বীমা দাবি পরিশোধে কার্যকরী পদক্ষেপ নেই আইডিআরএ’র

  • আবদুল হাকিম  | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মে ১৮, ২০২৫, ০৬:১৬ পিএম
বীমা দাবি পরিশোধে কার্যকরী পদক্ষেপ নেই আইডিআরএ’র

ঢাকা: অসুস্থতা কিংবা দুর্ঘটনাসহ বিশ্বজুড়ে মানুষের ভরসার কেন্দ্র ‘বিমা’। বিমা পলিসি করা থাকলেই হাসপাতালের বিল পরিশোধ বা দুর্ঘটনার ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কিংবা সময়মত প্রাপ্য টাকা বুঝে নিতে কোনো চিন্তা করতে হয় না গ্রাহককে। 

কিন্তু বাংলাদেশের বিমা খাত এখনো সেই ভরসার জায়গা হয়ে উঠতে পারেনি। বিপদগ্রস্ত গ্রাহক বিমা দাবি নিয়ে পায়ের জুতা ক্ষয় করে ফেললেও অর্থ পরিশোধ নিয়ে গড়িমসি শেষ হয় না সংশ্লিষ্ট বিমা কোম্পানির।

এদিকে দেশের পট পরিবর্তন হলেও তার ‘ছোঁয়া’ লাগেনি বীমা খাতে। দেশের প্রতিটি খাতে যখন সংস্কার হচ্ছে, সেখানে বীমা খাতে হতাশায় ভুগছেন সাধারণ গ্রাহকরা। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পরে আইডিআরএ’র নেতৃত্বে আসা কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন স্বয়ং খাত সংশ্লিষ্টরা। 

তারা বলছেন, যেখানে নিয়ন্ত্রক সংস্থা অনিয়ম করা কোম্পানিগুলোকে নিয়ম মেনে চলতে বাধ্য করা উচিত, সেখানে দুই-একটা চিঠি ইস্যু বা মিটিং করেই শেষ। অনেক কোম্পানি মানছে না আইডিআরএ'র সিদ্ধান্ত। দিন যত যাচ্ছে অনিষ্পন্ন দাবির পরিমাণ শুধু বাড়ছে। যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত নিরীহ গ্রাহকরা।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘যেসব কর্মকর্তারা বিগত দিনে বিভিন্ন কোম্পানির অর্থ লুটে অভিযুক্ত তাদের দিয়ে ভালো কিছু আশা করা যায় না। আইডিআরএ'র মত জায়গায় প্রয়োজন যার পেছনে কোন খারাপ রেকর্ড নেই এমন লোক। ক্লিন ইমেজ থাকলে খাতের প্রয়োজনে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পেছনে তাকাতে হবে না।’

৩৫টি জীবন বীমা কোম্পানির অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) দেওয়া তথ্য মতে, ২০২৪ সালে দেশের জীবন বীমা খাতে মোট ১২ হাজার ৯৬৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকার বীমা দাবি জমা পড়েছে। 

এর মধ্যে ৩৫টি কোম্পানি মিলে পরিশোধ করেছে ৮ হাজার ৫৯০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। বছর শেষে অনিষ্পন্ন বীমা দাবির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৩৭৫ কোটি ৬ লাখ টাকা।

এছাড়াও ৪৬ টি নন-লাইফ বিমা কোম্পানির অনিরীক্ষিত সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সাধারণ বিমা কোম্পানির কাছে গ্রাহকের বিমা দাবি ছিল ৩ হাজার ৮৭১ কোটি ৯২ লাখ টাকা। এর মধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে ১ হাজার ২৩৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা। ফলে অনিষ্পন্ন আছে ২ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকার বিমা দাবি। এ ক্ষেত্রে দাবি নিষ্পত্তির হার মাত্র ৩২ শতাংশ। সেই হিসাবে ৬৮ শতাংশ বিমা দাবি পরিশোধ করেনি কোম্পানিগুলো।

অথচ বীমা আইন ২০১০ অনুযায়ী, গ্রাহক কোম্পানিতে বীমা দাবির আবেদন করার ৯০ দিনের মধ্যে তা নিষ্পত্তি করতে হয়। কিন্তু মাসের পর মাস, বছরের পর বছর পার হলেও কোম্পানিগুলো দাবি পরিশোধ করছে না।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাজ খাতের উন্নয়ণে জোরালো ভূমিকা রাখা। তবে আমরা দেখছি তার উল্টো। যেখানে দুর্বল কোম্পানিগুলো এক দিকে বীমা দাবি দিতে পারছে না। অন্যদিকে নতুন নতুন পলিসি করছে যা পরবর্তীতে বীমা দাবি পরিশোধ না করায় এই দায় আরো বাড়াচ্ছে। অথচ আইডিআরএ’র উচিত গ্রাহকের বীমা পরিশোধে কঠোর হওয়া এবং নতুন পলিসি না করার সিদ্ধান্তের ক্ষমতা প্রয়োগ করা। এভাবে চলতে থাকলে ক্রমেই বাড়বে অনিষ্পন্ন দাবির পরিমাণ যা বীমা খাতকে ভয়াবহ অবস্থায় নিয়ে যাবে।

জানা যায়, দীর্ঘদিন বীমা দাবি দিতে ব্যর্থ গোল্ডেন লাইফ।  গ্রাহকের চাপে প্রধান অফিস বন্ধ করে দিতে হয়েছে কোম্পানিটিকে। এ নিয়ে কোম্পানির বোর্ডের সাথে আইডিআরএ'র মিটিং করেও কোন সমাধান করতে পারেনি। এরফলে আইডিআরএ'র সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। 

গোল্ডেন লাইফের চেয়ারম্যানের ভাষ্য মতে কোম্পানির যথেষ্ট সম্পদ রয়েছে যা দিয়ে গ্রাহকের দেনা পরিশোধ সম্ভব। অথচ সম্পদ বিক্রি করে গ্রাহকের পাওনা পরিশোধে পদক্ষেপ নিতে আইডিআরএ'র ক্ষমতা থাকা সত্বেও নেই উদ্যোগ। 

এভাবে ভঙ্গুর অবস্থায় আছে বিমা খাতের আরো বেশ কিছু কোম্পানি। কিছু কোম্পানির মালিক পক্ষের অনিয়মের ফলে কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে। আইডিআরএ’র জোরালো পদক্ষেপ না থাকায় অনেক কোম্পানি গুরুত্বপূর্ণ চিঠি কিংবা জরিমানা পরিশোধেও সাড়া দিচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, প্রান্তিক সাধারণ মানুষ অল্প অল্প করে জমানো টাকায় বীমা পলিসি করেছে। স্বপ্ন ছিল ভবিষৎ জীবনকে সুন্দর করা। অথচ বছরের পর বছর টাকা জমিয়ে প্রাপ্তির খাতায় এক রাশ হতাশা। বীমা কোম্পারি দুয়ারে ঘুরতে ঘুরতে চলে যায় লম্বা সময় তবু নেই প্রাপ্তির আশা। এমন হাজারো সাধারণ বীমা গ্রাহকের অভিযোগ জমে আছে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্মকর্তাদের টেবিলেও। নেই কোনো সুরাহা।

বীমা দাবি পরিশোধে আইডিআরএ’র পদক্ষেপের বিষয়ে জানতে আইডিআরএ’র জনসংযোগ কর্মকর্তা (মিডিয়া কনসালটেন্ট) সাইফুন নাহার সুমিকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা দিলেও সাড়া দেননি।

এআর 

Link copied!