• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

কৃষক মারার এই দায় কার?


রেজ্জাকুল হায়দার মে ৩১, ২০২৩, ০৪:১৪ পিএম
কৃষক মারার এই দায় কার?

“নীলচাষ থেকে শুরু করে আজ অবদি কৃষকের শোষণের অবসান হয় নাই। তাই কৃষক তার হতাশা, হাহাকার, ক্লান্তি, বিষাদ, দীর্ঘশ্বাসের বিচার চেয়ে কারো কাছে আর্জি জানায় না। কৃষক যে জমিনে ফসল ফলায় সে জমিনের মালিকের কাছেই দিনশেষে কৃষক বিচার, অভিযোগ, অনুযোগ জানায়। কেননা স্রষ্টার বিচারে কোনো পক্ষপাত হয় না।”

গোপালগঞ্জ: দৈনন্দিন বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর দাম বৃদ্ধি স্বত্ত্বেও ধানের পর্যাপ্ত দাম না থাকায় বারবার নাজুক অবস্থার সম্মুখীন হতে হয় কৃষককে। কৃষকের সূর্যোদয় শুরু হয় শোষণ বঞ্চনা দিয়ে তেমনি সূর্যাস্তও হয় শোষণের মধ্য দিয়ে। কৃষক বীজ, সার, সেচ, কীটনাশক কিনতে শোষিত হয়। আবার উৎপাদিত পণ্য বিক্রিতেও শোষণের শিকার হয়। মধ্যস্বত্ত্বভোগী, ফড়িয়া, দালাল, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের দৌড়াত্বতো আছেই।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর বোরো মৌসুমে চার লাখ টন ধান, সাড়ে ১২ লাখ টন। সেদ্ধ চাল ও এক লাখ টন গম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গম প্রতি কেজি ৩৫ টাকা দরে কেনা হবে। আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে। গত বোরো মৌসুমে ধান, চাল ও গমের দাম ছিল যথাক্রমে ২৭, ৪০ ও ২৮ টাকা। আর গত আমন মৌসুমে কেজিপ্রতি ধান ২৮ চাল ৪১ টাকায় কিনেছিল সরকার। এবারের বোরো মৌসুমে আমনের চেয়ে দাম কেজিপ্রতি ২ টাকা বাড়িয়ে ৩০ টাকা এবং চালের দাম ৩ টাকা বাড়িয়ে ৪৪ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। সে হিসাবে প্রতি মণ ধানের মূল্য হচ্ছে ১ হাজার ২ শত টাকা।

সরকারি লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ধান সংগ্রহে সময় ক্ষেপণ করায় কৃষকের হাত থেকে ধান চলে যায় মজুতদারের হাতে। ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে বাজারে একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তার যা কৃষককে কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য করে। একদিকে শ্রমিক খরচ, ধান মাড়াই, সেচ, সার কীটনাশকের বকেয়া পরিশোধ করতে তাৎক্ষণিক কৃষকদের ধান বিক্রি করতে হয়। আর তখনই মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা ফায়দা লুটে। কৃষক যাতে ধান কাটার পরপরই ধানের নায্য মূল্য পায় সেদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজর রাখতে হবে। তাহলেই ধানের উৎপাদন সফলতা ধরে রাখা সম্ভব হবে এবং কৃষকও সন্তুষ্ট থাকবে। গত ১০ এপ্রিল কৃষি মন্ত্রণালয় কর্তৃক সারের দাম কেজিপ্রতি ৫ টাকা বৃদ্ধি করা হয় যা কৃষক পর্যায়ে ইউরিয়া, ডিএপি, টিএসপি, এমওপি যথাক্রমে ২৭,২১,২৭,২০ টাকায় বিক্রির নির্দেশনা জারি করা হয়। কিন্তু তৃণমূলে ব্যবসায়ীদের সার সিন্ডিকেটের ফলে এর চেয়েও অতিরিক্ত দামে সার কিনতে বাধ্য হয় কৃষকরা। তারপরও রাজপথে কৃষকদের দৃশ্যমান কোনো কর্মসূচি দেখা যায় না। অপরদিকে বিভিন্ন পেশায় যেমন শিক্ষকরা তাদের বেতন, ভাতা, আপগ্রেডেশনের লক্ষ্যে ক্লাস বর্জন করে। কর্মকর্তা কর্মচারী তাদের সুযোগ সুবিধা প্রাপ্তির লক্ষ্যে স্ব স্ব দপ্তরে তালা ঝুলায়। পরিবহন মালিক শ্রমিক তাদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে গণপরিবহন বন্ধ করে জন দুর্ভোগ সৃষ্টি করে সরকারকে বাধ্য করে। আমলাগণ পেন ডাউন (কর্ম বিরতি) করে তাদের দাবি দাওয়া পেশ করে। জনপ্রতিনিধি তাদের নিজ স্বার্থ, দলীয় স্বার্থ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আইন প্রনয়ণ, আইন সংশোধন, পরিবর্তন, পরিবর্ধন করে। কিন্তু একমাত্র কৃষককেই তার উৎপাদিত পণ্যের নায্য মূল্যের দাবিতে গণপরিবহন বন্ধ, গণভবন ঘেরাও, কৃষিমন্ত্রীর পদত্যাগ সহ অন্যান্য দাবিতে মাঠে নামতে কোনোদিন শুনলাম না।

নীলচাষ থেকে শুরু করে আজ অবদি কৃষকের শোষণের অবসান হয় নাই। তাই কৃষক তার হতাশা, হাহাকার, ক্লান্তি, বিষাদ, দীর্ঘশ্বাসের বিচার চেয়ে কারো কাছে আর্জি জানায় না। কৃষক যে জমিনে ফসল ফলায় সে জমিনের মালিকের কাছেই দিনশেষে কৃষক বিচার, অভিযোগ, অনুযোগ জানায়। কেননা স্রষ্টার বিচারে কোনো পক্ষপাত হয় না। এই ৫৬ হাজার বর্গমাইলেও কৃষকের আর্তনাদ দেখার কেউ নেই আছে শুধু আশ্বাস আশ্বাস আর আশ্বাস। যে কৃষকদের আমরা বিভিন্ন বক্তব্যে, সভা, সমাবেশ, সেমিনারে সোনার মানুষ বলে আখ্যায়িত করি দিনশেষে সেই সোনার মানুষদের খোঁজ খবর রাখি না। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রযোজনায় সত্যজিৎ রায় কর্তৃক পরিচালিত "হীরক রাজার দেশে' ছবির কতোই রঙ্গ দেখি দুনিয়ায় গানে বলেছেন, "সোনার ফসল ফলায় যে তার, দুই বেলা জোটে না আহার" কথাগুলোর সত্যতা বোধ হয় বারবার কৃষকের কর্ণকুহরে বেজে যায়। আবারো নুরুলদীনের কথা মনে পড়ে যায়, যে বলেছিলেন "জাগো বাহে কোনঠে সবাই "


সোনালীনিউজ/এম

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!