শোকে নীরব নলছিটি, ওসমান হাদির শূন্যতায় কাঁদছে গ্রাম

  • বরিশাল প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৯, ২০২৫, ১১:৫৭ এএম
শোকে নীরব নলছিটি, ওসমান হাদির শূন্যতায় কাঁদছে গ্রাম

ছবি : প্রতিনিধি

বরিশাল: ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার খাসমহল পৌর এলাকা আজ স্তব্ধ। টিনের ছোট ঘরটি এখন শুধু স্মৃতির ঠিকানা-যেখানে জন্ম নিয়েছিলেন সৈয়দ শরীফ ওসমান হাদি। ঘাতকের গুলিতে প্রাণ হারানো এই তরুণ নেতার শূন্যতায় শোক আর কান্নায় ভেঙে পড়েছে পুরো গ্রাম।

হাদির গ্রামের বাড়িতে সকাল থেকেই ভিড় করছেন চেনা-অচেনা অসংখ্য মানুষ। কেউ নীরবে দাঁড়িয়ে আছেন, কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেন না। শেষবারের মতো প্রিয় মানুষটিকে দেখার অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন গ্রামবাসী।

পারিবারিক সূত্র জানায়, ওসমান হাদির শেষ ইচ্ছা ছিল তাকে বাবার কবরের পাশেই দাফন করার। তবে পারিবারিক আলোচনা শেষে দাফনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।

১৯৯৩ সালে জন্ম নেওয়া ওসমান হাদি ছিলেন বাবা মাওলানা আবদুল হাদি ও মা তাসলিমা হাদির ছয় সন্তানের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ। নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা এই তরুণ শৈশব থেকেই ছিলেন প্রতিবাদী ও দৃঢ়চেতা। নেছারাবাদ এনএস কামিল মাদরাসা থেকে দাখিল ও আলিম সম্পন্ন করে পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন তিনি।

এলাকাবাসীর ভাষ্য, হাদি শুধু একটি নাম নয়-চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া একজন সাহসী কণ্ঠস্বর। তার মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না কেউই। কেউ অঝোরে কাঁদছেন, কেউ আবার গুমরে গুমরে বলছেন-এমন মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই হাদির ভগ্নপ্রায় বসতঘরের সামনে মানুষের ঢল নামে। বাড়িতে অবস্থানরত হাদির বোন ও তার পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দিতে গিয়ে অনেকেই ভাষা হারিয়ে ফেলছেন। কারো মুখে স্মৃতিচারণ, আবার কারো কণ্ঠে একটাই দাবি-হত্যার সুষ্ঠু বিচার।

অন্যদিকে, বরিশালের বাবুগঞ্জে হাদির শ্বশুরবাড়িতেও চলছে শোকের মাতম। অল্প বয়সে স্বামীহারা স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন স্বজনরা। তাদের দাবি, হাদির মতো আর কোনো সন্তানের যেন এভাবে প্রাণ না ঝরে।

উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর পুরানা পল্টনে নির্বাচনি প্রচারণার সময় সন্ত্রাসীদের গুলিতে গুরুতর আহত হন ওসমান হাদি। প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য ১৫ ডিসেম্বর তাকে সিঙ্গাপুর নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

এসআই

Link copied!