• ঢাকা
  • শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১

ছেলেকে টপকালেন সেই মা


জেলা প্রতিনিধি মে ৪, ২০১৭, ১০:৩১ পিএম
ছেলেকে টপকালেন সেই মা

মলি রাণীকে মিষ্টি খাওয়াচ্ছেন ছেলে

নাটোর: মানুষ তো অনন্ত সম্ভাবনার। অসাধ্য বলে কিছু নেই তার কাছে। ইচ্ছে করলে যেকোনো মুহূর্ত থেকেই নতুন যাত্রা করতে পারে মানুষ। দিতে পারেন অসাধ্য সাধনের প্রমাণ। আর এবার এমন প্রমাণ দিলেন নাটোরের গৃহবধূ মলি রাণী (৩৭)।

মলি নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার গালিমপুর গ্রামের মিষ্টি ব্যবসায়ী দেবব্রত কুমারের স্ত্রী। নবম শ্রেণিতে পড়াকালীন বাল্যবিয়ের শিকার হয়ে বইখাতা ছাড়তে হয়েছিল তাকে।

কিন্তু ছেলে মৃন্ময় কুমার (১৬) যখন নবম শ্রেণিতে উঠলো, তখনই মনে পড়ে গেল তার পড়া ছাড়ার ঘটনা। মনের ভেতর লুকিয়ে থাকা ইচ্ছেরা পাখা মেললো। নতুন করে পড়ালেখা করার কথা জানালেন স্বামীকে।

মলি রাণীর ইচ্ছের পাখায় নতুন পালক গুঁজে দিলেন তার স্বামী আর ছেলে। ভর্তি হলেন বাগাতিপাড়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে কারিগরি শাখায় ড্রেস মেকিং অ্যান্ড টেইলারিং ট্রেডে। ছেলে তখন বাগাতিপাড়া মডেল পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের কারিগরি শাখার বিল্ডিং মেইনটেন্যান্স ট্রেডে।

শুরু হলো মা ছেলের নতুন অভিযান। একই টেবিলে বসে চলতে থাকলো পড়ার লড়াই। অবশেষে নবম আর দশম শ্রেণি শেষ করে চলতি বছরে মা ছেলে বসলেন এসএসসি পরীক্ষা দিতে। এ নিয়ে প্রথম শ্রেণির জাতীয় দৈনিকে খবরও প্রকাশ হলো। 

এরপর আজ বৃহস্পতিবার ( ৪ মে) সেই মা ছেলের বহু কাঙ্ক্ষিত ফলাফল। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, মা ছেলে দুজনেই ভালোভাবে পাস করেছেন। তবে ফলাফলে মা টপকে গেছেন ছেলেকে। ছেলে পেয়েছে জিপিএ–৪.৪৩। আর মা পেয়েছেন জিপিএ–৪.৫৩। মাকে মিষ্টি খাইয়ে দিয়ে দুজনে ভালো ফলের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিলেন।

মলি রাণী জানালেন, ছেলের সঙ্গে পরীক্ষা দেয়ার কথা ভেবে প্রথমে খুব লজ্জা লাগছিল। তবে প্রবল আগ্রহই তাকে উৎসাহ জোগায়। তারা পাল্লা দিয়ে পড়াশোনা করতেন। সামনে আরো পড়াশোনা করে স্নাতক পাস করার ইচ্ছা আছে মলি রাণীর। মায়ের ভালো ফলে খুশি ছেলে মৃন্ময়। জানালো, সামনের পরীক্ষায় মাকে টপকে যাওয়ার আশা তার।

মলি রাণী নওগাঁর মান্দা উপজেলার প্রসাদপুরের অসিত কণ্ডুর মেয়ে। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় তার বাল্যবিয়ে হয়ে যায়। সে কারণে পড়ায় ছেদ পড়ে। সংসার জীবনে কোলে আসে দুটি সন্তান। তারা পড়ালেখা শুরু করে। সংসারের কাজের ফাঁকে ফাঁকে সন্তানদের পড়াতেন মলি রাণী।

ফলাফল প্রকাশের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘মেয়েরা সবসময় পরীক্ষায় ভালো ফল করে। ছেলেদের আরও ভালো করতে হবে।’ এবারের ফলাফলে মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে এগিয়ে। যেমন এগিয়ে মলি রাণী। তিনি প্রমাণ করলেন, ইচ্ছে থাকলে কোনো বাধাই বাধা নয়।

সোনালীনিউজ/এন

Wordbridge School
Link copied!