• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

কুমিল্লা নগরীতে আবারও বেপরোয়া কিশোর গ্যাং


কুমিল্লা প্রতিনিধি  নভেম্বর ২৪, ২০২৩, ০২:১৫ পিএম
কুমিল্লা নগরীতে আবারও বেপরোয়া কিশোর গ্যাং

কুমিল্লা: কুমিল্লা নগরীতে আবারও কয়েকটি কিশোর গ্যাং সক্রিয়ভাবে প্রকাশ্যে দিবালোকে রীতিমতো তাণ্ডব চালিয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠছে। তাদের হাতে একাধিক খুনের ঘটনাও ঘটেছে। অনেকে ধারনা করছে সামনের নির্বাচনে এই কিশোর গ্যাংগুলোকে ব্যবহার করা হতে পারে। সেটা হলে এই গ্যাং এর দৌরাত্ম আরও বাড়বে। তারা এখন গ্রুপ ভিত্তিক চলাচলের পাশাপাশি প্রকাশ্যে হাতে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মিছিল করে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকের প্রোফাইলে ছবি তুলে জানান দিচ্ছে।

বুধবার নগরীর চকবাজার রহমানিয়া মেডিকেল হলের সামনে প্রকাশ্যে রাস্তার উপরে সাইফুল ইসলাম সুজন (২৮) নামে এক যুবককে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করে কিশোর গ্যাং কল মেহ আকিব নামের একটি গ্রুপ। পরে ওই এলাকায় কিশোর গ্যাংদের এমন ঘটনায় মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এসব কার্যক্রমের কারনে নগরীতে অনিরাপদ মনে করছেন বাসিন্দারা। এর আগেও নগরীতে এই কিশোর গ্যাং দ্বারা কয়েকটি হত্যাকান্ডের ঘটনাও ঘটেছে।

জানা গেছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অঙ্গ সংগঠনের নেতারা এসব কিশোর গ্যাং পরিচালনা করে থাকেন। এর জন্য প্রথমে বেপরোয়া কিশোরদের বিভিন্নভাবে একত্রিত করেন তারা। এরপর নিজেকে 'বড় ভাই' হিসেবে দেখিয়ে তাদের জড়িয়ে দেন বিভিন্ন অপরাধে। পরে সেই অপরাধ থেকে নিজেই তাদের উদ্ধার করে বনে যান দয়ার অবতার। এরপর নিজেদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে তাদের দিয়ে গড়ে তোলেন গ্যাং। তারা নগরীতে প্রতিনিয়ত ত্রাসের রাজত্ব করে যাচ্ছে। এতে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে স্থানীয় বাসিন্দাদের মনে।

জানা যায়, নগরীর চকবাজার আম দিঘীর পাড়, হাউজিং এস্টের, নূরপুর, নগর উদ্যানের আশপাশ, ফৌজদারি চতুর, মোগলটুলী, তালপুকুরপাড়, ঠাকুরপাড়া, মদিনা মসজিদ সড়ক, কেন্দ্রীয় ঈদগাহ এলাকা, চর্থা থিরাপুকুরপাড়, অশোকতলা, শহরতলীর ধর্মপুর, চাঁনপুর, বাখরাবাদ, কান্দিরপাড়, পুলিশ লাইন্স এলাকা, শাসনগাছা, নোয়াপাড়া চৌমুহনী, পুরাতন চৌয়ারা এলাকায় নিয়মিত শো-ডাউন করে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। 

অনেক সময় স্কুল-কলেজ পড়ুয়া মেয়েদের ইভটিজিং, ছেলেদের মারধর, কিশোর- কিশোরীদের একত্রে দেখলে নির্যাতন, প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে ঘোরাঘুরি, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, চুরি, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপকর্মে কিশোর গ্যাং সদস্যদের জড়াতে দেখা যায়। এসব ঘটনা দেখেও প্রাণ ভয়ে চোখ-মুখ বন্ধ রাখেন স্থানীয়রা। মামলা হয় না বলে তদন্তে নামে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

এসব গ্যাংয়ের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর 'ঈগল গ্যাং'। এটির সদস্য ৯ শতাধিক। নগরীর বিভিন্ন দেয়ালে এই গ্যাংয়ের লোগো ও নাম আঁকা রয়েছে। তাদের নামের ওপর কোনও ব্যানার-পোস্টার লাগালে আক্রমণ করে বসে। এই গ্রুপের স্লোগান 'বার্থ টু ফ্লাই' (ওড়ার জন্যই জন্ম)। শহরের উল্লেখযোগ্য বাকি কিশোর গ্যাংগুলো হলো- রয়েল বেঙ্গল, সিজলিন, জে অ্যান্ড জে, বিগ ব্রাদার, টুইস্ট, ব্ল‍্যাক স্টার, ডার্ক, ঈগল, আরজিএস, র‍্যাক্স, এক্স, এলআরএন, সিএমসি, মডার্ন, রক স্টার, ডিস্কো বয়েজ, বস প্রভৃতি। এসব গ্যাংয়ের বেশিরভাগ সদস্যের বয়স ১২-১৫ বছর। গাঁজা, ইয়াবা, ধূমপানসহ সব ধরনের নেশায় তারা আসক্ত। একটির সঙ্গে আরেকটি গ্যাংয়ের দ্বন্দ্বও রয়েছে। কার চেয়ে কে শক্তিশালী- এই দ্বন্দ্বে তারা নানা ধরনের সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে। তাছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক গ্যাংগুলো নিরীহ শিক্ষার্থীদের নানাভাবে হয়রানি করছে। 

নগরবাসীর কয়েকজন জানান, 'কিশোর গ্যাংয়ের ছেলেগুলো ছোট। সবার আগে দেখতে হবে তাদের কেউ ব্যবহার করছে কি-না। রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় এসব ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে তারা। তাই রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দিকেও নজর রাখা প্রয়োজন। সামনে নির্বাচন তাদেরকে অনেকে ব্যবহঙ্গী করবে তাই প্রশাসন এখন থেকে তৎপরতা বৃদ্ধি করলে হয়তো এদের হতে নগরবাসী রেহাই পাবে। কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আহাম্মদ সঞ্জুর মোরশেদ বলেন, চকবাজারের যে ঘটনা ঘটেছে তাদের আটক করতে ও এসব গ্যাং ও গ্রুপ সম্পূর্ণ বন্ধের লক্ষ্যে সর্বত্র সচেতনতামূলক কার্যক্রম করে যাচ্ছি। 

কুমিল্লা সদর সার্কেল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরান হোসেন বলেন, সকল কিশোরগ্যাংদের চিহ্নত করে তাদের গ্রুপ গুলোকে ভেঙে ফেলা হয়েছে। ঈগল কিশোর গ্যাং সদস্যরা যে হত্যাকান্ড ঘটিয়েছিল। তাদের চার্জশিটও হয়ে গেছে। নতুন করে আরেকটি গ্রুপের নাম জানতে পরেছি। তাদের কার্যক্রম বন্ধ করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। নির্বাচনকে সামনে রেখে এসবের আনাগোনা যাতে না হয় তার জন্য প্রশাসন সজাগ আছে।

এমএস

Wordbridge School
Link copied!