লক্ষ্মীপুরে বন্যায় জনজীবন বিপর্যস্ত, নতুন এলাকা প্লাবিত 

  • লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি   | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: আগস্ট ২৭, ২০২৪, ০৭:৫৩ পিএম
লক্ষ্মীপুরে বন্যায় জনজীবন বিপর্যস্ত, নতুন এলাকা প্লাবিত 

লক্ষ্মীপুর: ভয়াবহ বন্যায় লাখ-লাখ মানুষ পানিবন্দী। খাল-বিল গুলোর পানি বৃদ্ধি পেয়ে তলিয়ে গেছে জেলার অধিকাংশ এলাকা। ইতোমধ্যেই বৃষ্টি ও বন্যার পানিতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। তলিয়ে গেছে গ্রামীণ সব রাস্তাঘাট। 

আর বন্যায় সড়কগুলো তলিয়ে যাওয়ায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। সারাদেশ থেকে ত্রাণ ও উদ্ধার কর্মীরা জেলার ৫টি উপজেলায় প্রবেশ করলেও এখনো অনেক এলাকার মানুুষ ত্রাণ পাচ্ছেন না। শিশু, নারী, বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা সহ সববয়সী মানুষ পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। 

মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) দিনব্যাপী লক্ষ্মীপুর পৌর এলাকা ও সদর উপজেলার লাহারকান্দি, বাঙ্গাখাঁ, মান্দারী, দিঘলী, ভবানীগঞ্জ, টুমচর সহ বেশ কয়েকটি এলাকায় গিয়ে দেখা যায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুুষ। নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে আরও কয়েকটা গ্রাম। 

জানা যায়, স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্রয়কেন্দ্র গুলোতে সরকারি ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলের বন্যা কবলিত মানুষের মাঝে এখনো কোনো ত্রাণ সহায়তা পৌঁছায়নি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগ ত্রাণ পৌঁছানোর চেষ্টা চলছে, তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় কম বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এমন পরিস্থিতিতে বন্যার্ত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আকুতি জানিয়েছেন হাজার-হাজার বানভাসি পরিবার। 

লাহারকান্দি এলাকার বাসিন্দা মো. ফারুক হোসেন, দেলোয়ার হোসেন, মো. রিয়াজ সহ বেশ কয়েকজন জানান, রহমতখালী খালের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে আমাদের গ্রাম ও রাস্তাঘাট। এখনো কোনো ত্রাণ সহায়তা পায়নি। খাবার এবং বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট। দোকানপাগুলোতে তেমন কোন খাবার সামগ্রীও নেই।থাকলেও দাম অনেক বেশি নেওয়া হচ্ছে। গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে প্রায় দুই তিন গুণ বেশি দামে। অনেকে আবার চুরি-ডাকাতির ভয়ে ঘর-বাড়ী চেয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চায় না। তারা কষ্ট করে ঘরেই আছে। 

এছাড়াও লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগর, রামগতি, রায়পুর ও রামগঞ্জেরও একই পরিস্থিতি। এসব এলাকার হাজার হাজার মানুুষ পানিবন্দী। অনেকেই ছুটছেন আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে। কিন্তু কোনো কোনো আশ্রয়কেন্দ্র পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। 

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ-জামান বলেন, সোমবারের তুলনায় মঙ্গলবার জেলায় পানি বেড়েছে ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি। প্রচুর পানি নামছে। কিন্তু এর পরও বন্যার উন্নতি নেই। এখনো বন্যার অবনতি হচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতি উন্নত হতে আরও কয়েক দিন সময় লাগতে পারে।

জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুরাইয়া জাহান জানান, লক্ষ্মীপুরে প্রায় ৮ লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। এ পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে ৩০ হাজার মানুষ। বন্যা দুর্গত এলাকার বাসিন্দাদের জন্য ৭০০ টন চাল ও নগদ ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫০৯ টন চাল ও ১৬ লাখ টাকা ত্রাণ হিসেবে বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও, শিশু খাদ্যের জন্য ৫ লাখ ও গো-খাদ্যের জন্য ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। বন্যা কবলিত এলাকায় এই বরাদ্দ পর্যাপ্ত নয়। এজন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আরও ৩০ লাখ টাকার চাহিদা প্রেরণ করা হয়েছে।

এআর

Link copied!