• ঢাকা
  • শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

কে হচ্ছেন মেয়র, শামীম ওসমান না আইভী?


সুজন আকন, নিউজরুম এডিটর নভেম্বর ১৬, ২০১৬, ০২:২১ এএম
কে হচ্ছেন মেয়র, শামীম ওসমান না আইভী?

ঢাকা: নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী নিয়ে নানা গুঞ্জন শুরু হয়েছে। সরকারদলীয় দুই হেভিওয়েট প্রার্থী থাকায় কে পাচ্ছেন নৌকা প্রতীক তা জানার জন্য সবাই তাকিয়ে আছেন দলীয় প্রধানের দিকে। স্বাধীনতার পর থেকে বন্দরনগরী নারায়ণগঞ্জের যেকোনো নির্বাচনে দুটি প্রভাবশালী পরিবারই হয়ে ওঠে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। এবার সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও প্রশ্ন উঠেছে কে হচ্ছেন সিটি মেয়র? প্রভাবশালী আলী আহাম্মদ চুনকা পরিবারের যোগ্য উত্তরসুরী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, নাকি শামসুজ্জোহা পরিবারের প্রভাবশালী সদস্য শামীম ওসমান বা তার কোনো অনুসারি?

গত ২০১১ সালের মে মাসে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন গঠনের পর ৩০ অক্টোবর প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ওসমান পরিবারের প্রভাবশালী সদস্য শামীম ওসমান পান আওয়ামী লীগের সমর্থন। তবে বিলুপ্ত নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার আওয়ামী লীগ সমর্থিত তৎকালীন মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে লড়াইয়ে নামেন। ভোটের ফলাফলে, এক লাখেরও বেশি ভোট পেয়ে শামীম ওসমানকে পরাজিত করে দেশের প্রথম নারী মেয়র নির্বাচিত হন আইভী। পরে দলীয় প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের দুজনকে এক সঙ্গে ডেকে পাঠান।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনেই বিপুল ভোটে পরাজিত হওয়ার পর অনেকে প্রচার করেছিলেন শামীম ওসমান ‘শেষ’ হয়ে গেছেন। কিন্তু দুমাস পরে (১০ ডিসেম্বর, ২০১১) নারায়ণগঞ্জে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে শামীম ওসমানের নেতৃত্বে বিশাল শো ডাউনে ঢল নামে জনতার। শামীম ওসমান প্রমাণ করে দিলেন তিনি ফুরিয়ে যাননি। মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা তার প্রতি দুর্বল।

তবে শো ডাউনের আগে তার বিপুল পরাজয়ের কারণ ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে বিএনপি- জামায়াত কোটি কোটি টাকার খেলা খেলেছে। আমাকে পরাজিত করতে বিরোধীদলের নেতা ভোটের আগের রাতে তার প্রার্থীকে কোরবানি দিয়েছেন। ওই ভোটগুলো অন্য জায়গায় পড়েছে। পরাজয় থেকেও অনেক কিছু শেখার আছে।’ তবে নারায়ণগঞ্জ সিটির দ্বিতীয়বারের এই নির্বাচনে শামীম ওসমান প্রার্থী হচ্ছেন না বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। কারণ এবার তার সমর্থিত ‘সম্ভাব্য’ প্রার্থী হচ্ছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন।

বলা প্রাসঙ্গিক, ২০১১ সালের প্রথম সিটি নির্বাচনে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর পক্ষে একনিষ্ঠভাবে কাজ করেছিলেন এই আনোয়ার হোসেনই। তবে ২০১৪ সালের জুন মাস থেকে হঠাৎ করেই তিনি প্রভাবশালী ওসমান পরিবারপন্থী হিসেবে কাজ শুরু করেন। একাজে তিনি সঙ্গী করে নিয়েছেন, জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক রোকনউদ্দিন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিএম আরাফাতসহ ১০-১২ জন নেতাকে। যারা একসময় ওসমান পরিবারবিরোধী ছিলেন।

এদিকে, চলতি বছরের ২১ জুলাই নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী হিসেবে আনোয়ার হোসেনকে সমর্থন দেন। এমপি শামীম ওসমান সেখানে উপস্থিত থেকে সেই সমর্থনকে ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তা দিয়েছেন। সবশেষ গেল ২৯ অক্টোবর মহানগর আওয়ামী লীগের সমাবেশেও আনোয়ার হোসেন কান্নাজড়িত কণ্ঠে সবার সমর্থন চান। সেখানে শামীম ওসমান বলেন, ‘যদি আনোয়ার হোসেন মনোনয়ন পান তাহলে তার জন্য আমরা নিঃস্বার্থভাবে কাজ করব।’ যদিও ওই ঘোষণার আগে থেকেই শামীম ওসমান আনোয়ার হোসেনের পক্ষে সামনাসামনিই কাজ করছেন।

অপরদিকে, প্রায় ১৪ বছর পর গেল ৯ অক্টোবর ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে করা হয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। অথচ আগের বছরে (২০১৫) ডিসেম্বরে ঘোষিত মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটিতে তিনি স্থানই পাননি। তবে এর মধ্যেই সন্দেহ তৈরি হয়েছে, আনোয়ার হোসেন শেষ অবধি নৌকা প্রতীক পাবেন কিনা? কারণ ইতোমধ্যে সরকার মেয়র সেলিনা হায়াৎ ইভীকে উপমন্ত্রীর মর্যাদা ও উন্নয়নের জন্য ১৯১ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ দিয়েছে। শুধু তাই নয়, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নগর ভবনে আইভীর সঙ্গে আমেরিকার রাষ্ট্রদূত বার্নিকাটের বৈঠকে তার পক্ষে নৌকার ইঙ্গিতের রব ওঠে।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলেও কোনো কথা বলতে চাচ্ছেন না ডা. আইভী। তবে শুধু বলেন, ‘আপাতত আমি কিছু মন্তব্য করব না।’ এর আগে সিটি করপোরেশনের সবশেষ বাজেট অনুষ্ঠানে আইভী বলেছিলেন, ‘আমি কাজ করলে আমার কাজের মূল্যায়ন করবে জনগণ। আর নৌকার মালিক হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সময়মতো তিনিই নৌকার মাঝি ঠিক করবেন।’

আইভীর ভগ্নিপতি জেলা যুবলীগের সভাপতি আবদুল কাদির বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে আইভীই পাচ্ছেন নৌকা প্রতীক। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা আমাদের এ ব্যাপারে সবুজ সংকেতও দিয়েছেন। অচিরেই আমরা আইভীর পক্ষেই মাঠে নামব।

তবে আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘দলের তৃণমূল আমাকে সমর্থন দিয়েছে। আমি নৌকা প্রতীক নিয়েই নির্বাচন করব আশা করছি। আমি দলের একজন ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা। নেত্রী অবশ্যই আমাকে মূল্যায়ন করবেন।’

নেতাকর্মীরা বলছেন, শামীম ওসমান নির্বাচনে প্রার্থী না হলেও আনোয়ার হোসেনই হবেন মূলত তার ‘পুতুল’ প্রার্থী। শামীম ওসমান যা বলবেন সেভাবেই চলবেন এই প্রার্থী। আর সে কারণেই বলা হচ্ছে, মূল লড়াইটা হবে আইভীর সঙ্গে শামীম ওসমানেরই। আর আইভী মনোনয়ন পেলেও তার বিজয় ঠেকাতে চেষ্টা করবেন শামীম ওসমান শিবির। সেক্ষেত্রেও লড়াইটা গিয়ে দাঁড়াবে শামীম ওসমান-আইভীর মধ্যেই। কারণ নির্বাচনে পরাজয়ের ক্ষোভ তার রয়েই গেছে।

সোনালীনিউজ/এমএন

Wordbridge School
Link copied!