এসএসসি ফেল চর্মরোগী দিচ্ছেন চর্মরোগের প্রেসক্রিপসন, নজর নেই প্রশাসনের

  • টাঙ্গাইল প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৮, ২০২৪, ০৫:১৪ পিএম
এসএসসি ফেল চর্মরোগী দিচ্ছেন চর্মরোগের প্রেসক্রিপসন, নজর নেই প্রশাসনের

ঢাকা: টাঙ্গাইলের কালিহাতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অদূরে ও প্রাণী সম্পদ অফিসের সামনে নিজের ফার্মেসীতে বসে দীর্ঘদিন যাবৎ চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ পরিচয় দিয়ে প্রেসক্রিপশন দিয়ে আসছেন ভুয়া চিকিৎসক ভবেশ চন্দ্র কর।

একটা সময় তিনি নিজেই ছিলেন দীর্ঘদিনের চর্মরোগে আক্রান্ত। অন্যদিকে তিনি ২ বার এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে ২ বারই হয়েছেন অকৃতকার্য। এরপর আর লেখাপড়াই করেননি তিনি। অথচ তিনিই এখন প্রেসক্রিপশন করছেন ডাক্তার পরিচয় দিয়ে। 

প্রশ্ন উঠেছে কালিহাতী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরা সময়মতো উপস্থিত না থাকায় ও রোগিদের সময় না দেয়ায় এই ভুয়া চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন রুগিরা। প্রতিদিন শতাধিক রুগির সাথে প্রতারণা করে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের অর্থ। 

এসব তথ্যের ভিত্তিতে সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে সংবাদ না করতে বাধাও দেয়া হয়। ভুয়া চিকিৎসক ভবেশ চন্দ্র কর নিজের দোষ স্বীকার করলেও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলছে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে নেয়া হবে ব্যবস্থা। তবে দায় দেখছেননা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকদের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কালিহাতী এলাকায় কালিহাতী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অদূরে ও পশু হাসপাতালের সামনে দীর্ঘদিন যাবৎ নিজের রানা ফার্মেসীতে বসে চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে প্রেসক্রিপশন করে আসছে ভবেশ চন্দ কর নামের এক ভুয়া চিকিৎসক। 

আগে প্রেসক্রিপশনে ডাক্তার লিখলেও সম্প্রতি ডাক্তার লেখা বন্ধ করেছেন তিনি। তবে প্রেসক্রিপশনে তার নাম ও পদবি এমন ভাবে লিখেছেন দেখে মনে হয় হুবহু এমবিবিএস ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন। 

প্রতিদিন এভাবে শতাধিক রোগী দেখেন। রোগীদের কাছ থেকে সরাসরি ভিজিট না নিলেও ওষুধের দামের সাথে ১০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত ভিজিট নিয়ে থাকেন ভবেশ চন্দ্র কর।

চিকিৎসা নিতে আসা আসমা খাতুন জানান, রানা ফার্মেসীতে ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ খাওয়ার পর চর্মরোগ কিছুটা কমেছিলো। কয়েকদিন পর আরো বেড়েছে। আজ আবার ডাক্তার দেখাতে এসেছি।

ভবেশ চন্দ্র কর ডাক্তার না এটা জানেন কি? এমন প্রশ্নের উত্তরে আসমা বলেন, ডাক্তার না হলে ফার্মেসীতে বসে রোগী দেখেন কি ভাবে। ভিজিটও নিচ্ছেন। উপজেলা পরিষদ এখানে, পাশে সরকারি হাসপাতাল এতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসে রোগী দেখছে তাহলে প্রশাসন কি করে এমন প্রশ্ন তার।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে স্থানীয় এক দোকানদারসহ স্থানীয়রা জানান, মধুপুরের জলছত্র হাসপাতালে চাকরি করা অবস্থায় ফার্মেসী খুলে তখন থেকে মানুষের সাথে এভাবেই প্রতারণা করে আসছে ভবেশ চন্দ্র কর। প্রতিদিন কমপক্ষে শতাধিক রুগি দেখেন। ভবেশের আরেকটি প্রতারণা হচ্ছে ওষুধের দামের সাথে যোগ করে ভিজিট নিয়ে থাকেন তার কর্মচারীর মাধ্যমে। 

কার কাছ থেকে কতটাকা ভিজিট নেয় তাও বলেনা। কিছুদিন আগে এক রোগীর কাছ থেকে ওষুধের দামের থেকে প্রায় সাড়ে ৫ শত টাকা বেশি নিয়েছে। ওই রোগী অন্য জায়গা থেকে ওষুধের দাম যাচাই করে এসে ভবেশের সাথে তর্কে জড়ায়। পরে সে ১০০ টাকা রেখে বাকি টাকা ফেরত দেন। 

কালিহাতী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়মিত চর্মরোগের ডাক্তার না থাকায় রোগীরা ভবেশ চন্দ্র করের কাছে ভিড় জমায়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তারের উপস্থিতি থাকলে মানুষ এখানে চিকিৎসা নিতে আসতোনা।

ভুয়া চিকিৎসক ভবেশ চন্দ্র কর জানান, একসময় সে নিজেই ছিলেন চর্মরোগের রোগী। মধুপুরের জলছত্র হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার সময় ডাক্তারদের সাথে তার সম্পর্ক তৈরি হয়। পরে ডাক্তারের সহকারির চাকরি নেন। ডাক্তারের সাথে থাকার সুবাদে চিকিৎসা দিতে শিখেছেন তিনি। পরে ফার্মেসী খুলে কর্মচারি রেখেছেন। সময় পেলে এসে রোগী দেখতেন। এভাবেই চলছে কয়েকযুগ ধরে।

তিনি জানান, মাঝে ২ বার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েও পাস করতে পারেননি। পরে আর পরীক্ষা দেননি। জলচ্ছত্র হাসপাতাল থেকে অবসরের পর ৬ মাস একটি ক্লিনিকে ম্যানেজারের চাকরি করেছেন। এরপর থেকে প্রতিদিন ফার্মেসীতে বসেই রোগী দেখেন।

প্রেসক্রিপশনে ডাক্তার লেখার বিষয়টি অস্বীকার করে ভবেশ চন্দ্র কর জানান, প্রেসক্রিপশনগুলো ওষুধ কোম্পানির লোকেরা দিয়ে থাকে তারা ভুল করে দিয়েছিলো। পরে তা ফেরত দিয়েছি। রোগীদের কাছ থেকে ১০০ টাকা করে ভিডিট নেন জানিয়ে তার ভুল স্বীকার করে আর কখনো প্রেসক্রিপশন করবেন না বলে জানান ভুয়া চিকিৎসক ভবেশ চন্দ্র কর।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত হুসেইন জানান, স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. রাহাত হোসেন জানান, চিকিৎসক না হলে কারো প্রেসক্রিপশন করার অনুমতি নেই। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে প্রেসক্রিপশন না করার কথা বললেও এখনো প্রতিদিন আগের মতোই প্রেসক্রিপশন করে রোগি দেখছেন ভুয়া চিকিৎসক ভবেশ চন্দ্র কর।

এআর

Link copied!