নিষিদ্ধ ঘোষণা করা আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক ভাগ্য এখন দেশের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। দলটির সভানেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ঘোষিত মৃত্যুদণ্ডের রায়—যা নিয়ে তীব্র বিতর্ক চলছে—পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। রায়কে ঘিরে প্রশ্ন উঠছে, দলটি কীভাবে টিকে থাকবে এবং নেতৃত্বে কারা উঠে আসতে পারেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করেন, শেখ হাসিনা বিদেশে অবস্থান করায় রায় কার্যকর হওয়া বাস্তবে কঠিন হলেও তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সক্রিয় রাজনীতি পুনরায় শুরু হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। অনেকেই এটিকে তার ‘রাজনৈতিক সমাপ্তি’ হিসেবেও দেখছেন।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি) এক বিবৃতিতে বলেছে, শেখ হাসিনার বাংলাদেশে ফিরে এসে রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার পথ এখন প্রায় অচল।
বিশ্লেষকদের মতে, দলটিকে যদি টিকে থাকতে হয়, তাহলে পুরোনো বিতর্ক থেকে বের হয়ে নতুন নেতৃত্ব, স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ও রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে পুনর্গঠন জরুরি। তাদের ভাষায়, “রি–কনসিলিয়েশন ছাড়া আওয়ামী লীগের সামনে আর কোনো টেকসই পথ নেই।”
যুগান্তর সূত্রে জানা গেছে, নিষিদ্ধ দলের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে যেসব নাম সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছে, তাদের মধ্যে—
১️. শিরীন শারমিন চৌধুরী
সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীকে সম্ভাব্য শীর্ষ নেতৃত্বে দেখা হতে পারে বলে আলোচনা জোরালো। ৫ আগস্টের ঘটনাপ্রবাহের পর তিনি জনসমক্ষে না এলেও বিভিন্ন প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে—তিনি এখনও সরকারের নজরদারিতে আছেন।
সংবিধান অনুযায়ী, ভবিষ্যতে নতুন সংসদ গঠিত হলে স্পিকার হিসেবে তার প্রয়োজন হতে পারে—এ বিষয়টিও আলোচনাকে আরও গুরুত্ব দিয়েছে।
২️. সাবের হোসেন চৌধুরী
দলের সম্ভাব্য সাধারণ সম্পাদক হিসেবে যিনি সবচেয়ে বেশি আলোচিত, তিনি সাবের হোসেন চৌধুরী। পরিষ্কার ভাবমূর্তি ও কূটনৈতিক গ্রহণযোগ্যতার কারণে তার নাম সামনে আসছে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে।
যদিও তিনি বর্তমানে রাজনৈতিকভাবে কম সক্রিয় এবং কোনো প্রকাশ্য বক্তব্য দিচ্ছেন না, সম্প্রতি তার বাসায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের তিন রাষ্ট্রদূতের বৈঠক রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন জল্পনা সৃষ্টি করেছে।
৩️. সেলিনা হায়াৎ আইভী
নারায়ণগঞ্জ সিটির সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর নামও সম্ভাব্য নেতৃত্বে শীর্ষে রয়েছে। তবে তিনি বর্তমানে কারাগারে। কয়েকটি মামলায় জামিন পেলেও নতুন করে চারটি হত্যাসহ পাঁচ মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়েছে।
তবুও রাজনৈতিক জনপ্রিয়তা ও তৃণমূলের গ্রহণযোগ্যতার কারণে অনেকের মতে, মুক্তি পেলে আইভী ভবিষ্যৎ নেতৃত্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন।
দলের সামনে কঠিন পথচলা
পরিস্থিতি কোন দিকে গড়াবে, আওয়ামী লীগ কীভাবে পুনর্গঠিত হবে—এখনো অস্পষ্ট। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দলটির সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো গ্রহণযোগ্য নেতৃত্ব তৈরি করা এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রের প্রতি ফিরে আসার পথ খুঁজে পাওয়া। সূত্র: যুগান্তর।
এম
আপনার মতামত লিখুন :