• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

কোচিং বাণিজ্য: শতাধিক শিক্ষকের তালিকা দুদকে


নিজস্ব প্রতিবেদক অক্টোবর ১৭, ২০১৭, ০৮:০৩ পিএম
কোচিং বাণিজ্য: শতাধিক শিক্ষকের তালিকা দুদকে

ঢাকা: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকরির পাশাপাশি কোচিং বাণিজের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকায় রাজধানীর নয়টি স্কুল-কলেজের শতাধিক শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করেছে দুদক। শিগগিরই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে সূত্র জানিয়েছে। 

সূত্র জানিয়েছে, রাজধানীর ৯ নামিদামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১১১ জন শিক্ষকের চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। প্রায় ৮ মাস অনুসন্ধান শেষে কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত ওই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে দুদকের টিম।

কমিশনে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে রাজধানীর ৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের মতিঝিল শাখার ৩২ জন ও বনশ্রী শাখার ৪ জনসহ মোট ৩৬ জন, মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ২৪ জন, খিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ১ জন, মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ১২ জন, মতিঝিল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪ জন, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৭ জন, মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ১৪, গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের ৮ জন ও রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল এন্ড কলেজের ৫ জন শিক্ষকসহ মোট ১১১ জন শিক্ষককে চিহ্নিত করেছে দুদক।

এর মধ্যে অনুসন্ধান টিমের প্রথম প্রতিবেদনে ১০২ জন কোচিং বাণিজ্য তালিকার সঙ্গে চূড়ান্ত তালিকায় আরো ৯ শিক্ষকের নাম যোগ হয়েছে।

এ বিষয়ে দুদক সচিব ড. শামসুল আরেফিন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দুদকের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয় থেকে অনুসন্ধান করা হচ্ছে। বেশ কিছুদিন আগে এ বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন জমা হয়েছিল। চূড়ান্ত পর্যায়ে কোনো প্রতিবেদন কমিশনে জমা হয়েছে কিনা সে বিষয়ে আমি এখনো অবগত নই।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী কোচিংয়ে জড়িত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে সরাসরি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব না হলেও কোচিংয়ে যুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। এখন কমিশন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন।

চলতি মাসের ৯ অক্টোবর তৃতীয় দফার দুদকের অনুসন্ধান টিম অভিযানে নামে। এবারের অভিযানেও আগের মতোই কোচিংয়ে যুক্ত শিক্ষকের খোঁজ মেলে। অভিযানকালে গর্ভনমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের গণিতের শিক্ষক জাকির হোসেন ও ইংরেজীর শিক্ষক আলতাফ হোসেনকে কোচিং করানো অবস্থায় পাওয়া যায়।

অন্যদিকে ওই প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক আবদুল খালেক তার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিংয়ে যুক্ত থাকার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া কিংবা তাদেরকে সতর্ক করার বিষয়ে কোনো প্রমাণ দেখাতে সক্ষম হননি। যেখানে অভিভাবকরা অধিকাংশ শিক্ষকের কোচিংয়ে জড়িত থাকার তথ্য দিয়েছেন।

অন্যদিকে একই দিন ধানমন্ডী গর্ভনমেন্ট বয়েজ ও রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল এন্ড কলেজ এলকায়ও অভিযান চালায় দুদক টিম।

এ বিষয়ে দুদক কর্মকর্তা বলেন, এ প্রতিষ্ঠান দুটোতেও একই চিত্র দেখা গেছে। তবে এ দুটো স্কুলের প্রধান শিক্ষক কোচিং এর বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সতর্কবার্তা বিভিন্ন সময়ে মিটিং বা নোটিশ আকারে শিক্ষকদের দিয়েছেন। কিন্তু অধিকাংশ শিক্ষক এসব নির্দেশনা অমান্য করে কোচিং বাণিজ্য অব্যাহত রেখেছেন।

অভিযানকালে রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল এন্ড কলেজের ৫ শিক্ষককে হাতেনাতে নিজ প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের কোচিং করানো অবস্থায় পেয়েছেন। ওই পাঁচ শিক্ষক হলেন- ইংলিশ মিডিয়ামের গনিতের শিক্ষক এ বি এম মইনূল ইসলাম ও মো. আলী আকবর, বাংলা মিডিয়ামের গণিতের শিক্ষক মো. রেজাউর রহমান, বাংলা মিডিয়ামের ইংরেজির শিক্ষক মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম ও  রসায়নের শিক্ষক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান। কমিশনে দেয়া প্রতিবেদনে তাদের নাম যোগ করা হয়েছে।

২০১২ সালের ২০ জুন কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করতে নীতিমালা তৈরি করে প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নীতিমালায় নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কোচিং অথবা প্রাইভেট পড়াতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ ১০ জন ছাত্রছাত্রীকে নিজ বাসায় পড়ানোর সুযোগ রয়েছে।

এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান প্রধানকে লিখিতভাবে ছাত্র-ছাত্রীর নাম ও রোল নম্বরসহ তালিকা জানাতে হবে। শুধু তাই নয়, সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা ওই ১০ শিক্ষার্থীর মধ্যে নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একজনকে পড়ালেও তাকে অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হবে।

কোচিং সেন্টারের নামে বাসা ভাড়া নেয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধের কথা বলা হয়েছে। এমনকি কোনো শিক্ষক বাণিজ্যিকভাবে গড়ে ওঠা কোচিং প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত হতে পারবেন না।

শাস্তির বিষয়ে নীতিমালায় বলা হয়েছে, সরকারি বা এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যে জড়িত থাকলে সাময়িক বা চূড়ান্ত বরখাস্ত, এমপিওভুক্ত শিক্ষক হলে এমপিও স্থাগিত, বাতিল, বেতন ভাতাদি স্থগিত, বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি স্থগিত, বেতন এক ধাপ অবনমিতকরণ ইত্যাদি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।

অভিযুক্ত শিক্ষকদের তালিকা আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ: নিজাম উদ্দিন কামাল(ইংরেজি), আব্দুল মান্নান (রসায়ন), উম্মে ফাতিমা (বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়), মো. আজমল হোসেন (বাংলা), গোলাম মোস্তফা (গণিত), আশরাফুল আলম (রসায়ন), বাবু সুবাস চন্দ্র পোদ্দার (রসায়ন), লাভলী আখতার, তাসমিন নাহার, মতিনুর (ইংরেজি), উম্মে সালমা (ইংরেজি), মো. আব্দুল জলিল (ব্যবসায় শিক্ষা, মোহাম্মদ ফখরুদ্দীন (রসায়ন), মনিরা জাহান (ইংরেজি), ফাহমিদা খানম পরী (গণিত), লুৎফুন নাহার (গণিত), হামিদা বেগম (গণিত), নাজনীন আক্তার (গণিত), উম্মে সালমা (ইংরেজি), তৌহিদুল ইসলাম (ইংরেজি), সুরাইয়া জান্নাত( ইংরেজি), মো. সফিকুর রহমান-৩ (গণিত ও বিজ্ঞান), মো. শফিকুর রহমান সোহাগ (গণিত ও বিজ্ঞান), নুরুল আমিন (গণিত), মনিরুল ইসলাম (ইংরেজি), রফিকুল ইসলাম (সমাজ বিজ্ঞান), গোলাম মোস্তফা (গণিত), অহিদুজ্জামান (বাংলা), মাকসুদা বেগম মালা, আলী নেওয়াজ আলম করিম, মো. আবুল কালাম আজাদ ও মো. আব্দুর রব এবং বনশ্রী শাখার মো. শফিকুল ইসলাম (ইংরেজি), মো.মাহবুবুর রহমান (পদার্থ বিজ্ঞান), মো. মোয়াজ্জেম হোসেন (গণিত) ও আব্দুল হালিম (গণিত)।

মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ: সহকারী প্রধান শিক্ষক এনামুল হক, মেজবাহুল ইসলাম (ইংরেজি), সুবীর কুমার সাহা (গণিত), মো. সাইফুল ইসলাম,  মোহনলাল ঢালী, বাসুদেব সমদ্দার, বকুল বেগম, আসাদ হোসেন (ইংরেজি), প্রদীপ কুমার বসাক, আবুল খায়ের, শারমীন খানম, মো. কবীর আহমেদ, খ. ম. কবির আহমেদ, মো. দেলোয়ার হোসেন,  মাও. কামরুল হাসান, মো. রুহুল আমিন-২, মো. কামরুজ্জামান, শেখ শহীদুল ইসলাম, শুকদেব ঢালী, হাসান মঞ্জুর হিলালী,

আমান উল্লাহ আমান, হামিদুল হক খান, রমেশ চন্দ্র বিশ্বাস ও চন্দন রায়। খিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়: সহকারী শিক্ষক মো. নাছির উদ্দিন চৌধুরী। এ প্রতিষ্ঠানের আরও কিছু শিক্ষকের নাম যাচাই করা হচ্ছে।

মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়: প্রভাতি শাখার সহকারী শিক্ষক আবুল হোসেন মিয়া (ভৌতবিজ্ঞান), মো. মোখতার আলম, (ইংরেজি), মো. মাইনুল হাসান ভূঁইয়া (গণিত), মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন (গণিত), মুহাম্মদ আফজালুর রহমান (ইংরেজি), মো. ইমরান আলী (ইংরেজি), দিবা শাখার সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ কবীর চৌধুরী, এ বি এম ছাইফুদ্দীন ইয়াহ, মো. মিজানুর রহমান, মো. আবুল কালাম আজাদ, মো. জহিরুল ইসলাম ও সহকারী শিক্ষক মো. জামাল উদ্দিন বেপারী।

মতিঝিল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়: প্রভাতি শাখার সহকারী শিক্ষিক নূরুন্নাহার সিদ্দিকা (সামাজিক বিজ্ঞান), দিবা শাখার সহকারী শিক্ষক শাহ মো. সাইফুর রহমান (গণিত), মো. শাহ আলম (ইংরেজি), মোসা. নাছিমা আক্তার (ভূগোল)।

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ: প্রভাতি শাখার সহকারী শিক্ষক কামরুন্নাহার চৌধুরী (ইংলিশ ভার্সন), ড. ফারহানা (পদার্থবিজ্ঞান), সুরাইয়া নাসরিন (ইংরেজি), লক্ষ্মী রানী, ফেরদৌসী ও নুশরাত জাহান।

মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ: প্রভাতি শাখার সহকারী শিক্ষক যোবায়ের মাহমুদ (গণিত), মো. নুরুদ্দিন (গণিত), মো. মেহেদী হাসান (গণিত), শহীদুল ইসলাম (ইংরেজি), তুহিনুর রহমান (রসায়ন), ফেরদৌস হাসান (ইংরেজি), শামসুন্নাহার (বাংলা), মো. মাছুদ আলম, (ইংরেজি), দিবা শাখার সহকারী শিক্ষক মো. দেলোয়ার হোসেন (ইংরেজি), মো. মোখলেছুর রহমান (গণিত), মো. নূরুজ্জামান (রসায়ন), মো. সাইফুল্লাহ (ইংরেজি), তাজুল ইসলাম (বাংলা) ও সহীদুর রহমান বিশ্বাস (ইংরেজি)।

গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল: মো. শাহজাহান সিরাজ (গণিত), মোহাম্মদ ইসলাম (গণিত), জাকির হোসেন (গণিত), মো. শাহজাহান (গণিত), মো. আবদুল ওয়াদুদ খান (সামাজিক বিজ্ঞান), মো. আলতাফ হোসেন খান (ইংরেজি), মো. আযাদ রহমান (ইংরেজি) ও রণজিৎ কুমার শীল (গণিত)।

রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল এন্ড কলেজ: এ বি এম মইনূল ইসলাম (গণিত), মো. আলী আকবর (গণিত), মো. রেজাউর রহমান (গণিত), মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম (ইংরেজী) ও মোহাম্মদ কামরুজ্জামান (রসায়ন)।

কোচিং নিয়ে অনুসন্ধানের এ পর্যায়ে দুদকের নজরদারিতে রয়েছে মহানগরীর ২১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অনুসন্ধানে ১১১ জন শিক্ষককে চিহ্নিত করা হয়েছে। ছয় সদস্যের টিমের অন্য সদস্যরা হলেন- সহকারী পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম, মো. আবদুল ওয়াদুদ, মনিরুল ইসলাম, ফজলুল বারী ও উপসহকারী পরিচালক আতাউর রহমান।

সোনালীনিউজ/আতা

Wordbridge School
Link copied!