আমি আমার কথাই বলি! ২০০৬ সালে সরাসরি প্রধান শিক্ষক পদে ১৮ এপ্রিল যোগদান করি। গত ১৮ এপ্রিল, ২০১৯ ইং সনে তের বছর পূর্ণ হয়েছে। কোন প্রকার সুযোগ সুবিধা পাইনি। বিধি মোতাবেক আট বছর পূর্ণ হলে ১ম টাইম স্কেল পাওয়ার কথা, বার বছর পূর্ণ হলে ২য় টাইম স্কেল পাওয়ার কথা কিন্তু পাইনি।
তাছাড়া জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বিগত ০৯/৩/২০১৪ ইং সনে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণীর মর্যাদা প্রদানের ঘোষণা দেন যা আজও বাস্তবায়িত হয়নি আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে।
অন্যদিকে জাতীয়করণকৃত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকগন ২০১৩ সালে জাতীয়করণ হওয়ার পর তাদের পুরো চাকরিকাল গণনা করে তাদের টাইম স্কেল প্রদান করা হয়। যার ফলে তারা অনেকে তিনটা পর্যন্ত টাইম স্কেল পেয়ে অষ্টম গ্রেডে বেতন ভাতা ভোগ করেন। আমরা এখনও ১১তম গ্রেডে বেতন ভাতা পাচ্ছি। কেন এত ব্যাপক বৈষম্য? এখন আমরা নই দ্বিতীয় শ্রেণিভূক্ত,নই তৃতীয় শ্রেণীভূক্ত। পাচ্ছি না টাইম স্কেল, পাচ্ছি না দশ বছর পূর্তির সুযোগ। তাহলে আমরা এখন কোথায় কোন অবস্থানে আছি কিছুই বুঝতে পারি না।
মাননীয় আদালতের রিটের রায় থাকার পরও তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। সিদ্ধান্ত ছিল বিভাগীয় উপ-পরিচালক মহোদয় আমাদের ০৯/৩/২০১৪ ইং-এর পরের টাইম স্কেল অনুমোদন দেবে ১৪/১২/২০১৫ ইং পর্যন্ত। কিন্তু হঠাৎ চিঠি দিয়ে আবার বন্ধ করে দেওয়া হলো। কোনো যুক্তিও খুঁজে পাচ্ছি না। অথচ অন্যান্য ডিপার্টমেন্টে ১৪/১২/২০১৫ পর্যন্ত সকল টাইম স্কেলসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা যথারীতি প্রদান করা হয়েছে। দশ বছর পূর্তি গ্রেড পরিবর্তনও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগে দেওয়া হচ্ছে না। কারণটা অজানাই থেকে গেল।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক/শিক্ষিকাদের সকাল ৯ ঘটিকায় বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে বিকাল ৪.৩০ মিনিট পর্যন্ত বিদ্যালয়ে শ্রেণী কার্যক্রমে নিয়োজিত থাকতে হয়। ৩০ মিনিট বিরতিতে নামাজ আর খাবার খেতে হয়। তারপর আবার শ্রেণী কার্যক্রমে নিয়োজিত থাকতে হয় ৪.১৫ পর্যন্ত। তারপর দাপ্তরিক কাজের বাহিরে নির্বাচনী দায়িত্বসহ নানাবিধ সরকারি দায়িত্ব পালন করতে হয়। শিওর ক্যাশের ফরম পূরণ করতে হয় আমাদের কিন্তু প্রতি ফরমে ২৫/- করে পায় রূপালী ব্যাংক। আমরা কিছুই না। স্বাস্থ্য সহকারীদের ফরম গুলো ও আমাদের পূরণ করে দিতে হয়। অথচ বেতন ভাতা ভোগ করেন তারা। আমাদের কোন কাজ তো কোন ডিপার্টমেন্টে করে দেন না? তাহলে আমরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কি সমাজে এতই নিচু পদে চাকরির করি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রাথমিক শিক্ষকদের মর্যাদা দান করে ১৯৭৩ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো সরকারি করেন। ১৯৭৫ সালে বাঙ্গালী জাতির স্বপ্নকে ভেঙে দেওয়া হয় জাতির জনককে নির্মমভাবে হত্যার মাধ্যমে। দীর্ঘদিন পর ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা সোনার বাংলা বিনির্মাণে আর্থ-সামাজিক মুক্তির লক্ষ্যে ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তে ২০১৩ সালে পুরো প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে জাতীয়করণ করেন। তারপরও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় প্রাথমিক শিক্ষকদের ন্যায্য দাবিগুলো বাস্তবায়িত হয়নি।
আমাদের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সুনির্দিষ্টভাবে অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রাথমিক শিক্ষকদের ন্যায্য দাবিগুলো বাস্তবায়নের প্রস্তাব প্রেরণ করেন কিন্তু কোন প্রকার যুক্তি ছাড়াই অর্থ মন্ত্রণালয় সে প্রস্তাব বাস্তবায়ন সম্ভব নয় বলে ফেরত পাঠায়। তারই প্রতিবাদে আজ প্রাথমিক শিক্ষা পরিবারের পেশাজীবি সকল সংগঠন ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায়ের জন্য এগিয়ে আসে। সে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের অংশ হিসাবে আগামী ১৪ অক্টোবর থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
আমরা আশাবাদী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত প্রাথমিক শিক্ষকদের ন্যায্য দাবিগুলো বাস্তবায়নে এগিয়ে আসবেন। মাননীয় প্রতিমন্ত্রী এবং সচিব মহোদয়ের বারবার ঘোষণার পরও কেন আমাদের দাবিগুলো বাস্তবায়িত হচ্ছে না? তাই শিক্ষক সমাজ আজ ক্ষুব্ধ হয়ে এ আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছে। জয় আমাদের হবেই ইনশাআল্লাহ। মুজিব কন্যার ভিশন ৪১ বাস্তবায়নের প্রাথমিক শিক্ষকগণ অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাবে। বাংলাদেশ উন্নত দেশ হিসাবে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাড়াবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা। আল্লাহ পাক সহায় হোন।
লেখক: প্রধান শিক্ষক, উখারিয়াবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,ধনবাড়ী, টাংগাইল।
সোনালীনিউজ/এইচএন
*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।
আপনার মতামত লিখুন :