ঢাকা : পরাজয়ের ক্লান্তি নিয়ে শেষ হলো বাংলাদেশের নিউজিল্যান্ড সফর। তিনটি ওয়ানডে, তিনটি টি-টোয়েন্টি ও পরে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজেও হোয়াইটওয়াশ হল টাইগাররা। সফরের শেষ টেস্টেও কিউইদের কাছে ৯ উইকেটে হেরেছেন সাকিব-তামিমরা। সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে ৯ উইকেটে জিতে ২-০ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজও নিজেদের করে নিলো স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড। বিদেশ যাত্রার প্রথম পরীক্ষাতেই শূন্য হাতে ফিরল বাংলাদেশ।
চতুর্থ দিনে সোমবার (২৩ জানুয়ারি) বাংলাদেশের দেয়া ১০৯ রানের লক্ষ্য স্বাগতিকরা ১৮ দশমিক ৪ ওভারে মাত্র এক উইকেটে হারিয়ে পৌঁছে যায়। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং ব্যর্থতায় একদিন বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ার পরও চার দিনে ক্রাইস্টচার্চ টেস্ট হেরেছে বাংলাদেশ। টানা দুবার ওয়ানডেতে ‘বাংলাওয়াশ’ হওয়ার শোধ নিউজিল্যান্ড তুলে নিল এক সফরেই তিনবার বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করে!
এই টেস্টেও তৃতীয় দিন শেষে এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু আজ চতুর্থ দিনটাই বাংলাদেশকে একেবারে ছিটকে দিল। প্রথমে ব্যাটে এরপর বোলিংয়ে বাংলাদেশকে হারের মুখে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করিয়ে দিল নিউজিল্যান্ড। প্রথম ইনিংসে ২৫৬ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ফেলা নিউজিল্যান্ড শেষ তিন জুটিতে যোগ করল ৯৮ রান। ক্রিকেট জুটি খেলা—নিউজিল্যান্ডের শেষটা দেখেও বুঝল না বাংলাদেশ! অধিনায়কত্ব যে একদমই পছন্দ না, দুই ইনিংসে আউটের ধরন দিয়ে তামিম ইকবাল বুঝিয়ে দিলেন। লাঞ্চের আগে ১০ ওভারে ওই একটাই পতন। কিন্তু চার বিরতির আগে আরও চারটি এবং চা বিরতির পর শেষ পাঁচটি উইকেট হারিয়ে অলআউট হয়ে গেল বাংলাদেশ। ৩২ ওভারের মধ্যে শেষ ৯ উইকেট নেই!
সৌম্য সরকারের ৩৬, মাহমুদউল্লাহর ৩৮ ছাড়া মিডল ও লোয়ার মিডল অর্ডারে আর কেউ দাঁড়ালেনই না। অভিষিক্ত তরুণ নাজমুলের ৬০ বলে ১২ হয়ে গেল ক্ষণিকের প্রতিরোধ। সৌম্য-মাহমুদউল্লাহ সেট হয়েও ইনিংস বড় করার দিকে আগ্রহ পেলেন না। বাকিরা তো সেট হওয়ার চেষ্টাও করেননি!
শেষের আগে তবু শেষ করতে চাইলেন না তাসকিন আহমেদ ও কামরুল ইসলাম রাব্বি। টেস্ট সিরিজ থেকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি সম্ভবত এই দুজনই। বোলিংয়ে আলো ছড়িয়েছেন, শেষ বেলায় ব্যাটিংয়েও দেখালেন ঝলক। ছিল নিবেদন, লড়াইয়ের মানসিকতা। এলোমেলো শট খেলেছেন কিছু, লোয়ার অর্ডারদের কাছে সেটি প্রত্যাশিতই। পাশাপাশি খেলেছেন দারুণ কিছু শটও। নবম উইকেটে দুজনের ৫১ রানের জুটিতে একটু বেড়েছে ম্যাচের দৈর্ঘ্য।
তাতেও অবশ্য ম্যাচ শেষ দিনে নেওয়া যায়নি। সন্ধ্যা সাতটায়ও চকচকে রোদ। বাড়তি আধঘণ্টা সময়ের সুযোগ কেন নেবে না নিউ জিল্যান্ড! ডি গ্র্যান্ডহোমের ব্যাট থেকে এলো চারটি ছক্কা। টম ল্যাথাম তো জীবনের সেরা ফর্মে। ক্যাচ হাতছাড়া সফরে শেষ বেলায়ও ক্যাচ ছাড়লেন সাকিব। টানা দুই ছক্কায় সিরিজ শেষ করলেন ডি গ্র্যান্ডহোম। ঝলমলে রোদেও কী ভীষণ বিবর্ণ বাংলাদেশ!
অধিনায়কসহ নিয়মিত তিন ব্যাটসম্যানকে হারানোর পর এই হারকে ‘বেনিফিট অব ডাউট’ দেওয়াই যায়। তবে হারের একই ধারা, ব্যাটসম্যানদের আত্মঘাতী শটগুলো বারবার জানান দেবে, টেস্টের বাংলাদেশ সেই একইরকম!
উন্নতির ছাপ অবশ্যই আছে বাংলাদেশের খেলায়। কিন্তু দায়হীন ব্যাটিংয়ের কদর্য রংটা সেই ছাপগুলোকে আড়াল করে দিচ্ছে। আর তাই ‘উন্নতি’র তৃপ্তির ঢেকুর তোলার বদলে আত্মবিশ্লেষণ বোধ হয় বেশি জরুরি! একটাই ‘আশা’র কথা, প্রায় এক মাসের দীর্ঘ এই ক্লান্তিকর সফরটা অবশেষে শেষ হলো!
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ২৮৯
নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৯২.৪ ওভারে ৩৫৪
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ৫২.৫ ওভারে ১৭৩ (তামিম ৮, সৌম্য ৩৬, মাহমুদউল্লাহ ৩৮, সাকিব ৮, শান্ত ১২, সাব্বির ০, নুরুল ০, মিরাজ ৪, তাসকিন ৩৩, রাব্বি ২৫*, রুবেল ৭; বোল্ট ৩/৫২, সাউদি ৩/৪৮, ডি গ্র্যান্ডহোম ১/২৭, ওয়াগনার ৩/৪৪)।
নিউ জিল্যান্ড ২য় ইনিংস: ১৮.৪ ওভারে ১১১/১ (লক্ষ্য ১০৯) (রাভাল ৩৩, ল্যাথাম ৪১*, ডি গ্র্যান্ডহোম ৩৩*; তাসকিন ০/২১, মিরাজ ০/২৭, কামরুল ১/২১, সাকিব ০/২৮, শান্ত ০/১৩)
ফল: নিউ জিল্যান্ড ৯ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: নিউ জিল্যান্ড ২-০তে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: টিম সাউদি
সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :