ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিলেন খালেদা জিয়া

  • বিশেষ প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: অক্টোবর ২৯, ২০১৮, ১০:১৩ পিএম
ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিলেন খালেদা জিয়া

ঢাকা : খালেদা জিয়া, রাজপথের বিরোধী দল বিএনপির চেয়ারপারসন। তিনবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশ শাসন করেছেন। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ৫ বছর কারাদণ্ডের পর বর্তমানে কারাবন্দি তিনি।

সোমবার (২৯ অক্টোবর) জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট নামক আরেক মামলায় তাকে ৭ বছরের কারাদণ্ড ছাড়াও অর্থদণ্ড দিয়েছেন বিচারিক আদালত। এ সাজার ঘটনায় বাংলাদেশের ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিলেন খালেদা জিয়া। যদিও সেটি কোনো সুখকর ইতিহাস নয়।

দেশের ইতিহাসে প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। আর দেশের প্রথম কোনো সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এই প্রথম দুর্নীতির দুই মামলায় ১২ বছর সাজা হলো।

এছাড়া সাবেক রাষ্ট্রপতি ও সেনাপ্রধানের স্ত্রী হিসেবেও প্রথম ব্যক্তি খালেদা জিয়া, যাকে এ ধরনের দণ্ড দেয়া হলো। তবে বিএনপি নেতারা বলছেন, দুটি মামলাতেই বিচারিক আদালত সাজা দিয়েছেন। খালেদা জিয়া ন্যায়বিচার পাননি। দেশের নিম্ন আদালত এখনো রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হতে পারেননি। উচ্চ আদালতে ভবিষ্যতে এ সাজা টিকবে না।

গতকাল সোমবার দুপুরে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে ৭ বছরের সাজা দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মো. আখতারুজ্জামান। সেইসঙ্গে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এর আগে চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি একই আদালত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেন।

নির্বাচনী বছরে পরপর দুটি মামলার রায় এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে সাজা দেয়া নিয়ে রাজনৈতিক মহলে ভিন্নমত রয়েছে। খালেদা জিয়ার দল বিএনপি বলছে, নির্বাচন থেকে দলীয় প্রধানকে দূরে রাখতেই তড়িঘড়ি করে সাজা দেয়া হয়েছে। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দাবি, আদালত সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করছেন, এখানে তাদের কোনো হস্তক্ষেপ নেই।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ভোটের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ফায়দা নিতে চাইবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে এখনই স্পষ্ট বলা যাচ্ছে না, খালেদা জিয়াকে ঠিক নির্বাচন থেকে দূরে রাখা সম্ভব কিনা। সর্বোচ্চ আদালত কি সিদ্ধান্ত দেন, তার ওপর সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনে অংশগ্রহণের ভাগ্য নির্ভর করছে।

জানতে চাইলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. মিজানুর রহমান শেলী বলেন, ‘এখানে কিছুটা কারিগরি, আবার ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু, এটাকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে, এটাও সত্য। এই নিয়ে আর বলার কিছু নেই।’

তবে বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমদ আজম খান বলেন, ‘দুটি মামলায় সাজানো, রায়গুলো হচ্ছে ফরমায়েসি। যে রাষ্ট্রে আইনের শাসন থাকে না, স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের করতালে থাকে, সেখানে তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে সর্বোচ্চ রাজনৈতিক প্রচেষ্টায় সাজা দেয়া হবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে এ রায় ভবিষ্যতে টিকবে না।’

তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে বিদায় করার জন্য ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এর ফলে আগামী নির্বাচন অবশ্যই সঙ্কটে পড়বে।’

প্রসঙ্গত, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার মোট আসামি চারজন। খালেদা ছাড়া অভিযুক্ত অন্য তিন আসামি হলেন, খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব বর্তমানে বি আইডবিøউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।

এ মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন মোট ৩২ জন। ২০১১ সালের ৮ আগস্ট খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলাটি দায়ের করে দুদক। এ মামলায় ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।
এর আগে গতকাল সোমবার সকালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতেও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বিচার চলবে বলে হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে খালেদা জিয়ার করা আবেদন খারিজ করেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

গত ১৪ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়া আদালতে পর পর কয়েকদিন না আসার পরিপ্রেক্ষিতে তার অনুপস্থিতিতেও বিচার চলবে বলে বিশেষ জজ আদালত যে আদেশ দিয়েছিলেন, তার বিরুদ্ধে করা রিভিশন আবেদন খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। পরে হাইকোর্টের এই আদেশের বিরুদ্ধে আবেদন করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা।

গতকাল ওই আবেদন খারিজ করে দেন সর্বোচ্চ আদালত। মামলাটিতে খালেদা জিয়াসহ অপর আসামিদের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ তৎকালীন বিচারক বাসুদেব রায় অভিযোগ গঠন করেন।

এছাড়া গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৫ বছরের সাজা হলে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে কারগারে পাঠানো হয়। রাজধানীর পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের কারাগার থেকে গত ৬ অক্টোবর চিকিৎসার জন্য তাকে কারা তত্ত্বাবধানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) আনা হয়। বর্তমানে সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Link copied!