মৌসুমে নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে ফেরিগুলো বেশির ভাগই পানির নিচে থাকে। রাতে অনেকেই এখান থেকে লোহার পাত চুরি করে নিয়ে যায়। য়েক বছর অতিবাহিত হলেএসব ফেরিগুলোর অস্তিত্ব থাকবেনা বলে জানান এলাকাবাসীরা।

স্থানীয় জয়নাল আবেদীন জানান, লোহাগুলা পানির মধ্যে পইড়া থাকলে জং পইড়া নষ্ট তো হইবই। এগুলা যদি তাড়াতাড়ি বিক্রি করতো তাইলে সরকার বেশি টাকা পাইতো। ৯ বছর ধইরা নষ্ট হওয়া মেলা কিছু খোয়া গেছে, এখনতো তাও পাইতনা।

স্থানীয় দোকানদার সোহেল হোসেন জানান, একটা সময় ছিল যখন ধলেশ্বরী পাড়ি দিতে যাত্রী ও যানবাহনের যাতায়াতের অন্যতম প্রধান মাধ্যম ছিল এই মুক্তারপুর ফেরি সার্ভিস। ফেরি পারাপারের এই মাধ্যমটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন অকেজো ফেরিগুলো বিভিন্ন জেলা থেকে এনে জড়ো করা হয়। সেতুর নিচে অবহেলা ও অযত্নে নষ্ট হচ্ছে এসব সরকারি সম্পদ। অকেজো ফেরিগুলো কয়েক বছর পের হলে বিক্রি করার অযোগ্য হয়ে পড়বে।

ফেরি রক্ষণাবেক্ষণ ঢাকা বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস জানান, বিভিন্ন জেলা থেকে অকেজো এসব ফেরি একত্রে রাখা হয় তাকে ডাম্পিং জোন বলা হয়। অকেজো ফেরিগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করা আমাদের কাজ। সওজের একটি বিভাগ আছে যারা সার্ভে রিপোর্ট করে তা দাখিল করে। দাখিলকৃত রিপোর্টের মাধ্যমে এসব অকেজো ফেরির নাম অন্তভুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে নিলামের মাধ্যমে এসব অকেজো ফেরি বিক্রি করা হয়। নিলামের বিক্রি করার এই প্রক্রিয়াটি এভাবেই চলে তাই দীর্ঘ সময় হলেও এটাই সওজের নির্ধারিত নিয়ম।

দীর্ঘ সময় পড়ে থাকলেও আগামী ৩-৪ মাসের মধ্যে এসব অকেজো ফেরির বিষয়ে কার্যকরী ব্যস্থনা গ্রহণ করা হবে বলে আশাবাদী।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Link copied!