• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিদ্রোহীতে বিপাকে আ.লীগ, বিএনপিতে বাড়ছে ঐক্য


নিজস্ব প্রতিবেদক অক্টোবর ১, ২০২২, ০৪:১৩ পিএম
বিদ্রোহীতে বিপাকে আ.লীগ, বিএনপিতে বাড়ছে ঐক্য

ঢাকা: জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের পদহীন নেতা এবং আগের বিদ্রোহীদের নিয়ে বিপাকে আওয়ামী লীগ। ২৭ জেলায় চেয়ারম্যান পদে দলটির সাবেক নেতা এবং বর্তমানে পদহীন এমন বিদ্রোহীরা দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়া বিগত নির্বাচনে যারা বিদ্রোহী হয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন, তাদের অনেকেই এবারও নির্বাচনের মাঠে আছেন। বেশকিছু জেলায় বিদ্রোহীদের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। দলীয় পদ না থাকায় এসব প্রার্থীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ কম।

অন্যদিকে মামলা-হামলায় কোণঠাসা না হয়ে বিএনপিতে বাড়ছে ঐক্য। ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার চেয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে সৌহার্দ ও সহানুভূতি। হামলায় আহত নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন তারা। বিরোধ ভুলে পারস্পরিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। শুধু আহত নেতাকর্মী নয়, তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়াচ্ছে হাইকমান্ড।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, আগের বিদ্রোহীদের এবার মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। এবার যারা বিদ্রোহী ভবিষ্যতে তাদেরও মনোনয়ন এবং দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হবে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২৭ জেলায় বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ছাড়া বাদবাকি ৩৪ জেলা পরিষদে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে আইনি জটিলতায় নোয়াখালীতে চেয়ারম্যান পদে ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। বাকি ৩২ জেলার মধ্যে শেরপুর, সুনামগঞ্জ, রাজবাড়ী, রংপুর, কক্সবাজার থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ কেন্দ্রে পাঠিয়েছে বলে জানা গেছে। বাকি জেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বিদ্রোহী প্রার্থীদের এখনো বোঝানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

এবিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, কিছু লোক থাকবেই, যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবে না। তবে আমরা কিন্তু গতবারের বিদ্রোহীদের এবার দলীয় মনোনয়ন দেইনি। কয়েকজন বিজয়ীও হয়েছিলেন, তাদেরও বাদ দেওয়া হয়েছে। যারা দলের পদে নেই তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই। তবে আমরা এবার যেমন তাদের মনোনয়ন দেইনি। এবার যারা বিদ্রোহী থাকবে তাদের আগামীতেও দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে না। দলের গুরুত্বপূর্ণ পদেও তাদের রাখা হবে না বলেও জানান তিনি।

জানা গেছে, বিগত জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী হয়ে ১১ জন জয়ী হয়েছিলেন। এর মধ্যে সাতক্ষীরায় গতবারের বিদ্রোহীকে এবার আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। বাকিদের মধ্যে পিরোজপুর ছাড়া প্রায় সবাই এবারও নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। ফলে এবারও বেশ কয়েকটি জেলায় বিদ্রোহীদের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে ইতোমধ্যেই ২৭ জন চেয়ারম্যানসহ মোট ১১৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৬৮ জন সাধারণ সদস্য এবং ১৯ জন সংরক্ষিত সদস্য রয়েছেন। অন্যদিকে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর চেয়ারম্যান পদ থেকে ৩২ জন, সংরক্ষিত সদস্যপদ থেকে ৬৯ জন ও সাধারণ সদস্য পদ থেকে ৩২৮ জন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। শেষ পর্যন্ত ৩৪ জেলায় চেয়ারম্যান পদে ৯০ জন এবং সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্য পদে ২২১৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

এদিকে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠ গরম করতে জোড় প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। এর ফলে মামলা-হামলার পরিমাণও বাড়ছে। তবে এতে কোণঠাসা না হয়ে বিএনপিতে ঐক্য বাড়ছে বলে মত রাজনীতি বিশ্লেষকদের। তাদের মতে, ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার চেয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে সৌহার্দ ও সহানুভূতি। হামলায় আহত নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন তারা। বিরোধ ভুলে পারস্পরিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। শুধু আহত নেতাকর্মী নয়, তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়াচ্ছে হাইকমান্ড।

কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে যে অভ্যন্তরীণ মনস্তাত্ত্বিক বা দৃশ্যমান দ্বন্দ্ব ছিল তা অনেকটাই কমে এসেছে। কাঙ্ক্ষিত পদ না পাওয়ায় অনেকের মধ্যে ছিল ক্ষোভ ও হতাশা। দলীয় কর্মকাণ্ড থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেন তারা। সেই ক্ষোভকে মনের মধ্যে পুষে রেখে দলের স্বার্থে সক্রিয় হচ্ছেন নেতাকর্মীরা। এখনও যারা সক্রিয় হননি শিগগিরই তাদের রাজপথের আন্দোলনে দেখা যাবে বলে প্রত্যাশা দলটির নীতিনির্ধারকদের।

এবিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, হামলা-মামলা, নির্যাতন করে বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার মিশন নিয়ে নেমেছে সরকার। কিন্তু হিতে বিপরীত হয়েছে। বিএনপি আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ।

তিনি বলেন, দেশের এ দুর্দিনে দলের নেতাকর্মীরা জীবন বাজি রেখে রাজপথে নেমে আসছেন। দিন যত যাচ্ছে সভা-সমাবেশে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বাড়ছেই। সাধারণ মানুষও এতে অংশ নিচ্ছে। একটি কার্যকর গণআন্দোলনের মাধ্যমে এ সরকারকে বিদায় করে দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা হবে। এর বিকল্প আমরা কিছু ভাবছি না।

বিএনপির দাবি, এক যুগের বেশি সময়ে ৬ শতাধিক নেতাকর্মীকে গুম-খুন করা হয়েছে। লক্ষাধিক মামলায় আসামি করা হয়েছে ৩৫ লাখ। 

জানা গেছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন বিভিন্ন সময়ে দলের বহিষ্কৃত নেতারা। দলের হাইকমান্ডেরও তাদের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে। সারা দেশের শতাধিক নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দলের এমন সিদ্ধান্তের পর অনেকেই বহিষ্কার প্রত্যাহারে কেন্দ্রে আবেদন করছেন। শিগগিরই তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হবে।

সোনালীনিউজ/আইএ

Wordbridge School
Link copied!