পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের এখনই আদর্শ সময়: সুমিত পোদ্দার

  • আবদুল হাকিম | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মে ৪, ২০২৩, ০৮:৩৬ পিএম
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের এখনই আদর্শ সময়: সুমিত পোদ্দার

বাংলাদেশ ফাইন্যান্স ক্যাপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুমিত পোদ্দার।

ঢাকা: দেশের শেয়ারবাজারে চলছে উত্থান-পতন। ফ্লোর প্রাইস দিয়েও যেন থামানো যাচ্ছে না মন্দাভাব। এতো চ্যালেঞ্জের মধ্যেও বাজারের উন্নয়ন নিয়ে কাজ করছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ফাইন্যান্স ক্যাপিটাল। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দিয়েছেন সুমিত পোদ্দার। নতুন দায়িত্ব পাওয়ার পর পুঁজিবাজারের বিভিন্ন দিক এবং তার প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পনার বিষয়ে সোনালী নিউজের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সোনালী নিউজের স্টাফ রিপোর্টার আবদুল হাকিম।

সোনালী নিউজ: শেয়ারবাজারে এখন বিনিয়োগের আদর্শ সময় কিনা?
সুমিত পোদ্দার: দেশের শেয়ারবাজারে বর্তমান সময়টি বিনিয়োগের জন্য আদর্শ কিনা, এর উত্তরে আমি বলব, বর্তমান মূল্যসীমাই বিনিয়োগের সেরা সুযোগ। তবে সুযোগ কতদিনের জন্য তা বলা মুশকিল। এ প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিক ও দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে তা আমরা জানি না। কিন্তু নিচের ধাপ থেকে শিখরে যেতে কিছুটা সময় লাগে। বিনিয়োগকারীদের সেই সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে, ভালো রিটার্ন পেতে।

সোনালী নিউজ: পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারীদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
সুমিত পোদ্দার: আমরা যখন বিনিয়োগ করি, তখন আমরা আমাদের যথাযথ পরিশ্রম করি। উদাহরণ স্বরূপ, ফিক্সড ডিপোজিট করার ক্ষেত্রে কোন ব্যাংক ভালো, তার ফিনান্সারদের অবস্থা কেমন, কীভাবে রিটার্ন দেয় ইত্যাদির পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করি। পুঁজিবাজারের জন্যও এই বিশ্লেষণ করা দরকার। যাতে আমরা বুঝতে পারি কোন কোম্পানির শেয়ার কিনছি। কোম্পানির ইপিএস প্রবণতা কেমন ছিল, কেন ইপিএস বাড়ছে, এগুলোর একটু বিশ্লেষণ প্রয়োজন। অনেক সময় বিনিয়োগকারীদের সময়ের অভাবে তা করা হয় না। আমরা এই দিকে বিনিয়োগকারীদের সাহায্য করার জন্য একটি মধ্যস্থতাকারী। আমার পরামর্শ হবে পুঁজিবাজারে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে বিনিয়োগ করুন এবং নিশ্চিতভাবে রিটার্ন অনেক বেশি হবে। এ ক্যাটাগরির কোম্পানিগুলো ভালো লভ্যাংশ দেয়। যদি আমরা সেই বৃদ্ধি এবং একই সময়ে বাজারের চাহিদা ও সরবরাহের জায়গাটা ধরে রাখতে পারি, তাহলে আমরা দীর্ঘমেয়াদে লাভবান হতে পারি।

সোনালী নিউজ: আপনি কি ধরনের পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যেতে চান?
সুমিত পোদ্দার: আমরা কর্পোরেট অ্যাডভাইজরিতেও কিছু কাজ করতে চাই। আপনি জানেন, বাংলাদেশে কিছু বড় কোম্পানি একীভূত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, রবি-এয়ারটেল, ইউনিলিভার-জিএসকে ইত্যাদি। আমরা আশা করি ভবিষ্যতে এরকম অনেক কোম্পানি একীভূত হবে। আমরা এই সম্ভাবনাময় দিকে কাজ করতে চাই। আমরা সাধারণত বিবেচনামূলক এবং অ-বিবেচনামূলক পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করি। এখন আমরা বিবেচনামূলক পোর্টফোলিওগুলিতে ফোকাস বাড়াতে চাই, যাতে আমরা বাজারের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারি। এটি ছাড়াও খুচরা ক্লায়েন্টদের জন্য কিছু পণ্য চালু করেছি। এছাড়াও মিডরেঞ্জ বিনিয়োগকারীদের জন্য কাজ করছি। আমরা অনেক গবেষণা করতে চাই। এটি বাজারের উন্নয়নের পাশাপাশি আমাদের গ্রাহকদের সহায়তা করবে। আমরা বাজার এবং সামগ্রিক অর্থনীতি সম্পর্কে মাসিক, ত্রৈমাসিক এবং বার্ষিক গবেষণাপত্র প্রকাশ করার পরিকল্পনা করছি।

সোনালী নিউজ: পুঁজিবাজারে ফ্লোর প্রাইসকে আপনি কিভাবে দেখছেন?
সুমিত পোদ্দার: কোভিড-১৯ মহামারীর পর বিশ্বব্যাপী সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। যেহেতু নিয়ন্ত্রক সংস্থা মনে করে যে ফ্লোর প্রাইস দেওয়া বাজারকে নিম্নমুখী প্রবণতা থেকে রক্ষা করতে পারে। সেদিক থেকে নিরাপত্তার কারণে নিয়ন্ত্রক এটি দিয়েছে। তাই বড় স্বার্থ রক্ষায় এই ফ্লোর প্রাইজ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করা। কিন্তু আমি আপনার সাথে একমত যে ফ্লোরের দাম সামগ্রিক দিক থেকে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগকারীদের জন্য উপকারী নয়। তবে বাজারের পরিস্থিতি উন্নতি হলে এই সমস্যা বেশি দিন থাকবে না। এখন অপেক্ষা করতে হবে বাজারের সার্বিক উন্নতি বা বাজার পরিস্থিতি ভালো হওয়ার জন্য। আশা করছি অর্থনৈতিক মন্দা যেহেতু কেটে যাচ্ছে দেশের শেয়ারবাজারের অবস্থাও স্বাভাবিক হয়ে যাবে। 

সোনালী নিউজ: দেশের পুঁজিবাজারের অবস্থা কিভাবে ভালো করা যেতে পারে?
সুমিত পোদ্দার: ইতোমধ্যে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে বেশকিছু সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে। তবে যেমন আশঙ্কা করা হয়েছিল, সেরকম গুরুতর প্রভাব পড়েনি। দেশের অর্থনৈতিক বিভিন্ন সূচকও তাই বলে। তবে আমরা আশা করি ভবিষ্যতে যত বাধাই আসুক না কেন, বাংলাদেশ তা মোকাবিলা করবে এবং ২০২৪ সালের মধ্যে আমরা আরও ভালো কিছু পাব। ইতোমধ্যে সরকার আমাদের অনেক সহযোগিতা দিয়েছে। ভবিষ্যতেও পলিসি লেভেল থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পাব বলে আমরা আশাবাদী। পাশাপাশি সব সেক্টরের লোকদের সহযোগিতা এই বাজারে অনেক প্রয়োজন। রেগুলেটরিবডি তাদের মতো কাজ করছে। আমরা আমাদের জায়গা থেকে কাজগুলো ঠিক ঠাক করলে এবং বিনিয়াগকারীদের উৎসবমুখর অংশগ্রহণও এই বাজারে বড় একটা ভুমিকা রাখতে পারে। স্টেকহোল্ডাররা তাদের মতো সহযোগিতা তো করবেই। সার্বিকভাবে বাজার সুষ্ঠু রাখতে সবার অংশগ্রহণ যেমন জরুরি তেমনি বিনিয়োগকারীদের আস্থা তৈরি করাও গুরুত্বপূর্ণ।

সোনালী নিউজ: বাংলাদেশ ফাইন্যান্স ক্যাপিটালের এমডি ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পেয়ে আপনার অনুভূতি কি? 
সুমিত পোদ্দার: প্রথমত বলতে চাই, বাংলাদেশ ফাইন্যান্স’র অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হলো বাংলাদেশ ফাইন্যান্স ক্যাপিটাল। এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে খারাপ লাগার কিছুই নেই। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের পথচলা ২২ বছরের। এ সময়ে তৈরি হয়েছে গ্রাহকের বিশ্বাযোগ্যতা। আছে প্রতিষ্ঠানটির ওপর ভরসাও। এর পাশাপাশি যারা এ প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা, তাদের হাত ধরেই বাংলাদেশে অনেক ব্যবসার গোড়াপত্তন হয়েছে। তাদের ব্যবসার ইতিহাস ২০০ বছরের পুরোনো। ওই কোম্পানিরই একটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ফাইন্যান্স ক্যাপিটাল। নতুন হলেও এ প্রতিষ্ঠানের বয়স প্রায় ১০ বছর। সার্বিকভাবে এ কোম্পানির অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, শক্তি ও বিনিয়োগকারীদের সন্তুষ্টির দিক থেকে চিন্তা করলে খারাপ লাগার কোনো জায়গা নেই। এটা ভালো লাগারই জায়গা।

সোনালী নিউজ: নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে বিডি ফাইন্যান্স ক্যাপিটালকে কোথায় নিতে চান?
সুমিত পোদ্দার: আমাদের প্রতিষ্ঠানের পেছনের দিক হল বাংলাদেশ ফাইন্যান্স, যার খ্যাতি ২২ বছরের। বাংলাদেশ ফাইন্যান্স ক্যাপিটাল ২০১২ সালে চালু হয়। এখানেও প্রায় ১০/১১ বছরের যাত্রা। আমাদের যে আর্থিক স্থিতিশীলতা আছে, স্পন্সরদের যে সদিচ্ছা আছে, বাজারের প্রতিযোগী হিসাবে আমরা যদি অন্য প্রতিযোগীদের কথা চিন্তা করি, আমরা মোটেও পিছিয়ে নেই। আমরা অবশ্যই এক ধাপ এগিয়ে আছি। সবার আগে আমরা সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাব। একটি শক্তিশালী টিম তৈরি করা হবে, যার সাথে আমরা সারিবদ্ধভাবে এগিয়ে যাব। দল জিতলে আমরা জিতব। তাই আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার হবে টিম ডেডিকেশন। দ্বিতীয় অগ্রাধিকার হল গ্রাহকের সম্পূর্ণ পরিষেবা নিশ্চিত করা, তা বিনিয়োগ ব্যাংকিং, পোর্টফোলিও পরিচালনা বা গবেষণা বেস হোক। আমি আশা করি আগামী ৫ বছরে আমরা একটি শীর্ষ মার্চেন্ট ব্যাংক হব।

আমাদের আরেকটি পরিকল্পনা আছে, তা হল আমরা শুধু পুঁজিবাজারের উন্নয়নে কাজ করব না, বিশ্বব্যাপী সুনাম তৈরিতেও কাজ করব। এছাড়া আরেকটি প্ল্যান আছে। আপনি হয়তো জানেন, সরকার ৫/১০ বছরের পরিকল্পনা নিয়ে অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এসব অবকাঠামো বাস্তবায়নে সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। আমরা জানি যে সরকারী প্রকল্পের অর্থায়নের উৎস তাদের নিজস্ব তহবিল, ব্যাংক এবং এনবিএফআই বা কিছু বিদেশী উৎস থেকে। যদি এই তহবিলটি একটি সহযোগিতা মডেলে যেতে পারে তবে আরও প্রকল্প তহবিল আরও উপকারী। উদাহরণস্বরূপ, আমরা সরকারের জন্য একটি তহবিল পরিকল্পনা করেছি। এতে করে আমরা স্থানীয়ভাবে একটি স্বনামধন্য কোম্পানিতে পরিণত হব। সরকারও এই জায়গা থেকে লাভবান হবে।

সোনালী নিউজ: ফান্ড রেইজিংয়ের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে কিভাবে সহযোগিতা করবেন?
সুমিত পোদ্দার: যদি কোনো কোম্পানির অর্থের (ফান্ডিং) প্রয়োজন হয় তাহলে আমরা ছোট-বড় যে কোনো ধরনের কোম্পানির ফান্ড তার অর্থনৈতিক অবস্থা যাচাই করে তাদের সেবা দিতে চাই। ইক্যুইটির মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করতে চাইলে আইপিওর মাধ্যমে ওই ফান্ড রেইজ করতে হয়। কিন্তু আইপিও ছাড়াও ইক্যুইটির মাধ্যমে ফান্ড রেইজ করা যায়। এ জায়গাটাতেই আমরা কাজ করতে চাই। যেমন- বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে আসা, প্রয়োজনে সে জায়গায় পরামর্শক হিসেবে কাজ, ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট নিয়েও কাজ হবে এবং মার্কেটের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।

সোনালী নিউজ: বাংলাদেশের ফাইন্যান্স ক্যাপিটাল গ্রাহকদের কিভাবে আকৃষ্ট করবে?
সুমিত পোদ্দার: বাংলাদেশ ফাইন্যান্স ক্যাপিটাল লিমিটেড হল স্বনামধন্য নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের একটি সাবসিডিয়ারি কোম্পানি, যা বিডি ফাইন্যান্স নামে পরিচিত। আমরা একটি মার্চেন্ট ব্যাংক হিসাবে সেবা প্রদান করি। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অধীনে ৫৫টিরও বেশি মার্চেন্ট ব্যাংক রয়েছে, আমরা তাদের মধ্যে একটি। আমাদের পরিকল্পনা হল ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকিং থেকে পোর্টফোলিও ম্যানেজমেন্ট, সেইসাথে গবেষণা পর্যন্ত ৩৬০ ডিগ্রি পরিষেবা প্রদান করা। আমরা ক্লায়েন্টদের সহযোগিতা করতে চাই, কারণ তারা ব্যবসার জন্য তহবিল এবং সামগ্রিক পরামর্শ পায়।

সোনালীনিউজ/এএইচ/আইএ

Link copied!