শেখ হাসিনাকে ঘিরে সাম্প্রতিক আদালতের রায় এবং তার পরিবারের ভল্টে বিপুল স্বর্ণ উদ্ধারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের ভেতরে নতুন করে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে বলে দলীয় একাধিক সূত্র জানাচ্ছে। বিশেষ করে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ে চাপা ক্ষোভ ও হতাশা দেখা যাচ্ছে।
দলীয় সূত্রের দাবি, সরকারবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়ার কারণে যেসব কর্মী ঝুঁকি নিয়ে মাঠে আছেন, তারা একের পর এক মামলা, গ্রেফতার-আতঙ্ক ও লুকিয়ে থাকার কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি। তাদের মতে, এমন সময়ে দলীয় প্রধান ও তার পরিবারকে ঘিরে নেতিবাচক সংবাদ তাদের আরও দুর্বল অবস্থায় ফেলছে।
কয়েকজন শীর্ষ নেতা মনে করেন, উদ্ধার হওয়া স্বর্ণ যদি আয়কর নথিতে উল্লেখ থাকত, তাহলে বিতর্ক কম হতো। হঠাৎ এমন তথ্য প্রকাশ্যে আসায় তারা বিস্মিত।
আওয়ামী লীগের সিনিয়র ও মধ্যম পর্যায়ের কয়েকজন নেতা মনে করছেন, শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সম্পদসংক্রান্ত অভিযোগগুলো দলকে কঠিন সংকটে ফেলে দিয়েছে। ইতোমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে—বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের আদৌ এমন সম্পদের প্রয়োজন ছিল কি না।
তাদের ভাষ্য, আওয়ামী লীগ ভবিষ্যতে ক্ষমতায় ফিরলেও এই ঘটনাগুলো ‘ইতিহাসে থেকে যাবে’, যা দলকে নৈতিকভাবেও চাপের মুখে রাখবে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, তৎকালীন সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে নিজেদের জবাবদিহির ঊর্ধ্বে মনে করত। তার মতে, স্বর্ণ ও প্লট–সংক্রান্ত মামলা সেই বৃহত্তর ক্ষমতার অপব্যবহারের ক্ষুদ্র অংশ মাত্র।
তিনি জানান, এখন অন্তত জবাবদিহির সুযোগ তৈরি হয়েছে। আরও কয়েকটি মামলায় শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সম্পৃক্ততার অভিযোগ উল্লেখ আছে বলেও জানান তিনি, যেখানে আয়ের উৎস ও কর সংক্রান্ত অসংগতি পাওয়া গেছে বলে দাবি করেন।
শেখ হাসিনা বহুবার নিজেকে ‘বঙ্গবন্ধুর সাদামাটা কন্যা’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে জানিয়েছেন যে তার বড় কোনো ব্যক্তিগত সম্পদ নেই। কিন্তু ভল্টে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ উদ্ধার–সংক্রান্ত খবর প্রকাশ্যে আসার পর এ বিষয়ে নতুন প্রশ্ন উঠছে।
অনেকে জানতে চাইছেন—এতো স্বর্ণ থাকলে তা কেন আয়কর নথিতে উল্লেখ ছিল না।
দলের ভেতরে আরও সমালোচনা রয়েছে, কারণ শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের বহু সদস্য ৫ আগস্টের ঘটনাপর্বে নির্বিঘ্নে বিদেশে যেতে পারলেও তৃণমূল কর্মীরা বিপাকে পড়েন।
দলের কয়েকজন মধ্যপর্যায়ের নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, হাইকমান্ড থেকে এখনো সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা না পাওয়া—এটাই তাদের সবচেয়ে বড় সংকট। মাঝেমধ্যে ঘোষিত কর্মসূচিও উল্টো চাপ সৃষ্টি করছে। তার ওপর দলীয় সভাপতিকে ঘিরে ধারাবাহিক মামলার রায় ও আলোচিত ঘটনার কারণে ‘দলের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক কৌশল কী হবে’—তা নিয়ে গভীর অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
এম
আপনার মতামত লিখুন :