মেহেরপুরে বিষাক্ত সাপের উপদ্রব

  • মেহেরপুর প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৭, ০১:৩৩ পিএম
মেহেরপুরে বিষাক্ত সাপের উপদ্রব

মেহেরপুর: বিষধর সাপের ছোবলে মেহেরপুরের গাংনীতে এক সপ্তাহে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় লোকজন বেশ কয়েটি সাপ মেরেও ফেলেছেন। প্রায় দুই যুগ এমন বিষাক্ত সাপের আবির্ভাবে জনমনে আতংক বিরাজ করছে। সাপের ভয়ে ওই এলাকার মানুষ আতংকিত।  

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গাংনী পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড পশ্চিম মালসাদহ গ্রামের নুর ইসলাম ওরফে নুরু কসাইকে (৫৫) গত ৫ সেপ্টেম্বর ভোরে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় বাম হাতের আঙ্গুলে সর্প দংশন করে। ওঝাঁ ও হাসপাতালে চিকিৎসার পর ওইদিন সন্ধ্যায় তার মৃত্যু হয়। অবশ্য সাপটিকে ধরতে সক্ষম হন নুরুর পরিবারের লোকজন। এর আগে ১ সেপ্টেম্বর ভোরে নুরু কসাইয়ের প্রতিবেশী সোহাগ কসাইয়ের শ্যালিকা বিলকিছ খাতুন (২০) ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় সর্প দংশনে মারা যায়। পরিবারের লোকজন সাপটিকে দেখতে পান। তবে ধরতে পারেননি। নুরুর বাড়ি থেকে যে সাপটি ধরা হয় তার মতই একটি সাপে বিলকিছকে দংশন করে বলে উভয় পরিবার একমত হয়।

নুরু কসাইয়ের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, সেই সাপ একটি কৌটার আটকে রাখা হয়েছে। লম্বায় আনুমানিক আড়াই থেকে তিন ফুট। দেখতে সরু। দেহের চেয়ে মাথা কিছুটা চিকন। তবে হা করলে মুখ বেশ বড় হয়। পেটের অংশ সোনালী-সাদা। ফনা তোলে না কিন্তু জিহ্বা বের করে। পিঠে নীল রংয়ের উপরে সাদা ফোটা ফোটা দাগ। যা তিল দাগের মতই।
নুরু কসাইয়ের প্রতিবেশী হাফিজুর রহমান (৫৫) বলেন, ধরা পড়া সাপটি ছোটবেলায় আমরা ‘চকচকে বোড়া’ ও ‘চন্দ্র বোড়া’ সাপ নামে চিনতাম। অনেক বছর ধরে এ সাপের উপস্থিতিতি দেখিনি। কোনো আগন্তুক দেখলে লাফিয়ে লাফিয়ে চলে এ প্রজাতির সাপ। নুরু কসাইয়ের বাড়িতে যেটি ধরা হয়েছে তা বাচ্চা বয়সী। পূর্ণ বয়স্ক সাপ ১০ ফুট লম্বা হয়। ফনা তোলে না। তবে ছোবল দেয়। ছোটবেলায় আমরা অনেক মানুষ এ সাপের দংশনে মারা যেতে দেখেছি।
 
হাফিজুর রহমানের প্রতিবেশী শহিদুল ইসলাম (৪০) বলেন, গত বছর আমার শোয়ার ঘরে ওই প্রজাতির একটি সাপ দেখতে পায়। লম্বায় ৪/৫ ফুট হবে। মেরে ফেলতে সক্ষম হয়েছিলাম। গত বছর থেকে সাপটি এলাকায় দেখা যাচ্ছে। নুরু কসাই ও তার প্রতিবেশী বিলকিছ খাতুনের মৃত্যুতে আমরা নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছি। আমাদের গ্রামের পূর্ব দিকে মালসাদহ খাল। পশ্চিমের মাঠে পানিতে ভরা। তাই সাপ বসতবাড়িতে উঠে আসছে বলে ধারণা করছি।

পূর্ব মালসাদহ গ্রামের কৃষক খলিলুর রহমান বলেন, গত ৩ সেপ্টেম্বর রাতে আমরা চেংগাড়া পেট্রল পাম্পের সামনের মাঠে মাছ ধরতে যায়। গত বছর শহিদুলের বাড়িতে যে সাপ মারা হয় তারই মত দেখতে একটি সাপ মারতে সক্ষম হই।
পূর্ব মালসাদহ গ্রামের বয়োবৃদ্ধ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত এ জাতের সাপ নিশাচর। দিনের বেলা তেমন দেখা যায় না। ব্যাঙ কিংবা ইঁদুরের পিছু নিয়ে বসতবাড়িতে উঠে আসে। এ সাপের বিষ ভয়ানক। দংশন করলে চিকিৎসার জন্য বেশি সময় দেয় না। অনেক অনেক বছর আগে গ্রামে এর উপস্থিতি দেখেছেন বয়োবৃদ্ধরা।

বিভিন্ন ওয়েব সাইট ঘেটে জানা গেছে, নুরু কসাইয়ের বাড়িতে ধরা পড়া ও গত বছর শহিদুল ইসলামের বাড়িতে মেরে ফেলা সাপ ‘কমন ক্রেট’ বা ‘শখ্নিনী’ জাতের সাপ হতে পারে। তাই যদি হয়- তাহলে এটি ভয়ানক বিষাক্ত সাপ। তবে এর জাত নির্ণয় করে প্রয়োজনীয় প্রতিকার ও চিকিৎসার বিষয়টি নিয়ে দ্রুত কাজ করার তাগিদ অনুভব করছেন ভুক্তভোগী গ্রামবাসী।

জানতে চাইলে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের কাছে বিষধর ও অবিষধর সাপ এ দু’ধরনের এন্টি ভেনম রয়েছে। এন্টি ভেনম দেয়ার পরও নুর ইসলাম ওরফে নুরু কসাইয়ের মৃত্যু কিভাবে হয়েছে তা চিহ্নিত করতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।

গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফ-উজ-জামান বলেন, বিষধর সাপের আবির্ভাবের খবর উদ্বেগজনক। বন বিভাগের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত প্রতিকারের উদ্যোগ নেয়া হবে।    

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Link copied!