কলেবর বাড়ছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের

  • বিশেষ প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: অক্টোবর ১৬, ২০১৮, ০৪:৪৭ পিএম
কলেবর বাড়ছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের

ঢাকা : কলেবর বাড়ছে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারবিরোধী দলগুলোকে নিয়ে সদ্যগঠিত ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’র। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট থেকেও প্রাথমিকভাবে অন্তত চারটি দলকে ঐক্যফ্রন্টে নেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে।

এগুলো হলো লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) ও জাতীয় পার্টি (জাফর)। জামায়াতসহ দু’একটি দল বাদে পর্যায়ক্রমে সব দলকেই ফ্রন্টভুক্ত করা হবে। একই সঙ্গে সরকারবিরোধী অন্য দলগুলোকেও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যুক্ত করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

জানা যায়, দুর্গাপূজার পরপরই আগামী সপ্তাহে সিলেটে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জনসভার মধ্য দিয়ে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচির যাত্রা শুরু হবে। এ মাসেই পর্যায়ক্রমে রাজশাহী ও চট্টগ্রামে জনসভা করারও চিন্তাভাবনা চলছে। কর্মসূচি চূড়ান্ত করার পাশাপাশি জোট সম্প্রসারণে আজ দুপুরে আবারও জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রবের বাসায় বৈঠকের আহ্বান করা হয়েছে।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এক নেতা জানান, আজকের বৈঠকে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে ফ্রন্টের মুখপাত্র করা হতে পারে। এর আগে তিনি যুক্তফ্রন্টেরও সমন্বয়ক ছিলেন। এ ছাড়া বৈঠকে লিয়াজোঁ কমিটি গঠন, আন্দোলন কর্মসূচি, চলমান রাজনীতিসহ আগামী দিনে করণীয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হতে পারে।

সূত্রমতে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে বাদ পড়া বিকল্পধারার একটি অংশ যুক্ত হতে পারে। কয়েকটি বাম দলের সঙ্গেও যোগাযোগ করছেন ঐক্যফ্রন্টের সংশ্লিষ্ট নেতারা। এ ছাড়া যুক্তফ্রন্টভুক্ত সোনার বাংলা পার্টি ও জনদলকে ঐক্যফ্রন্টে অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘কর্মসূচি চূড়ান্ত করার পাশাপাশি চলমান নানা পরিস্থিতি নিয়ে আগামীকাল (আজ মঙ্গলবার) বেলা ১২টায় আ স ম আবদুর রবের বাসভবনে বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানে জোট সম্প্রসারণের বিষয়টিও আলোচনায় আসতে পারে। ২০-দলীয় জোট থেকেও আসতে পারে, আবার বাইরে থেকেও গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল দল জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যুক্ত হতে পারে।’

ড. কামাল হোসেন নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্যসচিব মোস্তফা আমিন বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের  কেবলই যাত্রা শুরু হলো। আগামীকাল জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রথম বৈঠক। এ বৈঠকে আগামী দিনের আন্দোলন-কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে। সেখানে আরও অনেক বিষয় নিয়েই  আলোচনা হতে পারে।’

জানা যায়, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের একটি অংশ জামায়াতকে ‘একঘরে’ করার চিন্তাভাবনা করছে। এরই অংশ হিসেবে জোটের প্রায় সব দলকেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে চায় ওই অংশটি। এ বিষয়টি ২০-দলীয় জোটও অবগত। এ নিয়ে জোটভুক্ত কয়েকটি দল অসন্তুষ্ট বলে জানা গেছে। তবে এ মুহূর্তে জামায়াত ইস্যুতে বিএনপি কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না বলে জোটকে ‘আশ্বস্ত’ করেছে।

গতকাল রাতেও ২০-দলীয় জোটের বৈঠকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সেখানে বিএনপির পক্ষ থেকে ঐক্যফ্রন্ট গঠনের সার্বিক বিষয় তুলে ধরা হয়। এ সময় জোটের নেতারা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে স্বাগত জানান। তবে জোট নেতারা বিএনপিকে জানান, জোটকে অটুট রেখেই এ ফ্রন্টকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো দলকে বাদ দেওয়া যাবে না। বিএনপিও এতে একমত পোষণ করে বলে জানা গেছে।

জানা যায়, বিএনপি ২০-দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে নিয়ে সমান তালে এগোতে চাইছে। এ ক্ষেত্রে দলটি একটি কৌশলী ভূমিকা নিয়েছে। শুধু এই দুই জোটই নয়, দেশব্যাপী আইনজীবীসহ বিভিন্ন পেশাজীবীদেরও ফ্রন্ট তৈরি করে আন্দোলনে যেতে চায় বিএনপি।

সাবেক ডাকসাইটের ছাত্রনেতা সানাউল হক নীরুর নেতৃত্বে ‘মুভমেন্ট ফর জাস্টিস’ নামে একটি সংগঠনেরও যাত্রা শুরু হচ্ছে। এতেও যুক্ত হবেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। পাশাপাশি দেশব্যাপী বিভিন্ন ব্যানারে গণসম্পৃক্ত কর্মসূচিও দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ইস্যুতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক নেতা জানান, জামায়াতের নিবন্ধন স্থগিত করেছে উচ্চ আদালত। এখন সরকার চাইলে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে পারে। কিন্তু সরকার তা করছে না। বিষয়টিকে জিইয়ে রেখেছে। সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করলে তখন বিএনপি একটি সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।

অন্যদিকে বিগত ১১ বছর ধরে প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও বিএনপির পাশে ছিল জামায়াত। এ জন্য জামায়াতকেও অনেক মাশুল দিতে হয়েছে। আবার জামায়াতকে ছেড়ে দিলে সরকারের সঙ্গে যে তারা জোট করবে না, এরও নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারবে না। সার্বিক দিক বিবেচনায় ‘আপাতত’ জামায়াতকে সঙ্গে নিয়েই পথ চলতে চায় বিএনপি।

এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘জামায়াত ২০-দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল। তাদের সঙ্গে আমাদের আদর্শিক জোট নয়, আন্দোলন ও নির্বাচনী জোট। এ ছাড়া ২০-দলীয় জোট নেত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এখন কারান্তরীণ। তিনিই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবেন। এখন তিনি কারান্তরীণ রয়েছেন। আশা করছি, শিগগিরই এই সরকারের কারাগার থেকে বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি লাভ করবেন। তার নেতৃত্বেই আমরা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাব।’

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যাচ্ছেন কি না জানতে চাইলে এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে বিএনপির থাকা মানে আমাদেরও থাকা। এ হিসেবে আমরাও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে আছি।’ জাতীয় পার্টির (জাফর) প্রেসিডিয়াম সদস্য আহসান হাবিব লিংকন বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে আমরা ২০-দলীয় জোটভুক্ত দল। ২০ দল অটুট থেকেই সবকিছু হবে। এ ক্ষেত্রে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে বিএনপির থাকা মানেই ২০ দল থাকা।’

এদিকে রাজনৈতিক রণকৌশল ও আন্দোলনের কর্মসূচি চূড়ান্ত করতে ধারাবাহিকভাবে বৈঠক করছেন নবগঠিত জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের নেতারা। এরই অংশ হিসেবে গতকাল নেতারা ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে বৈঠক করেন। বৈঠকে অংশ নেন গণফোরাম ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতারা। এতে স্বাধীনতা বিরোধিতাকারী ও সরকার সমর্থক ১৪-দলীয় জোটের বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোকেও ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে যুক্ত করার প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়।

রাজধানীর মতিঝিলে ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে বিকাল ৪টায় এ বৈঠক শুরু হয়ে প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী চলে। বৈঠক শেষে একজন মুখপাত্র বলেন, রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণ ও আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে গণফোরাম ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতাদের বৈঠক হয়েছে। কর্মসূচি চূড়ান্ত করতে আরও বৈঠক হবে। লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক হবে। আজও বৈঠক হবে। তারপর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

বৈঠক শেষে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘দেশে হাজার হাজার গায়েবি মামলা হচ্ছে, সেখানে আমার বিরুদ্ধে একটি জিডি হয়েছে। সেটা তারা করতেই পারেন। তারা আমাকে সম্মানিত করেছেন। আসলে আমাকে যে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, ততটা সম্মানিত ও গুরুত্বপূর্ণ আমি নই।’

এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন গণফোরাম সভাপতি ও জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন, ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আলতাফ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্য সচিব আ ব ম মোস্তফা আমিন, অ্যাডভোটে জগলুল হায়দার আফ্রিক, মোস্তাক আহমেদ প্রমুখ। এদিকে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান বৈঠকের খবর নিশ্চিত করে জানান, অন্য কাজের কারণে তিনি বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারেননি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Link copied!