ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের জন্য দুঃসংবাদ, স্থায়ী হওয়ার নিয়মে বড় রদবদল

  • সোনালী ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: নভেম্বর ২২, ২০২৫, ০৩:৪৬ পিএম
ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের জন্য দুঃসংবাদ, স্থায়ী হওয়ার নিয়মে বড় রদবদল

ফাইল ছবি

ব্রিটিশ সরকারের নতুন ইমিগ্রেশন পরিকল্পনার খবরে দেশটির অভিবাসী কমিউনিটিতে ছড়িয়ে পড়েছে প্রবল আতঙ্ক। শুক্রবার লন্ডনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক খসড়া কাঠামো প্রকাশ করে জানায়, তারা নতুন একটি অর্জিত বসবাস মর্যাদা ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করছে। এতে ব্রিটেনে স্থায়ী হওয়ার প্রচলিত নিয়ম বড় ধরনের পরিবর্তনের মুখে পড়তে পারে।

সবচেয়ে আলোচিত এবং উদ্বেগ সৃষ্টিকারী বিষয় হলো-স্বল্প আয়ের কর্মীদের জন্য স্থায়ী হওয়ার সময়সীমা ১৫ বছর করার প্রস্তাব। বিশেষ করে ২০২২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে হেলথ ও সোশ্যাল কেয়ার ভিসায় ব্রিটেনে যাওয়া প্রায় ৬ লাখ ১৬ হাজার অভিবাসী এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এখন পর্যন্ত প্রচলিত পাঁচ বছরের নিয়মের জায়গায় এই দীর্ঘ সময়সীমা অভিবাসী সমাজকে হতভম্ব করে দিয়েছে।

এই ঘোষণায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন প্রায় ১৫ লাখ অভিবাসী, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশি। তাদের মতে, ১৫ বছর মানে শুধু দীর্ঘ অপেক্ষাই নয়, কমপক্ষে ছয়বার ভিসা নবায়নের অতিরিক্ত ব্যয় ও কারিগরি জটিলতা। অনেক পরিবার এখন ভাবছে, কীভাবে তারা বাড়তি ভিসা ফি পরিশোধ করবে কিংবা এই দীর্ঘ সময়ে স্পন্সর কোম্পানি লাইসেন্স হারালে কী হবে।

তবে অভিবাসন বিশেষজ্ঞদের মতে, আতঙ্কে ভেঙে পড়ার আগে বিষয়টি ঠান্ডা মাথায় দেখা জরুরি। এই পরিকল্পনা এখনো কোনো আইন নয়, বরং পরামর্শ বা কনসালটেশন মাত্র। রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে সরকার কঠোর প্রস্তাব তুলে ধরে পরে একটি তুলনামূলক নরম অবস্থানে যাওয়ার রাস্তা রেখেছে বলেও মনে করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আলোচিত ১৫ বছরের প্রস্তাবটি দর-কষাকষির এক ধরনের কৌশল; শেষ পর্যন্ত হয়তো ১০ বছরের মতো সময়সীমায় গিয়ে সমঝোতা হতে পারে।

সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয় হলো প্রস্তাবের রেট্রোস্পেকটিভ বা পেছনের তারিখ থেকে কার্যকর করার চেষ্টা। ২০২২ থেকে ২০২৪ সালে যাঁরা এসেছেন, তাঁরা পাঁচ বছরে স্থায়ী হওয়ার প্রতিশ্রুতি জেনেই ব্রিটেনে গেছেন। তাদের ওপর নতুন নিয়ম চাপিয়ে দেওয়া আইনিভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। ২০০৮ সালের এইচএসএমপি ফোরাম মামলার নজির দেখিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার হুট করে খেলার নিয়ম বদলাতে পারে না। সেই মামলায় উচ্চ আদালত রায় দিয়েছিল, বৈধ প্রত্যাশা ভঙ্গ করা যাবে না।

এ কারণে বর্তমান পরিকল্পনার বিরুদ্ধে জুডিশিয়াল রিভিউ হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। আদালতে সরকারকে কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়তে হতে পারে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই কঠোর প্রস্তাব আনার পেছনে মূল কারণ যুক্তরাজ্যের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি। রিফর্ম ইউকের উত্থানে লেবার সরকার অভিবাসন নীতিতে শক্ত অবস্থান দেখানোর চেষ্টা করছে। খসড়ায় ভাতানির্ভর ভিসাধারীদের জন্য ২০ বছর এবং অবৈধ অবস্থানকারীদের জন্য ৩০ বছরের অপেক্ষার মতো বিধানও যুক্ত হয়েছে। সরকারের যুক্তি, এতে তারা অভিবাসন কমানোর প্রতিশ্রুতিতে কঠোর মনোভাব দেখাতে পারবে।

তবে বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা-সোশ্যাল কেয়ার খাতের মেরুদণ্ডই এই কেয়ার ওয়ার্কাররা। তাদের জন্য কঠোর সেটেলমেন্ট রুট তৈরি করলে জনসেবা খাতই বড় সংকটে পড়বে।

যদিও খসড়ার শর্তগুলো ভয় তৈরি করেছে, তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি কেবল দীর্ঘ এক আইনি ও রাজনৈতিক লড়াইয়ের শুরু। পরবর্তী কয়েক মাসে প্রচুর জনমত, পিটিশন ও আইনি চ্যালেঞ্জ জমা হবে। সংবাদপত্রের শিরোনাম বা কনসালটেশন পেপারে যেটি দেখা যাচ্ছে, তা খুব কমই শেষ পর্যন্ত অপরিবর্তিত অবস্থায় আইন হিসেবে পাস হয়।

অভিবাসী কমিউনিটির প্রতি পরামর্শ-পরিস্থিতি সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করুন, তবে আশা হারাবেন না। পাঁচ বছরের রুট হুমকির মুখে পড়লেও সেটিকে টিকিয়ে রাখার লড়াই এখনই শুরু হয়েছে।

এসএইচ 

Link copied!