পাবনা: পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার বেতুয়ান গ্রামে কোনো রাস্তা নেই। সারা বছর জুড়েই ভোগান্তিতে পড়তে হয় গ্রামের বাসিন্দাদের। তাদের নিজেদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করাসহ রোগীদের নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে সংশ্লিষ্টদের সহায়তা চেয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
ভাঙ্গুড়া উপজেলার দিলপাশার ইউনিয়নের বেতুয়ান গ্রামটি আকারে বিশাল। গ্রামের পূর্বপাড়া, উত্তরপাড়া, খাঁ পাড়া, সরকার পাড়া, বাওনজানপাড়া, চালাপাড়া, দক্ষিণপাড়া, নদীপাড়া, শুকনোপাড়া মিলেই এই বেতুয়ান গ্রাম। গ্রামে প্রায় আট হাজার ভোটার আছেন। আর বসতি ২০ হাজার মানুষের।
গ্রামজুড়ে রয়েছে ছয়টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, একটি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, দুটি মাদরাসা, ১২টি মসজিদ ও একটি মন্দির। রয়েছে ওয়ার্ডভিত্তিক কমিউনিটি ক্লিনিক, গ্রামের মানুষের একমাত্র খেলাধুলার মাঠ ও ঈদগাহ্ মাঠ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অন্য দশটি গ্রামে যা রয়েছে এখানে তার চেয়ে বরং বেশি কিছু রয়েছে। কিন্তু সবকিছু ম্লান হয়েছে রাস্তা নেই বলে। যুগ-যুগ ধরে এই ভোগান্তি চলে আসলেও গ্রামবাসী পায়নি একটি রাস্তা। সময়ের প্রয়োজনে গ্রামে সড়ক পথের গুরুত্ব বেড়ে গেছে।
কিন্তু গ্রামবাসীকে বাড়ীর পাশ দিয়ে, জমির আইল দিয়ে হেঁটে যেতে হয়। ক্ষেতের ফসল ঘরে তোলা, হাটবাজারে যাওয়াসহ রোগী হাসপাতালে নেওয়াতে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কারণ গ্রামের মধ্যে কোনো যানবাহন ঢোকার মতো অবস্থা নেই।
সরেজমিনে কথা হয় বেতুয়ান গ্রামের আলহাজ্ব গফুর মোল্লাসহ বেশ কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে। তারা কেউ কৃষক, কেউ ছাত্র, কেউ ব্যবসায়ী। এসব নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ জানান, তাদের অন্যের বাড়ীর ওপর দিয়ে, আঙিনা দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। অনেক নারী এতে বিব্রত ও ক্ষুব্ধ হন। কারও কারও বকাঝকা ও গালমন্দও শুনতে হয় তাদের।
সিরাজুল ইসলাম নামের এক বাসিন্দা বলেন, তাদের গ্রামের শেষ প্রান্তে রয়েছে বিশাল ফসলি মাঠ। এসব মাঠের ফসল ঘরে তুলতে তাদের রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়। এ বাড়ি, ও বাড়ীর ফাঁক ফোঁকর দিয়ে ফসল ঘরে তোলা তাদের জন্য মহাকষ্টের।
গ্রামের বেশ কয়েকজন প্রবীণ ব্যক্তি জানান, টাকা-পয়সা বা সম্পত্তি তাদের কম নেই। সামাজিক মর্যাদাও আছে। কিন্তু চলতি পথে সামাজিকভাবে ছোট হতে হচ্ছে। এর সমাধান কবে হবে তারা তা জানেন না। এত বিরাট একটি গ্রাম অথচ চলাচলের রাস্তা নেই। এটা কল্পনাও করা যায় না। শুধুমাত্র একটি যাতায়াতের পথ এই গ্রামের শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ্য, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নসহ সার্বিক চিত্র পাল্টে দিতে পারে বলে মনে করেন তারা।
বেতুয়ান গ্রামের কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি ফরিদুল ইসলাম বলেন, এই গ্রামে নেই কোনো রাস্তা। মাঠের মধ্যে অবস্থিত কমিউনিটি ক্লিনিক। রোগীকে আসতে হবে অন্যের জমির আইল দিয়ে। কেবল চলাচলের রাস্তা না থাকায় বর্ষা মৌসুমে কাদা ও হাঁটু পানি পাড়ি দিয়ে রোগীদের আসতে হয়।
দিলপাশার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান বলেন, এ গ্রামে রাস্তার জন্য বিভিন্ন সময়ে প্রকল্প দাখিল করা হলেও সেগুলো আলার মুখ দেখেনি। এ গ্রামে একটি রাস্তা হলে গ্রামবাসীর সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে।
এ বিষয়ে ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান সোনালীনিউজ কে জানান, উপজেলার বেতুয়ান গ্রামবাসীর যোগাযোগের জন্য রাস্তাটি খুবই জরুরি। রাস্তা তৈরির বিষয়ে তার আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই। স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ স্থানীয় অন্য জনপ্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা করে পানি নিষ্কাশন পথ রেখে একটি প্রকল্প নেওয়ার বিষয়ে তিনি চেষ্টা করছেন বলে জানান।
সোনালীনিউজ/এসএইচ/এসআই
আপনার মতামত লিখুন :