গোল্ডেন পাওয়া মেয়েকে পড়াতে হিমশিম খাচ্ছেন ইলিয়াছ 

  • ফেসবুক থেকে ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৮, ২০১৮, ০৫:১২ পিএম
গোল্ডেন পাওয়া মেয়েকে পড়াতে হিমশিম খাচ্ছেন ইলিয়াছ 

ঢাকা: অভাবের কারণে পড়ালেখা করতে পারেননি ইলিয়াছ শেখ। তার মেয়ে কালো মনি অনেক মেধাবি। জেএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে। কিন্তু সেই মেয়েকে পড়াতে হিমশিম খাচ্ছেন বাবা। এমন একটি বাস্তব গল্প ফেসবুক পেজে তুলে ধরেছেন সোহেল আহমেদ। সোনালীনিউজের পাঠকদের জন্য সেই গল্পটি তুলে ধরা হলো:

একজন ইলিয়াস শেখ। পাটি বিক্রি করা তার পেশা। সওদাগড় প্রতিপিছের দামের ওপর যে কমিশন দেন, তা দিয়ে চলে সংসার। প্রতিদিন তিন’শ থেকে ছয়’শ টাকা আয় করলেও তার সংসার চালানো দায়।

তিন ছেলে-মেয়েসহ ৫ সদস্যের হতদরিদ্র এ পরিবারের কালো মেয়েটি যে সমাজের আলোর প্রদিপ হবে তা কি কেউ ভেবেছে? জানতেন না বাবা ইলিয়াস শেখ নিজেও।

প্রতিবেশির দেয়া পোশাক পরে স্কুলে যেত কালো মনি। আত্ববিশ্বাসী কালো মেয়েটি গত বছর জেএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছিল। বর্তমানে দশম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছে।

যশোরের নড়াইলের কাশিপুর এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে অত্যন্ত গর্বের নাম কালো মনি। দারিদ্রকে হার মানানো শিক্ষিত হবার স্বপ্নে বিভোর এই মেয়েটির কথা সবার মুখে মুখে। লেখা পড়ায় ভালো বলে স্কুলের প্রধান শিক্ষক মেয়েটিকে বিনা মূল্যে শিক্ষা দান করিয়ে আসছিলেন।

জানতে চাইলে ইলিয়াস শেখ বলেন, আমি জীবনে কোনদিন স্কুলের বাড়ান্দায়ও পা দেইনি। কালো মনিটার মাথা ভালো শুনেছি। কিন্তু এত ভালো তা বুঝিনি। ওর স্কুলের জামা কাপড় পর্যন্ত বানায়া দিতে পারিনি। এ কথা যখন বলছিলেন, ইলিয়াসের চোখ দিয়ে তখন টলটল করে অশ্রু ঝড়ছিল।

তিনি জানান,৭১ এর যুদ্ধের সময় তার বয়স আনুমানিক ৬/৮ বছর। দেশে তখন একদিকে মানুষ মারার আতঙ্ক অপরদিকে অনাহারে কষ্টে কাটত রাত। একদিন বিকেলে হাটে গেলেন সরকারের ত্রাণ সংগ্রহ করতে। সবাই যখন লাইন দিয়ে দাড়িয়ে ত্রাণের জন্য অপেক্ষা তখনই পাকবাহিনি কয়েকজনের মাথা রামদা দিয়ে উড়িয়ে দিল। চারদিকে ছোটাছুটি। তারপর প্রতিবেশির বাড়ি আশ্রয় নিয়ে ভাতের মার খেয়ে খেয়ে কাটিয়ে দেন শৈসব কাল।

এরপর ধীরে ধীরে নিজেকে কর্মে নিয়োজিত করেন। যখন যে কাজ পেয়েছেন করেছেন। অভাবের ঘরে জন্মের পর বাবা মা দুজনকেই হারিয়ে বড় একা হয়ে যান ইলিয়াস।

গত দশ বছর যাবত পাটি বিক্রি করছেন। একটি এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা কিস্তি নিয়ে একটি ঘর বানিয়েছেন। সে জন্য সপ্তাহে সাতশত টাকা করে কিস্তি গুনতে হয়। এর মধ্যে আবার যমুনার ভাঙ্গনে ভিটে বাড়ি যা ছিল নদীতে বিলীন হয়ে যায়। স্থানীয় চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় সরকারের খাস জমিতে টিনের ছাপরা দিয়ে বাস করছেন।

এতো অভাবের মাঝেও সমাজের আর দশজনের মত তিনি মেয়েকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করতে চান। তার জন্য রক্ত বিক্রি করতে হলে তাও করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।

সোনালীনিউজ/জেএ

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Link copied!