• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কিশোরীকে ধর্ষণ, ধামাচাপা দিতে মরিয়া ইউপি সদস্য 


লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি মে ৩১, ২০২৩, ১২:২৫ পিএম
কিশোরীকে ধর্ষণ, ধামাচাপা দিতে মরিয়া ইউপি সদস্য 

ফাইল ছবি

লক্ষ্মীপুর: দুই সপ্তাহের প্রেম। সেই সুবাদে বিয়ের উদ্দেশে ঘর ছাড়ে ১৫ বছরের কিশোরী। পরে তাকে ফিরতে হয়েছে প্রেমিক ও তার বন্ধুর দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়ে। আর ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে স্থানীয় ইউপি সদস্য। রোববার (২৮ মে) ঘটনা ঘটেছে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নে। ভুক্তভোগী ওই এলাকার দিনমজুর শাহজাহানের মেয়ে। 

অভিযুক্ত যুবকের নাম বাবর। তার বাড়ি ভবানীগঞ্জের সুতারগোপ্তা এলাকায়। ঘটনার সঙ্গে জড়িত বাবরের সহযোগীদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। 

ভুক্তভোগী সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী কিশোরী ও তার পরিবারের সদস্যদের মুখ খুলতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন তিনি ইউপি সদস্য। আইনের আশ্রয়ও নিতে পারছেন না ভুক্তভোগী পরিবারটি। ভিকটিম মেয়েটি যেন কারও সঙ্গে কথা বলতে না পারে সেজন্য, ওই ইউপি সদস্য শাহ আলম ভুক্তভোগীকে তার নিজের বাড়িতে রেখেছেন বলে জানিয়েছেন কিশোরীর মা। 

এদিকে ভুক্তভোগী কিশোরী তার প্রেমিক বন্ধুসহ দুইজনের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হওয়ার দাবি করলেও ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য শাহ আলম বলছেন তিনি বিষয়টি জানেন না। মেয়েটিকে শুধুমাত্র বিয়ের প্রলোভনে একটি ছেলে নিয়ে গিয়ে প্রতারণা করেছেন বলে তিনি অবগত হয়েছেন। 

ঘটনার বিবরণে কিশোরী জানায়, অভিযুক্ত বাবর পেশায় একজন ট্রাক্টর ও ধানকাটা মেশিনচালক। তাদের বাড়ির পাশের জমি থেকে মেশিনের সাহায্যে ব্যুরো ধান কাটে বাবর। এ সুবাদে প্রায় দুই সপ্তাহ আগে মেয়েটির সঙ্গে পরিচয় তার। বাবর তার মোবাইল নাম্বার নিয়ে তাতে কল দিয়ে তাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। প্রথমে রাজি না হলেও পরে তাকে বিয়ের করার আশ্বাস দেন বাবর। এতে সে রাজি হয় এবং তাদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে উঠে। 

কিশোরী আরও জানায়, বাবর তাকে পালিয়ে বিয়ে করার প্রস্তাব দেয় এবং চার লাখ টাকা কাবিন করারও সিদ্ধান্ত নেয়। রাজি না হলে তাকেসহ তার পরিবারের ক্ষতি করার হুমকি দেয় বাবর। পরে গত রোববার (২৮ মে) সন্ধ্যার পর বাবর কিশোরীকে নিয়ে যেতে তাদের বাড়ির পাশে একটি রিকশা পাঠায়। কিশোরী মেয়েটি পরিবারের সকলের অগোচরে ওই রিকশাতে করে সুতারগোপ্তা এলাকায় যায়। বাবর তাকে নামিয়ে একটি ফসলি মাঠে নিয়ে যান। এসময় কিশোরীর মোবাইল ফোনটি রেখে দেয় সে। মাঠে বাবরের এক বন্ধু অপেক্ষায় ছিল। পরে তার আরও এক বন্ধু সেখানে চলে আসে। বিপদ আঁচ করতে পেরে কিশোরী ফিরে যেতে চায়। এতে তিনজনের সঙ্গে ওই কিশোরীর হাতাহাতি হয়। 

ভুক্তভোগী কিশোরী বলেন, ঘটনার এক পর্যায়ে বাবর তাকে প্রথমে ধর্ষণ করে, পরে তার অন্যবন্ধু তাকে ধর্ষণ করেছে। অন্যজন তাকে কিছু করার সুযোগ পাননি। পরে তোরাবগঞ্জ বাজার এলাকা সংলগ্ন লক্ষ্মীপুর-রামগতি সড়কের পাশে মেয়েটিকে রেখে পালিয়ে যায় তারা। মেয়েটি রাতে সেখানকার একটি বাড়িতে আশ্রয় নেয় এবং বাড়ির লোকজনের কাছে সবকিছু খুলে বলে। পরদিন সকালে ওই বাড়ির লোকজন কিশোরীকে তার পরিবারের হাতে তুলে দেয়। 

কিশোরী অভিযোগ করে বলেন, বাবর তাকে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে ঘর থেকে বের করে নিলেও সে তার সঙ্গে প্রতারণা করেছে। বাবর বিবাহিত এবং তার সন্তানও রয়েছে। বিষয়টি সে গোপন রাখে। তাই তার প্রলোভনে রাজি হই। কিন্তু সে এবং তার বন্ধু আমার সর্বনাশ করেছে। বাবরের সঙ্গে যে দুইজন ছিল তাদেরকে আমি চিনতে পারিনি, তবে দেখলে চিনব। 

মেয়েটির মা জানায়, আমার কিশোরী মেয়ের সর্বনাশ করেছে। আমি স্থানীয় মেম্বারকে জানিয়েছি। মেম্বার বলেছে বিচার করে দিবে। কিন্তু তিনদিন পার হয়ে গেল, এখনও কোনো বিচার পাইনি। মেম্বার বলেছে- মেয়েকে তার বাড়িতে রেখে আসতাম, এলাকার কেউ যাতে কিছু জিজ্ঞেস না করতে পারে। সাংবাদিক আসলেও যেন তাদের কাছে কিছু না বলি। যা বলার মেম্বারে বলবে। 

মেয়েটির বড়ভাই ইমন বলেন, আমার বোনের ক্ষতি করেছে। মেম্বার বিচার করবে বলেছে। সে কিছু না করলে আমাদেরকে আইনের আশ্রয় নিতে হবে। 

এদিকে স্থানীয় ইউপি সদস্য শাহ আলম অভিযুক্ত বাবরের পক্ষ নিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া চেষ্টা করছে বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছে। তাই বিচারের নামে সময়ক্ষেপণ এবং তালবাহানা করছেন তিনি। 

ইউপি সদস্য শাহ আলম বলেন, মেয়েটিকে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে বাবর নামে এক ছেলে ঘর থেকে বের করে নেয়। তাকে নাকি একটি ফসলের মাঠে নিয়ে গেছে। সেখানে মেয়েটি জানতে পারে বাবর বিবাহিত এবং তার সন্তান আছে। তাই মেয়েটি বিয়ে না করে পালিয়ে গিয়ে রাতে এক বাড়িতে আশ্রয় নেয়। পরদিন বাড়িতে আসে। 

তিনি আরো বলেন, মেয়ে এবং ছেলে আমার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। কিন্তু ঘটনাস্থল ৬ নম্বর ওয়ার্ডে। এ বিষয়ে আমার কাছে কোনো পক্ষ বিচার চায়নি। পরিষদে বা আমার কাছে লিখিতও দেয়নি। 

মেয়েটি দু’জনের দ্বারা ধর্ষণ হয়েছে এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সে এ বিষয়ে আমাকে কিছু বলেনি। 

লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোসলেহ উদ্দিন বলেন, বিষয়টি শুনেছি। ইতোমধ্যে একজন এসআইকে তদন্ত করার জন্য বলা হয়েছে। ঘটনাটি জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর-সার্কেল) সোহেল রানাকে অবহিত করা হলে তিনি খোঁজ খবর নিয়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান। 

সোনালীনিউজ/জেইউবি/এসআই

Wordbridge School
Link copied!