• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১০ মে, ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

ভর্তুকি কমছে সামনের বাজেটে


অর্থনৈতিক রিপোর্ট এপ্রিল ২৩, ২০১৭, ০৩:৪৭ পিএম
ভর্তুকি কমছে সামনের বাজেটে

ঢাকা : আগামী অর্থ বছরের বাজেটে ভুর্তকি কমছে। গত কয়েক বছরের তুলনায় আসন্ন বাজেটে ভুর্তকির চাপ কমছে বলে অর্থ মন্ত্রনালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান। তারা বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য নিুমুখী ও জ্বালানি তেলের দাম কম থাকায় এ খাতে আগের চেয়ে বরাদ্দ কমেছে। ফলে সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় কিছুটা হলেও স্বস্তিতে আছে সরকার।

এদিকে, বাজেটে ভুর্তকি ক্রমান্বয়ে কমতে থাকাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন দেশের অর্থনীতিবিদরা। অর্থনীতিবিদরা বলেন, সরকারের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ ছিল ভর্তুকি। এখন সেই দুশ্চিন্তা কমেছে। কারণ, ভর্তুকি ব্যয় বেশি হলে আর্থিক চাপে থাকে সরকার।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ভর্তুকি অবশ্যই দরকার। তবে তার আগে টার্গেট গ্রুপ ঠিক করতে হবে সরকারকে। ভর্তুকি দেওয়ার ক্ষেত্রে এর কাঠামোগত সংস্কারের পরামর্শ দেন তিনি।
 
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাবেক কর্মকর্তা ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান মনসুর বলেন, কৃষক চান তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম। এটি নিশ্চিত করতে পারলে ভর্তুকি দেওয়ার প্রয়োজন হবে না। এজন্য টার্গেট গ্রুপ ঠিক করা প্রয়োজন।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, গত পাঁচ বছরে ভর্তুকিতে বরাদ্দ কমেছে শতকরা ৩৫ ভাগ। বরাদ্দ কমলেও সময়ের প্রয়োজনে চাহিদা বেড়েছে কিছু খাতে। যেমন উৎপাদন বাড়ার কারণে বিদ্যুতে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি লাগছে। বিদ্যুৎই একমাত্র খাত, যেখানে চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ দেওয়া হয়। অন্য ক্ষেত্রে বরাদ্দের নির্দিষ্ট সীমা দেওয়া আছে।

সূত্র জানায়, আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকিতে মোট ২৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হচ্ছে। প্রস্তাবিত এ বরাদ্দ মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির ১ দশমিক ২ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে মূল বাজেটে বরাদ্দ ছিল ২৮ হাজার কোটি টাকা। তবে সংশোধিত বাজেটে তা কমে নির্ধারণ করা হয় ২৩ হাজার কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, অর্থবছর শেষে সংশোধিত বাজেটে দেওয়া বরাদ্দ থেকে নিট খরচ হতে পারে ১৮ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা। জানা গেছে, পাঁচ বছর আগে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ভর্তুকিতে বরাদ্দ ছিল সাড়ে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। ওই বছর পুরো অর্থই খরচ হয়েছে। এ ব্যয় আলোচ্য অর্থবছরের জিডিপির প্রায় ৩ শতাংশ ছিল।

বর্তমানে ছয় থেকে সাতটি খাতে ভর্তুকি দেওয়া হয়। এর মধ্যে বিদ্যুৎ, কৃষি, রফতানি, খাদ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য উল্লেখযোগ্য। এর বাইরে আরও কিছু খাতে ভর্তুকি দেওয়া হয়। তবে এসব খাতে বরাদ্দ খুব কম থাকে। আগে জ্বালানি তেলে সবচেয়ে বেশি ভর্তুকি লাগত। বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমে যাওয়ায় গত অর্থবছর থেকে জ্বালানিতে ভর্তুকি দেওয়া বন্ধ করা হয়েছে। জানা গেছে, চলতি বাজেটের মতো আগামী বাজেটেও এ খাতে 'শূন্য' বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। কৃষিতে মূলত সার আমদানিতে ভর্তুকি দেওয়া হয়। আগামী বাজেটে এ খাতে নয় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে মূল বরাদ্দ ছিল নয় হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তিন হাজার কোটি টাকা কমানো হয়েছে।

বিদ্যুতে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সুত্র জানায়, দেশে ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে এ খাতে প্রয়োজনীয় ভর্তুকি দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ জন্য বরাদ্দের বেশি অর্থ দেওয়া হবে। চলতি মূল বাজেটে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হলেও সংশোধিত বাজেটে তা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।

গরিব জনগণকে সাশ্রয়ী দামে খাওয়ানোর জন্য খোলাবাজারে (ওএমএস) চাল বিক্রি করে সরকার। এ জন্য চাল-আটাতে ভর্তুকি দেওয়া হয়। আগামী বাজেটে এ জন্য আগের চেয়ে এক হাজার কোটি বাড়িয়ে চার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হচ্ছে। রফতানিকে উৎসাহিত করতে চার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। চলতি বাজেটে সমপরিমাণ টাকা দেওয়া হয়। মূলত তৈরি পোশাক পণ্য রফতানিতে এ সহায়তা দেওয়া হয়। পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানিতে আগের মতো ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হচ্ছে। এ ছাড়া অন্যান্য খাতে দেড় হাজার কোটি টাকা দেওয়া হচ্ছে। সব মিলিয়ে আসন্ন বাজেটে ভর্তুকি বাবদ ২৭ হাজার ৫০০ কোটি ব্যয়ের প্রস্তাব করা হচ্ছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!