আমরা ৮ দলের নয়, ১৮ কোটি মানুষের বিজয় চাই: জামায়াত আমির

  • চট্টগ্রাম প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৫, ২০২৫, ০৮:৫০ পিএম
আমরা ৮ দলের নয়, ১৮ কোটি মানুষের বিজয় চাই: জামায়াত আমির

ছবি : প্রতিনিধি

চট্টগ্রাম: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আমরা ৮ দলের বিজয় চাই না, ১৮ কোটি মানুষের বিজয় চাই। সেই আকাঙ্খার বিজয় হবে কুরআনের মাধ্যমে। চট্টগ্রাম থেকে ইসলামের বিজয়ের বাঁশি বাজানো হবে। আগামীর বাংলাদেশ হবে কুরআনের বাংলাদেশ।

শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) দুপুরে ৮ দলের উদ্যোগে আয়োজিত চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

এদিন সকাল থেকে নগরীর ঐতিহাসিক লালদীঘির ময়দানে মিছিলে মিছিলে জড়ো হতে থাকেন ৮ দলের নেতাকর্মী ও নগরবাসী। পরে দুপুর পৌনে ২টা থেকে শুরু হয় সমাবেশের মূল কার্যক্রম। এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক। বক্তাদের বক্তব্যের সময় নেতাকর্মীরা পাঁচদফা দাবি নিয়ে স্লোগান দেন।

প্রধান অতিথি ডা. শফিকুর রহমান বলেন, তারা নিজেদের উন্নয়ন করেছিল। রাস্তাঘাট তৈরি করেছিল রটের বদলে বাঁশ দিয়ে। বাংলাদেশের টাকা লুট করে সিঙ্গাপুরে গিয়ে তারা ব্যবসা শুরু করে দিয়েছে। শাপলা চত্বরে অসংখ্য মাওলানাকে হত্যা করা হয়েছিল। এরপর কুখ্যাত প্রধানমন্ত্রী বলেছিল রঙ দিয়ে শুয়ে ছিল। তারা রক্তাক্ত হাতে ক্ষমতায় এসেছিল রক্তাক্ত হাতেই বিদায় নিয়েছে।

তিনি বলেন, গাড়ি দিয়ে পালানোর সাহস তারা হারিয়ে ফেলেছিল। সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবিকে এই অপকর্মে লাগানোর চেষ্টা করেছিল। দেশের সবকিছু তারা ধ্বংস করেছিল। ফ্যাসিবাদ বিদায় নিলেও দেশ ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়নি। ফ্যাসিবাদকে নতুন করে রুখে দাঁড়াতে দেয়া হবে না।

৫ আগস্ট বিপ্লবের পরদিন থেকে একটি গোষ্ঠী প্রভাব বিস্তারের জন্য জনগণের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে জানিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি অব্যাহত আছে। ক্ষমতায় না গিয়েও অনেকে ক্ষমতার দাপট দেখাচ্ছে। প্রশাসনের ওপর প্রভাব বিস্তার করছে।

আন্দোলনরত ৮ দলের ৫ দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত রাজপথের লড়াই অব্যাহত থাকবে ঘোষণা দিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ইসলামি দলগুলোর মধ্যে যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এই ঐক্য আমাদেরকে জাতীয় সংসদ পর্যন্ত নিয়ে যাবে। প্রয়োজনে আবারও ৫ আগস্ট সংঘটিত হবে বলে হুঁশিয়ার করেন তিনি।

সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেন, বাংলাদেশ গরীব দুঃখী মেহনতি মানুষের রক্তে গড়া। বনেদিদের বাংলাদেশ আর থাকবে না। অনেক দল থেকে আসন সমঝোতার অফার দেয়া হয়েছিল। আমরা বাংলাদেশের অধিকার মালিকানা কায়েম করতে চাই। ইসলামের বার্তা পৌঁছে দিতে চাই। পুঁজিবাদি অর্থব্যবস্থার কবর রচনা করে আল্লাহর আইনের ব্যবস্থা রচনা করা হবে।

তিনি বলেন, এবার ইসলামী দলগুলো ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলার মাটিতে জেগে উঠেছে। সকল চক্রান্ত, আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্যদিয়ে জনতার বিজয় হবে। 

বাংলার মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ উল্লেখ করে মামুনুল হক বলেন, দলীয় প্রতীকে ভোট দেওয়ার পাশাপাশি হ্যাঁ ভোটের বাক্স ভরতে হবে। নির্বাচন নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা দেখা দিলে সরকারকে তার দায় নিতে হবে। তিনি বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য সকলের কাছে দোয়া কামনা করেন।

সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইসলাম আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেন, ব্রিটিশ এই দেশ থেকে চলে গেলেও মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধেও বৈষম্য দূর হয়নি। সেই থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত যারা শাসক ছিল তারা বৈষম্য থেকে মুক্তি দিতে পারেনি। তাই ৫ আগস্টের আন্দোলনে হাজার হাজার জীবনের বিনিময়েও মানুষ মুক্তি পায়নি। আগামীতে আবারও চাঁদাবাজ, জামেলদের বিরুদ্ধে আন্দোলন হবে। ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হলে বৈষম্য থাকবে না। কেউ দশ তলায় কেউ নিচতলায় থাকবে সেটা আর হবে না।

তিনি বলেন, আমরা ইসলামের পক্ষে, বাংলাদেশের পক্ষে থাকতে চাই। ইসলামকে বিজয় করার জন্য চেষ্টা করতে হবে। ঐক্যবদ্ধ থাকলে ইসলাম আগামীতে ক্ষমতায় যাবে ইনশাআল্লাহ। যথাসময়ে নির্বাচন দিতে হবে। কোনো ষড়যন্ত্র দেশের মানুষ মানবে না। হুমকি ধমকি চলবে না। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সরকারে গঠন করতে হবে।

৮ দলের প্রধানদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির আমির অধ্যক্ষ মাওলানা সরওয়ার কামাল আজিজী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহ-সভাপতি ও মুখপাত্র ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ প্রধান এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির চেয়ারম্যান এডভোকেট এ কে এম আনোয়ারুল ইসলাম চাঁন।

সমাবেশে ৮ দলের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির এটিএম আজহারুল ইসলাম, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির নায়েবে আমির আলহাজ্ব মাওলানা আব্দুর রহমান চৌধুরী, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. এএইচএম হামিদুর রহমান আজাদ, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান মুন্সি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব আলাউল্লাহ আমিন, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব আল্লামা মুফতি মুসা বিন ইজহার, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা আলী উসমান, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান, খেলাফত মজসিলের যুগ্ম মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সাল, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক আহসানুল্লাহ ভুঁইয়া, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মুফতি রেজাউল আববার, খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মহিউদ্দিন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরীর আমির মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চট্টগ্রাম মহানগরী আমির মুহাম্মদ জান্নাতুল ইসলাম, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির চট্টগ্রাম মহানগরী সহ-সভাপতি এডভোকেট আব্দুল মোতালেব, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি আবু মুজাফফর মোহাম্মদ আনাছ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস চট্টগ্রাম মহানগর আমির মাওলানা এমদাদ উল্লাহ সোহাইল, খেলাফত মজলিস চট্টগ্রাম মহানগরী সভাপতি অধ্যাপক খুরশিদ আলম এবং বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি চট্টগ্রাম মহানগর আমির মাওলানা জিয়াউল হোসাইন।

পিএস

Link copied!