লালমনিরহাট-২ আসনের রাজনীতিতে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মো. নজরুল ইসলাম মৃধা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের টিকিট না পেয়ে নির্বাচনে অংশ না নিলেও, এবার তিনি ভিন্ন রাজনৈতিক পরিচয়ে আলোচনায় এসেছেন। নিজেকে ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)’র শ্রমিক উইংয়ের প্রধান সমন্বয়ক দাবি করে এলাকায় প্রচারণা চালাচ্ছেন তিনি—যদিও এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগ ছাড়েননি।
আদিতমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল থাকা নজরুল ইসলাম মৃধা সংসদ সদস্য হওয়ার প্রত্যাশায় দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু দীর্ঘদিনের সংসদ সদস্য ও বর্তমান সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ চতুর্থবারের মতো আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচনে জয়ী হন।
এর পর থেকেই নজরুল ইসলামের রাজনৈতিক অবস্থানে পরিবর্তনের আভাস মেলে। স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও মনোনয়ন না পাওয়ায় তিনি একপ্রকার দলীয় রাজনীতিতে পিছিয়ে পড়েন বলে মনে করছেন স্থানীয় নেতারা।
নজরুল ইসলাম মৃধা এখন এলাকায় নিজেকে এনসিপির ‘শ্রমিক উইংয়ের প্রধান সমন্বয়ক’ পরিচয়ে পরিচিত করছেন। দুর্গাপূজা উপলক্ষে শারদীয় শুভেচ্ছা জানিয়ে লাগানো পোস্টারেও তিনি এই পরিচয় ব্যবহার করেছেন।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনি এলাকার উন্নয়নমূলক রাজনীতি করতে আমি এনসিপির সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। ৩১ সদস্যের একটি অ্যাডহক কমিটি গঠন করে কেন্দ্রীয় কমিটিতে জমা দিয়েছি। এখন সেই অনুযায়ী প্রচার চালাচ্ছি। তবে এখনো আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করিনি।’
তবে এই পদ-পদবি নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) দ্বিধান্বিত। এনসিপির উত্তরাঞ্চলের সংগঠক রাসেল আহমেদ জানান, ‘এই উপজেলায় আমাদের শ্রমিক উইংয়ের কোনো আনুষ্ঠানিক কমিটি এখনো গঠন হয়নি। কমিটি ছাড়াই নিজেকে প্রধান সমন্বয়ক দাবি করে পোস্টার টানানো অনৈতিক কাজ। এর তদন্ত হওয়া উচিত।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নজরুল ইসলামের এই অবস্থান আওয়ামী লীগের দলীয় শৃঙ্খলার পরিপন্থী। তিনি দল ছাড়েননি, অথচ বিরোধী রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মে কাজ করছেন—এটি দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাংগঠনিক অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। বিষয়টি দলীয় হাই কমান্ড নজরে আনলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।
স্কুলজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতি দিয়ে নজরুল ইসলামের রাজনৈতিক জীবনের শুরু। তিনি প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা শামসুল ইসলাম সুরুজের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। বিগত দুই দশকের বেশি সময় ধরে তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন এবং বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গঠনসহ সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন।
রাজনৈতিক অঙ্গনে দলবদলের ঘটনা নতুন নয়। কিন্তু দল না ছেড়ে একসঙ্গে দুই মেরুর রাজনীতি করা নজরুল ইসলামের মতো একজন দীর্ঘদিনের আওয়ামী লীগ নেতার ক্ষেত্রে বিস্ময়কর। এখন দেখার বিষয়—আওয়ামী লীগ এই পরিস্থিতিতে কী অবস্থান নেয়, আর এনসিপি কীভাবে এই দাবি মেনে নেয়।
আপনার মতামত লিখুন :