প্রথম পর্ব

কুমিল্লায় প্রাথমিকেই ঝরে পড়েছে ৬ হাজার শিশু

  • বিল্লাল হোসেন রাজু | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১০, ২০১৭, ০৩:৪৬ পিএম
কুমিল্লায় প্রাথমিকেই ঝরে পড়েছে ৬ হাজার শিশু

কুমিল্লা : ‘সবার জন্য শিক্ষা, চলো সবাই স্কুলে যাই’। শিক্ষা আমাদের মৌলিক অধিকার। সরকারও বেশ গুরুত্ব দিচ্ছে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার উপর। কিন্তু সরকারের এতো আয়োজন থাকলেও কমছেনা ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা। বরং ঝরে পড়ার মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে।

শিক্ষাবিদরা বলছেন শিক্ষার্থীদের পাঠদানে শিক্ষকদের যথেষ্ট অবহেলা, শিক্ষক সংকট, ভবন সংকট, দারিদ্র্যতা, অভিভাবকদের সচেতনতার অভাব, শিশু শ্রম, বাল্যবিয়ে সহ আরো বেশ কিছু কারণে অধিকাংশ ছেলে মেয়ে প্রাথমিক পর্যায় থেকেই ঝরে পড়ছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলার আদর্শ সদর উপজেলায় ঝরে পড়ার সংখ্যা ২শ ২ জন, লাকসামে ১শ ৪৪ জন, দেবিদ্বারে ১ হাজার ৯০ জন, মুরাদনগরে ৭শ ৪০ জন, দাউদকান্দিতে ১শ ১৬ জন, চৌদ্দগ্রামে ৩শ ৬৪ জন, ব্রাক্ষনপাড়ায় ৩শ ১৫, বুড়িচং ৩শ ২১জন, বরুড়ায় ২শ ৫১জন, চান্দিনায় ৩শ ৭৬ জন, হোমনায় ১শ ২৭ জন, নাঙ্গলকোটে ৬শ ৪৩ জন, মেঘনায় ৮৭ জন, মনোহরগঞ্জে ৫শ ৮০ জন, তিতাস ৪শ ১৪ জন ও সদর সক্ষিণ ২শ ৭৮ জন সহ মোট ঝরে পড়েছে ৬ হাজার ৩শ ৬ জন শিক্ষার্থী।

কুমিল্লা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ২০১৭ সালের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ সালে ১ম শ্রেণিতে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১লাখ ৫৪ হাজার  ৩শ ৯৫জন। ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত ৫ম শ্রেণির সমাপনী পরিক্ষায় অবতীর্ণ শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১লক্ষ ২৩ হাজার ১শ ৫৩ জন। এর মধ্যে সমাপনী পরিক্ষায় অংশ নিতে পারেনি ৩১ হাজার ২শ ৬০জন। এদের মধ্যে ২য়, ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণিতে পুনরাবৃত্তি হয়েছে ২৬ হাজার ৮শ ৮১ জন শিক্ষার্থী। শুধু ২০১৬ সালেই ৫ম শ্রেণিতে পুনরাবৃত্তি হয়েছে ১হাজার ৯শ ২৭জন। শুধু গত বছর পড়ালেখা থেকে ঝরে পড়েছে ৬ হাজার ৩শ ৬জন শিক্ষার্থী। যার শতকরা হার ৪.০৮ শতাংশ।

কুমিল্লা জেলার শিশু জরিপ সংক্রান্ত সর্বশেষ তথ্য থেকে জানা যায়, ৫বছর থেকে ১০ বছরের মধ্যে বিশেষ চাহিদা ব্যতিত জেলায় শিশুর সংখ্যা ১০ লাখ ৪২ হাজার ৪শ ৪৭জন। এর মধ্যে ভর্তিকৃত শিশু শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১০লক্ষ ৩৯হাজার ২শ ৯৭ জন । এদের মধ্যে অভর্তিকৃত শিশুর সংখ্যা ৩হাজার ১শ ৫০ জন শিশু। জেলায় বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন জরিপকৃত শিশুর সংখ্যা ৩হাজার ১শ ২৮ জন। এদের মধ্যে ভর্তিকৃত শিশুর সংখ্যা ২শ ৬শ ৫০ জন। ৪শ ৭৮ জন অভর্তিকৃত শিশু।

ঝরে পড়া রোধে বিনামূল্যে বই বিতরণ করা হচ্ছে। দেয়া হচ্ছে উপবৃত্তিও। তবে শিক্ষক ও কর্তৃপক্ষে অবহেলা এবং অধিকাংশ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি নিয়ে বিরোধ থাকায় বিদ্যালয়ে প্রশাসনিক কার্যক্রম ও পাঠদানে অনেকাংশে ব্যহত হচ্ছে।  এর সাথে সাথে ঝরে পড়ার পশ্নে যুক্ত হচ্ছে অর্থনৈতিক সমস্যা, শিক্ষাবৈষম্য ও সামাজিক অবক্ষয়ের মতো অনেক সমস্যাকে  দায়ী করছেন শিক্ষাবিদরা।

ভিক্টোরিয়া কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ আবু তাহের বলেন, প্রতি বছর যখন শিশু অধিকার দিবস আসলেই এসব শিশুদের নিয়ে আলোচনা হয়। আবার দিবস শেষ তার সাথে সাথে শিশুদের অধিকারের দাবিও শেষ হয়ে যায়।  আসে তখন প্রশাসনের সর্বস্তরের লোকজন নড়েচড়ে বসে শিশুদের জয়গান করতে। পরদিনই যেন সব কিছু অতীত হয়ে যায়। শিশুদের কথা নিয়ে কেউ আর ভাবেনা। পথ শিশু বা টোকাই সহ জেলাজুড়ে যখন প্রতিদিনই বাড়ছে শিশুর সংখ্যা তখন সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নিস্ক্রিয়তা ভাবিয়ে তুলেছে আগামীর কর্ণধারা কতটা নিরাপদ!

এ ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ নূরুল ইসলাম বলেন, ঝরে পড়া রোধে বছরের প্রথমে বিনামূল্যে বই, দুপুরের খাবার ও উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া বাল্যবিয়ে রোধও রয়েছে নানা সচেতনতামূলক কার্যক্রম। সাথে সাথে সব পর্যায়ের শিশুকে শিক্ষার আওতায় আনতে প্রচেষ্টা চলছে। নিশ্চিতভাবে বলতে পারি শিক্ষার অধিকার থেকে কেউ বঞ্চিত হবে না। তিনি আরো বলেন, কোথাও কোথাও ভালো পাঠদান না হওয়ার যে অভিযোগ আছে। আমরা ক্ষতিয়ে দেখবো । সাথে সাথে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Link copied!