সহজ ভ্যাট ব্যবস্থাপনা ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি চান ব্যবসায়ীরা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক:  | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: এপ্রিল ২৬, ২০২৫, ০৮:০১ পিএম
সহজ ভ্যাট ব্যবস্থাপনা ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি চান ব্যবসায়ীরা

ঢাকা: বর্তমান অস্থিতিশীল বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক পেক্ষাপটের কারণে আমাদের স্থানীয় অর্থনীতিতে অস্থিরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ অবস্থায় সাম্প্রতিক সময়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও ব্যবসায়িক হয়রানি, ব্যাংক ঋণের সুদের উচ্চ হার, আয়কর ও ভ্যাট প্রদানে জটিলতা এবং অসহনীয় যানজটের কারণে ব্যবসা পরিচালনা ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি সার্বিকভাবে বিনিয়োগ পরিস্থিতি আশানুরূপ নয় বলে অভিমত জ্ঞাপন করেন ব্যবসায়ীরা।

শনিবার (২৬ এপ্রিল) ঢাকা চেম্বার আয়োজিত “ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, আইন-শৃঙ্খলা, আয়কর ও ভ্যাট, মূল্যস্ফীতি, উচ্চ সুদ হার এবং যানজট” বিষয়ক মতবিনিময় সভায় অংশ নেন ব্যবসায়ী প্রতিনিধিবৃন্দ।

অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট, দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যবসা-বাণিজ্যে উদ্ভূত নানা চ্যালেঞ্জ, কর ও ভ্যাট ব্যবস্থার জটিলতা, বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনার সংকট, আমদানি-রপ্তানির প্রক্রিয়াগত দীর্ঘসূত্রিতা এবং সর্বোপরি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। যার ফলে বিশেষকরে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন আমাদের এসএমইখাতের উদ্যোক্তারা। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে একটি নিরাপদ, স্থিতিশীল ও পূর্বানুমানযোগ্য ব্যবসায়িক পরিবেশ গড়ে তোলার কোন বিকল্প নেই বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। 

তাসকীন আহমেদ বলেন, ডিসিসিআই’র পক্ষ হতে আসন্ন বাজেটে উৎসে করের হার যৌক্তিকভাবে হ্রাস করা, মূসক হার সিঙ্গেল ডিজিটে নির্ধারণ ও অনানুষ্ঠানিকখাতের জন্য ১ শতাংশ হারে মূসক নির্ধারণ এবং ভ্যাট আপ চালুর প্রস্তারের পাশাপাশি সামগ্রিক রাজস্ব ব্যবস্থাপনাকে অটোমেশনের আওতায় নিয়ে আসার প্রস্তাব করা হয়েছে। যার মাধ্যমে ব্যবসা সহায়ক পরিবেশের উন্নয়ন হবে, সেই সাথে বাড়বে সরকারের রাজস্ব আহরণ। 

তিনি আরো বলেন, শিল্পায়নের গতিধারা অব্যাহত রাখতে উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণ প্রাপ্তি প্রক্রিয়ার সহজীকরণ, আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে অটোমেশন বাস্তবায়নের মাধ্যমে গতিশীলতা আনায়ন এবং সরকরের পক্ষ হতে যুগোপযোগী নীতি সহায়তার কোন বিকল্প নেই। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা কর দিতে চায়, কিন্তু আমরা কোনও হয়রানি চাই না। আইন-শৃঙ্খলা সম্পর্কে তিনি বলেন, যে কোন স্তরে ব্যবসায়ীক কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে আইনের শাসন এবং এর যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিতের কোন বিকল্প নেই।

বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক (এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রাম্স ডিপার্টমেন্ট) মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিশেষ করে এসএমই খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংক গত ১৭ই মার্চ একটি মাস্টার সার্কুলার প্রদান করা হয়েছে, যেখানে এসএমইদের ঋণ প্রাপ্তির সীমা বৃদ্ধির পাশাপাশি মেয়াদী ঋণের সময়সীমা ৫ বছর থেকে ৭ বছরে উন্নীত করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন স্কীমের আওতায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মোট ২৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল রয়েছে, যেখানে এখাতের উদ্যোক্তারা সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ সুদে ঋণ সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন এবং নারী উদ্যোক্তাদের জন্য এ ঋণের হার মাত্র ৫ শতাংশ। তিনি উল্লেখ করেন, বেসরকারিখাতে ঋণ প্রবাহ বৃদ্ধিকল্পে ক্যাশ রিজার্ভ রেসিও (সিআরআর) ৫.৫০ শতাংশ হতে ৩ শতাংশ এ নামিয়ে আনা হয়েছে।

কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, ঢাকা (পশ্চিম)-এরে অতিরিক্ত কমিশনার মোঃ মিলন শেখ বলেন, সরকারের মোট রাজস্বের প্রায় ৮০ শতাংশ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে আহরণ করতে হয়, যা অত্যন্ত দূরূহ একটি কাজ। তিনি জানান, মোহাম্মদপুর ও আশাপাশের এলাকায় এবছর ভ্যাটের প্রবৃদ্ধি প্রায় ১৫-২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং গত ৩মাসে এ অঞ্চলের ৯০ শতাংশের বেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাটের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। তিনি বলেন, ভ্যাটের আওতা এবং ভ্যাট আদায় বৃদ্ধিতে মোবাইল অ্যাপ প্রবর্তনের প্রস্তাব সরকার ইতিবাচক ভাবে বিবেচনা করতে পারে। ভ্যাটের বিষয়টিকে জটিল ভেবে দূরে না থেকে এ বিষয় জানার পরিধি বাড়ানোর জন্য তিনি ব্যবসায়ীদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।

ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী এবং সহ-সভাপতি মো: সালেম সোলায়মান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠান শেষে ২৭টি প্রতিষ্ঠানকে ডিসিসিআই’র নতুন সদস্যপদ প্রদান করা হয় এবং ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধির হাতে ডিসিসিআই’র মেম্বারশীপ সার্টিফিকেট হস্তান্তর করেন।

এএইচ/আইএ

Link copied!