• ঢাকা
  • সোমবার, ১৩ মে, ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১

মানুষের প্রধান শত্রু শয়তান


আবদুর রশীদ আগস্ট ২৬, ২০২১, ০৬:০৫ পিএম
মানুষের প্রধান শত্রু শয়তান

ঢাকা : মহান আল্লাহতায়ালার সৃষ্টির মধ্যে অন্যতম সেরা সৃষ্টি হলো মানবজাতি। মানবজাতির সষ্টির পূর্বে এবং পরে আরো অনেক কিছুর সূচনা করেন মহান আল্লাহতায়ালা। জ্বিনজাতি, মানবজাতি, পশু-পাখি, উদ্ভিদ ইত্যাদি সবকিছুর বিচরণ এই পৃৃথিবীর পিঠের ওপর। পৃথিবীতে প্রতিটি জিনিসের যেমন বন্ধু রয়েছে তেমনি শত্রুও রয়েছে। এই পৃথিবীতে মানুষের শত্রুদের প্রসঙ্গে কথা বলা হলে প্রথম যার নাম উঠে আসবে সে হলো অভিশপ্ত শয়তান (ইবলিস)। এটা কোনো মনগড়া উক্তি নয়; বরং এ বিষয়টা বিশ্ব প্রতিপালক স্বয়ং মহান আল্লাহতায়ালাই মন্তব্য করেছেন।

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় সে তোমাদের জন্য সুস্পষ্ট শত্রু।’ (সুরা বাকারা, আয়াত-১৬৮, ২০৮; সুরা আনআম, আয়াত-১১২; সুরা ইউসুফ, আয়াত-০৫; সুরা বনী ইসরাইল, আয়াত- ৫৩; সুরা ফাত্বির, আয়াত-০৬; সুরা ইয়া-সীন, আয়াত-৬০; সুরা যুখরুফ, আয়াত- ৬২)

শয়তান (ইবলিস) মূলত একটা জ্বিন। সে ছিল একসময় ধার্মিক, ধূর্ত ও বুদ্ধিসম্পন্ন। এমনকি সে জ্বিনজাতির একটা অংশ হওয়া সত্ত্বেও তার বসবাসও ছিল এক সময় ফেরেশতাদের সঙ্গে। যদিও তার ধার্মিকতা আর জ্ঞান-বুদ্ধির অন্তরালে ছিল অহঙ্কার এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষা যার আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল আদম (আ.)-কে সিজদাহ করার ঘটনার মধ্য দিয়ে। পবিত্র  কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘আর যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বললাম, তোমরা আদমকে সিজদা কর। তখন তারা সিজদা করল, ইবলিস ছাড়া। সে অস্বীকার করল এবং অহঙ্কার করল। আর সে হলো কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত।’ (সুরা আল-বাকারা, আয়াত-৩৪; সুরা সোয়াদ, আয়াত-৭৩,৭৪; সুরা আল-আরাফ, আয়াত-  ১১; সুরা হিজর, আয়াত-৩১; সুরা বনী ইসরাঈইল, আয়াত-৬১; সুরা কাহফ, আয়াত- ৫০; সুরা ত্বহা, আয়াত-১১৬)

বিশ্ব প্রতিপালক মহান আল্লাহতায়ালা যিনি সবকিছুর ওপর ক্ষমতাবান, সবকিছুর ওপর কর্তৃত্ব রাখেন, যার অধীনে সবকিছুই নিয়ন্ত্রিত এবং যিনি এই সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা। সেই স্রষ্টার হুকুম সরাসরি অমান্য করে ক্ষমার পরিবর্তে জঘন্যতম স্পর্ধা দেখিয়ে উল্টো আল্লাহর নিকট যুক্তি প্রদর্শন করলেন।

পবিত্র  কোরআনে এসেছে, মহান আল্লাহতায়ালা বললেন, ‘কিসে তোমাকে বাধা দিয়েছে যে, সিজদা করছ না, যখন আমি তোমাকে নির্দেশ দিয়েছি’? সে বলল, ‘আমি তার চেয়ে উত্তম। আপনি আমাকে আগুন থেকে সৃষ্টি করেছেন, আর তাকে সৃষ্টি করেছেন কাদামাটি থেকে।’ (সুরা আরাফ, আয়াত-১২; সুরা হিজর, আয়াত-৩২, ৩৩; সুরা বনী ইসরাইল, আয়াত-৬১; সুরা সোয়াদ, আয়াত-৭৫, ৭৬)

এমন জঘন্য স্পর্ধা এবং অহঙ্কার যখন প্রকাশ করলেন সাথে সাথে স্বয়ং আল্লাহতায়ালা তাকে অভিশপ্তদের অন্তর্ভুক্ত করে দিলেন। অতঃপর আল্লাহতায়ালা বললেন, ‘সুতরাং তুমি এখান থেকে নেমে যাও। তোমার এ অধিকার নেই যে, এখানে তুমি অহঙ্কার করবে। সুতরাং বের হও। নিশ্চয় তুমি লাঞ্ছিতদের অন্তর্ভুক্ত।’ (সুরা আল-আরাফ, আয়াত-১৩; সুরা হিজর, আয়াত- ৩৪; সুরা সোয়াদ, আয়াত-৭৭)

উক্ত অহঙ্কার প্রমাণ করেছিল যে, পূর্বে সে যত ইবাদত করেছিল এবং যত জ্ঞান অর্জন করেছিল তার সবটাই ছিল মিথ্যা যার পেছনে লুকায়িত ছিল তার অহঙ্কার আর উচ্চাকাঙ্ক্ষা। যদি তার অহঙ্কার আর উচ্চাকাঙ্ক্ষা না থাকত তাহলে কখনো ক্ষমার পরিবর্তে যুক্তি দেখাত না। যেমনটা হজরত আদম (আ.) ভুলের পর যুক্তি প্রদর্শন না করে সাথে সাথে অপরাধ স্বীকার করে মহান রবের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন। আর আল্লাহতায়ালা তাকে (শয়তান) লাঞ্ছিতদের অন্তর্ভুক্ত করার পর শয়তান (ইবলিস) মহান আল্লাহতায়ালার কাছে অবকাশ চেয়ে বললেন, ‘সেদিন পর্যন্ত আমাকে অবকাশ দিন, যেদিন তাদেরকে পুনরুজ্জীবিত করা হবে’। তিনি বললেন, ‘নিশ্চয় তুমি অবকাশপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত’। (সুরা আরাফ, আয়াত-১৪,১৫; সুরা হিজর, আয়াত-৩৬, ৩৭; সুরা সোয়াদ, আয়াত-৭৯, ৮০)

অবশেষে আল্লাহতায়ালা তাকে অবকাশ দিলেন কিয়ামত পর্যন্ত। একবার চিন্তা করুন বিষয়টা, শয়তান এতো বড় জঘন্য অপরাধ করার পর আল্লাহ চাইলে তাকে সাথে সাথে শাস্তি দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করলেন না; বরং সে যেন ক্ষমা প্রার্থনা করে তার জন্য দয়াশীল হলেন। যদি সে অপরাধ স্বীকার করে ক্ষমা চাইতেন মহান আল্লাহতায়ালা তাকে সাথে সাথে ক্ষমা করে দিতেন। এর প্রমাণ উপরিউক্ত আয়াতেই রয়েছে। সে আল্লাহর কাছে দোয়া করে আরজি করেছিলেন যেন তাকে কিয়ামত পর্যন্ত অবকাশ দেন আর আল্লাহতায়ালা তার দোয়াটি কবুল করলেন এবং অবকাশ দিলেন। যদি সে অবকাশের স্থলে অপরাধের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতেন তাহলে তা হতো তার জন্য কল্যাণকর।

অভিশপ্ত শয়তান শুধু এতটুকুতে থেমে যায় নি; বরং মহান প্রতিপালক যিনি একমাত্র সবকিছু রাজত্বের অধিকারী স্বয়ং আল্লাহতায়ালাকে দোষারোপ করেছেন এবং উল্টো চ্যালেঞ্জও করে বসলেন। অতঃপর সে বলল, ‘আপনি আমাকে পথভ্রষ্ট করেছেন, সে কারণে অবশ্যই আমি তাদের জন্য আপনার সোজা পথে বসে থাকব।’ (সুরা আরাফ, আয়াত-  ১৬; সুরা হিজর, আয়াত-৩৯; সুরা সোয়াদ, আয়াত-৮২, ৮৩) সে অভিশপ্ত শয়তান আরো বলল, ‘তারপর অবশ্যই তাদের নিকট উপস্থিত হব, তাদের সামনে থেকে ও তাদের পেছন থেকে এবং তাদের ডান দিক থেকে ও তাদের বাম দিক থেকে। আর আপনি তাদের অধিকাংশকে কৃতজ্ঞ পাবেন না।’ (সুরা আরাফ, আয়াত-১৭)

শয়তান যখন আল্লাহকে বললেন যে, মানুষদের এক অংশ তার করে নিবে প্রতারণার মাধ্যমে। মানুষকে ওয়াসওয়াসা দিবে চতুর্দিক থেকে যেন আল্লাহর প্রতি অকৃতজ্ঞ হয়ে পড়ে আর যেন বান্দাদের অধিকাংশই জাহান্নামের অধিবাসী হয়ে যায়। প্রতিটি স্তরে স্তরে সে ওঁৎ পেতে বসবে মানুষকে বিপথগামী করতে। অতঃপর আল্লাহতায়ালা তার প্রতি উত্তরে ধিক্কার দিয়ে ও কঠিন হুঁশিয়ারি করে বললেন, ‘তুমি এখান থেকে বের হও লাঞ্ছিত বিতাড়িত অবস্থায়। অবশ্যই তাদের মধ্য থেকে যে তোমার অনুসরণ করবে, আমি তোমাদের সবাইকে দিয়ে জাহান্নাম ভরে দেবই।’ (সুরা আরাফ, আয়াত-১৮; সুরা সোয়াদ, আয়াত-৮৫) ‘আর নিশ্চয় কিয়ামত দিবস পর্যন্ত তোমার ওপর লানত।’ (সুরা হিজর, আয়াত-৩৫; সুরা সোয়াদ, আয়াত-৭৮) ফলে সে হয়ে যায় মানুষের প্রধান শত্রু। এমন শত্রু যার প্ররোচনায় মানুষের জীবন এক বিরাট পরীক্ষার সম্মুখীন হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে পরীক্ষার ফলাফল হয়তো জান্নাত, নয়তো জাহান্নামের ঠিকানা চিহ্নিত হবে।

তুমি যত বড় পাপী হও আর যতই নিকৃষ্ট হও না কেন হতাশ হয়ো না। কারণ আল্লাহর নিকট সেই বেশি প্রিয় যে ব্যক্তি অপরাধের পর অনুশোচনা করে এবং আল্লাহর নিকট তাওবা ইস্তিগফার করে। সুতরাং অনন্যচিত্তে আল্লাহর নিকট তাওবা করুন। তিনি তাওবা কবুলকারী। অবশ্যই তিনি তোমাকে ক্ষমা করবেন। শয়তান তোমাকে ধোঁকা দিচ্ছে এই বলে যে, তুমি এত পাপী, তোমার পাপের কোনো সীমা নেই। আর তুমি কিনা এই অপরাধ নিয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে? তোমার কি লজ্জা বলতে কিছুই নেই? ইত্যাদি হতাশার জাল বুনে অন্তরে। সুতরাং তা উপেক্ষা করে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করো। ইনশাআল্লাহ, তুমিই হবে আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় বান্দা।

শয়তানের যাবতীয় ফাঁদ ও তার কার্যকলাপ এবং গোপন তথ্য সবকিছু পবিত্র কোরআনেই লিপিবদ্ধ রয়েছে। তাই, আমাদের উচিত নিয়মিত একটি করে হলেও কোরআনের আয়াত অর্থসহ তাফসির পড়া। যাতে আমাদের ঈমান শক্ত হয় এবং আল্লাহর আরো নিকটবর্তী হতে পারি ও শয়তানের ফাঁদ থেকে বেঁচে থাকতে পারি। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যখন তুমি কোরআন পড়বে তখন আল্লাহর কাছে বিতাড়িত শয়তান হতে পানাহ চাও।’ (সুরা নাহল, আয়াত-৯৮) অতঃপর শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে আশ্রয় চেয়ে আল্লাহর শিখানো ভাষায় সবাই নিয়মিত প্রার্থনা করার চেষ্টা করি, ‘হে আমার রব, আমি শয়তানের প্ররোচনা থেকে আপনার কাছে পানাহ চাই।’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত-৯৭; সুরা ফুসসিলাত, আয়াত-৩৬)

লেখক : শিক্ষার্থী, সরকারি সিটি কলেজ চট্টগ্রাম
সদস্য, বাংলাদেশ কওমী তরুণ লেখক ফোরাম

 

Wordbridge School
Link copied!