যশোর: ঋতু অনুযায়ী শীতের বিদায় ঘণ্টা বেজে দরজায় কড়া নেড়ে হাতছানি দিচ্ছে ঋতুরাজ বসন্ত। ইংরেজি এ মাসেই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দিবস। এই তিনটি দিবসেই ফুল অতি প্রয়োজনীয়। পহেলা ফাল্গুন বসন্তকে বরণ করে নিতে রঙিন ফুলের জুড়ি নেই। বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে প্রিয়জনকে দেয়া গোলাপের সুঘ্রাণে ভালবাসা বেড়ে যায় বহুগুন। একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ভাষা শহিদদের স্মরণে দেয়া হয় পুস্পার্ঘ্য। এ কারনে ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে ফুলের রাজধানী খ্যাত যশোরের গদখালী জুড়ে উৎসবের আমেজ বয়ে চলে। ফলে তিন দিবস ঘিরে গদখালী ফুলের বাজার জমজমাট হয়ে উঠেছে। বাজার ধরতে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ত সময় পার করছেন এই অঞ্চলের ফুলচাষিরা। তিন দিবসে ১শ' কোটি টাকার ফুল বিক্রির সম্ভাবনা প্রকাশ করেছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
গদখালী ও পানিসারা অঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, শীতের সকালে কুয়াশা ভেদ করে চাষীরা ফুলক্ষেতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রয়োজনমাফিক পানি দেয়া, স্প্রে করা, আগাছা নিড়ানো, মরা-রোগাক্রান্ত গাছ তুলে ফেলাসহ ক্ষেত পরিচর্যায় তাদের দম ফেলবার সময় নেই। পাশাপাশি ক্ষেত থেকে ফুল তুলে নিয়ে ছুটছেন গদখালি ফুলবাজারে। দূর-দূরান্তের ক্রেতারাও হাজির হচ্ছেন সেখানে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠছে গোটা এলাকা। গোলাপ, রজনীগন্ধা, গাঁদা, গ্লাডিওলাস, জারবেরা ফুলের পসরা সাজিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন শত শত ফুলচাষী। কেউ ভ্যান, কেউ সাইকেল বা ঝুড়ির মধ্যে ফুল রেখে ঢাকা ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সাথে ফুলের দাম নিয়ে হাক-ডাকে ব্যস্ত। ফুলের চাহিদা বাড়তি থাকায় পাইকারি ব্যবসায়ীরা অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি ফুল কিনছেন এই বাজার থেকে। একই সাথে বেশি দাম পাওয়ায় ফুল চাষীরাও বাজারে দ্বিগুণ ফুল এনেছেন। সবমিলিয়ে ফুল-বেচাকেনা জমে উঠায় ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীদের মনে এখন উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।
গদখালী ফুলবাজার ঘুরে দেখা গেছে, বসন্ত ও ভালবাসা দিবসকে ঘিরে ফুলের বাজার জমজমাট হয়ে উঠেছে। ফুলের পসরা সাজিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন শত শত ফুলচাষী। কেউ ভ্যান, কেউ সাইকেল বা ঝুড়ির মধ্যে ফুল রেখে ঢাকা ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সাথে ফুলের দাম নিয়ে হাক-ডাকে ব্যস্ত। ফুলের চাহিদা বাড়তি থাকায় পাইকারি ব্যবসায়ীরা অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি ফুল কিনছেন এই বাজার থেকে। একই সাথে বেশি দাম পাওয়ায় ফুল চাষীরাও বাজারে দ্বিগুণ ফুল এনেছেন। সবমিলিয়ে ফুল-বেচাকেনা জমে উঠায় ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীদের মনে এখন উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) প্রতি পিস লাল গোলাপ বিক্রি হয়েছে ২২ থেকে ২৫ টাকা দরে। এছাড়া চায়না গোলাপ লংস্টিক ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, গ্লাডিওলাস রঙভেদে ২০ থেকে ২৫ টাকা, জারবেরা ১৫ থেকে ১৮ টাকা, রজনীগন্ধা ও ভুট্টা ১৫ টাকা, ১০০ পিস চন্দ্রমলিকা ৫০০ টাকা, জিপসি প্রতি আঁটি ১০০ টাকা ও গাঁদা ফুল প্রতি হাজার ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, জিপসি ফুল প্রতি আঁটি ১০০ টাকা, মকমল ৪-৫ টাকা, ভ্যারাটিস ৭-৮ টাকা, হলুদ ১৪-১৫ টাকা, সিঁদুর ১৫-১৫ টাকা, বিশ্ব সুন্দরী ১২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ফুলচাষি রহমত আলী জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ফুলের চাষ ও উৎপাদন ভাল হয়েছে। তিন উৎসব ঘিরে ফুলবাজার চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। ভাল বেচাকেনা হচ্ছে। বাজার পরিস্থিতিতে ফুলচাষীরা খুশি। আরেক ফুল চাষী রহমত আলী জানান, এবার ফুল বিক্রি করে বেশ ভালো দাম পাচ্ছে। এতে তারা খুশি। ফুল ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত চাষী গোলাম রসুল জানান, এখন দম ফেলার ফুসরত নেই। শেষ মুহূর্তে ক্ষেত পরিচর্যা করে ফুল ধরে রেখে বাজারে তুলতে হবে। ফুলের মান ভাল থাকলে ভাল দাম পাওয়া যাবে।
ফুল বিক্রেতা মোমিনুর রহমান জানান, এখন যে দামে ফুল বিক্রি হচ্ছে, তা দু’একদিন পরে দাম আরও বেড়ে যাবে। সারাদেশ থেকে পাইকাররা আসছেন। ফলে বসন্ত দিবস ও ভালবাসা দিবসে ভাল দাম পাবেন ফুলচাষীরা। আরেক ব্যবসায়ী মারুফ হোসেন জানান, তার ক্রয়কৃত ফুল তিনি চারটি জেলায় বিক্রি করবেন।
গদখালী বাজার কমিটি ও গ্রায়ার্স সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল হোসেন জানান, এবার ফুলের বাজার খুবই জমজমাট। ফুলের দামে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা খুবই খুশি। বাজারের চারিপাশে নানা রকমের ফুল আর ফুল। ঝিকরগাছার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন পলাশ জানান, ঝিকরগাছার ৬৩০ হেক্টর জমিতে ৭২ প্রজাতির ফুল চাষ হয়ে থাকে। এই অঞ্চলের প্রায় ৭ হাজার ফুলচাষী দেশের ৭০ভাগ ফুলের চাহিদা মেটায়। এবার আবহওয়া অনুকূলে থাকায় এবং যথাসময়ে শীত পড়ায় ফুলের উৎপাদন ভাল হয়েছে। পাশাপাশি পোকার আক্রমণও অনেক কম। এ কারণে ফুল বিক্রি করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। ভরা মৌসুমে বেশি দামে ফুল বিক্রি করে চাষীরা দারুণ খুশি।
যশোর ফুল উৎপাদন ও বিপনন সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম জানান, গতবছর বসন্ত উৎসব, ভালবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘিরে প্রায় ৬০ কোটি টাকার বেশি ফুল বেচাকেনা হয়েছিল। গতবারের চেয়ে এবার ফুলের চাহিদা অনেক বেশি। বেচাকেনা ১শ' কোটি টাকা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এমএস
আপনার মতামত লিখুন :