• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

অবৈধ বিদেশীরা ভয়ঙ্কর অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িত


নিজস্ব প্রতিবেদক আগস্ট ২৪, ২০১৬, ১২:৩৪ পিএম
অবৈধ বিদেশীরা ভয়ঙ্কর অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িত

ফাইল ছবি

বিপুল অসংখ্য অবৈধ বিদেশী নাগরিক এদেশে অবস্থান করে নানা কৌশলে প্রতিনিয়ত ভয়ঙ্কর সব অপরাধমূলক কর্মকান্ড চালাচ্ছে। বিশেষ করে তারা জাল ডলার, জাল টাকা, অপহরণ ও মাদক চোরাচালানের মতো কারবাওে জড়িত। সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বেশির ভাগ অবৈধ বিদেশী নাগরিক এদেশে অনুপ্রবেশ করছে এবং অপরাধমূলক কর্মকান্ডে নিত্যনতুন কৌশল ব্যবহার করছে।

এমনকি তাদের অনেকেই বিভিন্ন অঞ্চলে এদেশের নাগরিকের সাথে বিবাহবন্ধনেও আবদ্ধ হচ্ছে। তারপর সামাজিক অবস্থান তৈরি করে লিপ্ত হচ্ছে অপরাধমূলক কর্মকান্ডে। পাশাপাশি ভিসা নিয়ে এদেশে আসা বিদেশীদের অনেকেরই ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও নিজ দেশে ফিরে যাচ্ছে না। মূলত রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় বসবাস করেই অবৈধ বিদেশীরা অপরাধ কর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, অপরাধ কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ইতিমধ্যে অনেক অবৈধ বিদেশীকেই কারাগারে যেতে হয়েছে। কিন্ত কারাভোগের পর ছাড়া পেয়ে তারা নিজ দেশে ফিরে যাচ্ছে না বা যেতে পারছে না। বরং তারা পুনরায় জড়িয়ে পড়ছে জাল ডলার, জাল টাকা, অপহরণ ও মাদক চোরাচালানের মতো ভয়ঙ্কর সব অপরাধমূলক কর্মকান্ডে। গত দুই বছরে ভয়ঙ্কর অপরাধ কার্যক্রমে জড়িত থাকার অভিযোগে অন্তত ৪৪ জন বিদেশিকে আটক করা হয়।

কিন্ত সরকার কারাভোগ শেষে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে পারছে না। কারণ ওসব দেশের বেশির ভাগেরই দূতাবাস এদেশে নেই। দেশে যেসব অবৈধ বিদেশি আস্তানা গেড়েছে তাদের বেশির ভাগই অবৈধভাবে সীমান্ত পার হয়ে এদেশে অনুপ্রবেশ করা। তারা গ্রাম-গঞ্জে নিম্নবিত্ত সহজ-সরল পরিবারের মেয়ে বিয়ে করে সেখানকার সমাজের সাথে নিজেকে মিলিয়ে নিচ্ছে। ওসব বিয়েতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা নির্দেশনা মানা হচ্ছে না।

সূত্র জানায়, এদেশে শতাধিক দেশের দূতাবাস নেই। কিন্তু ওসব দেশের নাগরিকরা অন অ্যারাইভাল ভিসা, তিন মাসের ভিসা, কিংবা ছয় মাসের ভিসা নিয়ে এদেশে প্রবেশ করে। আবার অনেকে প্রতিবেশী দেশে এসে সেখান থেকে অবৈধ পথে সীমান্ত অতিক্রম করে এদেশে এসে বসবাস করছে। তারপর তারা সংঘবদ্ধ চক্র হয়ে চালিয়ে যান অপরাধ জগতের নিয়মিত কার্যক্রম। 

অবৈধ বিদেশী চক্রগুলো প্রথমে রাজধানীর ধানমন্ডি, উত্তরা, বনানী, গুলশান ও বারিধারার মতো অভিজাত এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বাস করতে থাকে। তাদের সাথে যুক্ত হয় দেশীয় অসাধু কিছু চক্র। যারা অবস্থা বুঝে নির্দিষ্ট একজন ব্যক্তিকে টার্গেট করে তার ই-মেইল, মোবাইল নম্বর এবং পেশা সম্পর্কে জেনে নেয়। তারপর প্রথমে স্বল্প পুঁজিতে অধিক মুনাফার একটি ব্যবসার লোভনীয় প্রস্তাব দিয়ে তারা ই-মেইল পাঠায়। 

কিছুদিন ই-মেইল চালাচালির পর মুঠোফোনে যোগাযোগ শুরু হয়। তারপর আসল ডলারের কথা বলে দেয়া হয় জাল ডলার। সেসব ডলারে এমন কিছু কেমিক্যাল পদার্থ ব্যবহার করা হয় যেগুলো যে কোনো সাধারণ নাগরিকের পক্ষে চেনা সম্ভব নয়। ওইভাবে অবৈধ বিদেশি চক্রগুলো সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়ে নিজ দেশে পাচার করছে। 

এমনকি বিদেশী চক্রগুলো  জাল ডলার বিক্রির পাশাপাশি জাল টাকা তৈরি এবং তা বিক্রির নেটওয়ার্কও গড়ে তুলছে এদেশে। তাদের কেউ আবার একই কৌশলে ধনী কোনো ব্যক্তিকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় কওে নিচ্ছে। এসব কাজে বিদেশি অপরাধীরা ব্যবহার করছে শতাধিক নিবন্ধিত দেশীয় সিম। তাছাড়া বিদেশি সিমের পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তির বিভিন্ন সরঞ্জামও ব্যবহার করছে তারা।

সূত্র আরো জানায়, বিদেশিদের অপরাধ কর্মকান্ডের কারণে অবৈধ চোরাচালানে দেশের মধ্যে মাদকের বিস্তার হচ্ছে। তারা সুকৌশলে বিভিন্ন দেশ থেকে কোকেন, ইয়াবা, মদ, হেরোইন, আফিম, অ্যামফিটামাইন, বারবিচুরেটস, বেনজোডায়াজিপাইনস, ওপিয়াম, ক্যানাবিস ও পেথিড্রিনসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য এনে এখানকার যুবকদের মধ্যে সরবরাহ করছে।

যদিও ওসব ঘটনায় অনেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হাতে ধরা পড়েছে এবং সুনির্দিষ্ট অভিযোগে অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় অনেক বিদেশীকে কারাভোগও করতে হয়েছে। কিন্ত কারাভোগের মেয়াদ শেষে অনেকে যাওয়ার কোনো জায়গা না পেয়ে কারাগারের মধ্যেই থেকে যায়। 

আবার কেউ কেউ ছাড়া পেয়ে নতুন করে জড়িয়ে পড়ছে একই অপরাধে। তবে কারাভোগ শেষে অধিকাংশ অবৈধ বিদেশীর নিজ দেশের দূতাবাস এদেশে না থাকায় তাদেরকে স্বদেশে পাঠাতে জটিলতা দেখা দিচ্ছে। ফলে তাদেরকে ফেরত পাঠানো যায় না।

তাছাড়া অবৈধ বিদেশীরা যখন অপরাধ কাজে যুক্ত থাকে তখন তাদের ভাষাগত কোনো সমস্যা না থাকলেও র‌্যাব বা পুলিশের কাছে ধরা পড়লেই তাদের মধ্যে এক ধরনের ভাষাগত সমস্যা দেখা দেয়। ফলে ভাষা বুঝতে না পেরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেও মূল হোতাদের তথ্য বের করতে পারে না।

এদিকে কঙ্গো, ক্যামেরুন, লেসেথো, সেনেগাল, উগান্ডা ও মালিসহ বেশ কিছু দেশের নাগরিকরা হরহামেশাই নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়াচ্ছে। কিন্তু ওসব দেশের কোনো দূতাবাস এদেশে নেই। তাছাড়া অপরাধীদের অনেকেই এদেশে পাসপোর্ট ছাড়া অবস্থান করছে। পাসপোর্ট না থাকায় কোনো কোনো অপরাধীর দেশও শনাক্ত করা যাচ্ছে না। তবে যেসব অবৈধ বিদেশি এদেশে অনুপ্রবেশের দায়ে ধরা পড়ে তাদের বিচার হয় এবং বিচারে সাজাও হয়।

কিন্তু সাজা শেষে তাদেরকে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি দেখার দায়িত্ব স্বরাষ্ট্র এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। মূলত যেসব বিদেশি অপরাধের সাথে জড়িত তারা অন অ্যারাইভাল, তিন অথবা ছয় মাসের ভিসা নিয়ে এদেশে প্রবেশ করে। আবার কেউ কেউ বৈধ পথে প্রবেশ করেও অবৈধ হয়ে যায়। 

আবার অনেকে প্রতিবেশী দেশ হয়ে সীমান্ত পার হয়ে অনুপ্রবেশের মাধ্যমে অপরাধ করে। এসব ঘটনায় বিচারে সাজা হওয়ার পর তাদেরকে ফেরত পাঠাতে অনেক জটিলতা তৈরি হয়। বিশেষ করে সেসব দেশের দূতাবাস না থাকায় এবং বিভিন্ন জটিলতায় সরকার তাদের ফেরত পাঠানো যাচ্ছে না।

অন্যদিকে অবৈধ বিদেশিদের বিষয়ে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মমতাজ উদ্দিন ফকিরের মতে- অবৈধভাবে যারা এদেশে আছে তারা যে পথে এসেছে সে পথেই ফেরত পাঠানো যেতে পারে। তাছাড়াও যেসব বিদেশির দূতাবাস এদেশে নেই তাদের বিষয়ে সরকার আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারে। 

এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানান, ভিসা নিয়েই বিদেশী নাগরিকরা এদেশে আসে। আর এখানে এসেই জড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন দুষ্কর্মে। ভিসা শেষ হওয়ার পর তারা আত্মগোপনে চলে যায়। আত্মগোপনে থেকেই জালিয়াতি কর্মকান্ড চালিয়ে যেতে থাকে। অবৈধভাবে অবস্থান করা এমন বিদেশিদের গ্রেফতারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সব সময় কাজ করছে। তাদের সংখ্যা হালনাগাদ করতে ইতিমধ্যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এএম

Wordbridge School
Link copied!