ঢাকা: দুদকের দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গত ৮ ফেব্রুয়ারি পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। সেই থেকে তিনি পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রয়েছেন। এরপর থেকে নেত্রীর মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন সময় শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী পালন করে দলটি। একই সঙ্গে চালিয়ে যায় আইনি লড়াই। কিন্তু কোনো কিছুতেই দলের নেত্রীকে মুক্ত করতে পারেনি।
বেশ কিছুদিন ধরে কোনো আন্দোলন কর্মসূচীও পালন করেনি দলটির নেতাকর্মীরা। শুধু আইনি প্রক্রিয়াই চলছিল, কিন্তু একটার পর একটা মালায় জামিন আটকে যাওয়ায় তারা হতাশ। দলটি মনে করছে সরকার না চাইলে কোনোভাবেই বেগম জিয়ার মুক্তি সম্ভব নয়। আবারো রাজপথে নামার বিকল্প দেখছে না বিএনপি। তাই নতুন করে আন্দোলন কর্মসূচী পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আর এ আন্দোলন পরে কঠোর আন্দোলনে রুপ দেয়ার চিন্তা-ভাবনা চলছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
সোমবার (২ জুলাই) কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বাসে পেট্রোল বোমা হামলার ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় বেগম খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া ছয় মাসের জামিন স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে আগামী ৪ সপ্তাহের মধ্যে হাইকোর্ট রুল নিষ্পত্তির নির্দেশও দেয়া হয়েছে। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বিভাগের বিচারপতির বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
প্রতিবাদে আগামী ৫ জুলাই (বৃহস্পতিবার) ঢাকাসহ সারাদেশে প্রতিবাদ সমাবেশ এবং ৯ জুলাই (সোমবার) প্রতীক অনশন পালনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি।
দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ৫ জুলাই বিএনপি সারাদেশে প্রতিবাদ সমাবেশ করবে। ঢাকায় নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এ সমাবেশ হবে। আর ৯ জুলাই পালন করা হবে প্রতীকী অনশন। ঢাকায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বা মহানগর নাট্যমঞ্চে এ কর্মসূচি পালনের অনুমতি চাওয়া হবে।
এদিকে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সুপ্রিম কোর্টসহ সারাদেশে কালো পতাকা মিছিল ও বিক্ষোভ কর্মসূচী ঘোষণা করেছে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। বুধবার (৪ জুলাই) সুপ্রিম কোর্টসহ সারাদেশের সকল আইনজীবী সমিতিতে (বারে) এই কর্মসূচী পালন করা হবে।
সোমবার দুপুরে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির কক্ষের সামনে বিএনপির আইনজীবীদের অবস্থান কর্মসূচি পালন করার সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন এ ঘোষণা দেন। এ সময় খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা।
সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির (বারের) সভাপতির কক্ষের সামনে আইনজীবীরা এই কর্মসূচি পালন করেন। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম এই কর্মসূচির আয়োজন করে। এসময় নেতারা খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তার বিরুদ্ধে থাকা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান। অন্যথায় কঠোর কর্মসূচির হুশিয়ারি দেন তারা।
ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, গ্রেপ্তার-হামলা করে কোন আন্দোলন দমন করা যায় না। এর আগে এরশাদ চেষ্টা করে পারেনি। তাই বর্তমান সরকারও পারবে না। কুমিল্লার মামলায় সকল আসামি জামিনে আছে। অথচ খালেদা জিয়াকে জামিন দেওয়া হয়নি। আমরা আশা করেছিলাম খালেদা জিয়া ন্যায় বিচার পাবেন; কিন্তু তিনি ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থানার এ মামলায় গত ২৮ মে খালেদা জিয়ার ছয় মাসের অন্তর্বতীকালীন জামিন মঞ্জুর করেন বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ।
পরের দিন ২৯ মে জামিন স্থগিত করেন আপিল বিভাগের বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর চেম্বার জজ আদালত। একইসঙ্গে, জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল আবেদনের শুনানির জন্য নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন।
সোনালীনিউজ/জেএ
আপনার মতামত লিখুন :