লালমনিরহাট : লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা গ্রামের বাসিন্দা ১০৭ বছর বয়সী বৃদ্ধা নূরজাহান বেওয়া। বয়স শতক পেরিয়ে গেলেও তার শরীর এখনো বেশ সচল। বার্ধক্যের ছাপ পড়লেও দৃষ্টিশক্তি এখনও প্রখর। চশমা ছাড়াই তিনি এখনো নিয়মিত পাঠ করেন কোরআন শরীফ, বই ও পত্রিকা।
নূরজাহান বেওয়ার শারীরিক অবস্থা বেশ ভালো। এই বয়সেও তিনি কোনো বড় ধরণের রোগ-ব্যাধিতে ভুগছেন না। লাঠি ছাড়াই চলাফেরা করতে পারেন। বাড়ির দৈনন্দিন কাজগুলো তিনি নিজেই করেন। শত বছরেরও বেশি বয়সী এই বৃদ্ধার প্রখর দৃষ্টিশক্তির সুনামে এলাকাতেও তিনি বেশ পরিচিত।
বৃদ্ধা নুর জাহান বেওয়া লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়নে মহিষখোঁচা বাজার সংলগ্ন এলাকার মরহুম মহির খানের স্ত্রী। তার জন্ম ১৯১৮ সালে ।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, শতবর্ষী বৃদ্ধা নুর জাহান বেওয়ার এখনো রয়েছে চোখের জ্যোতি, কানেও বেশ ভালোই শোনেন। চশমা ছাড়াই পড়েন পবিত্র কোরআন শরীফ, পড়েন পত্রিকা, ব্যবহার করেন মোবাইল ফোনও। কাপড় কাচা, ভাত রান্না, ঘর গোছানোসহ নিজের সব কাজ নিজেই করছেন। অন্যের সাহায্য ছাড়াই নিয়মিত করছেন চলাফেরা। বয়সের ভাড়ে ন্যুয়ে পড়লেও মনের দিক থেকে তিনি এখনো চিরতরুণ প্রখর মনবলের অধিকারী।
চার পুত্র সন্তান ও চার কন্যা সন্তানের জননী নুর জাহান বেওয়া তার বাড়িতে একাই থাকেন। স্বামীর স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি ছেড়ে তিনি কোথাও যেতে চান না। কোনো সন্তান বা নাতীদের কেউ তাকে নিজের কাছে রাখতে চাইলে তাদের সাফ জানিয়ে দেন, স্বামীর ভিটাতেই যেন তাঁর মৃত্যু হয়। পুত্র ও কন্যা সন্তানরাও হয়েছেন বৃদ্ধ। মারা গেছেন দুই পুত্র। তবে সন্তানরা কেউ মায়ের কাছে না থাকলেও মায়ের দেখাশোনার জন্য বাড়িতে রেখেছেন কাজের মেয়ে ও ছেলে।
শিক্ষিত ও ধার্মীক এই নারী তৎকালীন স্বনামধন্য বিদ্যাপীঠ রংপুর কৈলাশ শঙ্কর বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেছেন। মেধাবী হওয়ায় পেয়েছেন শিক্ষা বৃত্তি। তৎকালীন প্রতি মাসে আড়াই টাকা করে বৃত্তি পেয়েছেন তিনি। নিজের সন্তানদের করেছেন উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত। ছেলেরা সবাই করেছেন উচ্চ পদে চাকরি। সকলের জন্য অনুকরণীয় এই মহীয়সী নারী।
বৃদ্ধা নুর জাহান বেওয়ার ছোট মেয়ে সুলতানা বেগম (৬৫) জানান, আমার মা বয়সে ও শরীরে বৃদ্ধ হলে মনের দিক থেকে তিনি বৃদ্ধ হননি। তিনি এখনো সুস্থ সবল চলাফেরা করছেন এটা সৃষ্টিকর্তার রহমত। আমার মা এখনো চশমা ছাড়াই কোরআন শরীফ পড়তে পারেন। পত্রিকা পড়েন। কেউ ফোন করলে নিজেই রিসিভ করে কথা বলেন। নিজের কাজ নিজেই করতে ভালোবাসেন। এসময় তিনি তার মায়ের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।
স্থানীয় মসজিদের ইমাম মাওলানা আব্দুল কাদের জানান, ১০৭ বেঁচে থাকা ও সুস্থ থাকা আল্লাহর বিশেষ নেয়ামত। এমন নেয়ামত আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন শুধু তাকেই দান করেন। নূরজাহান বেওয়ার এই অসাধারণ জীবনীশক্তি ও প্রখর দৃষ্টিশক্তি দেখে এলাকার লোকজন বিস্মিত। তার দীর্ঘায়ু ও সুস্থ জীবনযাপনের গল্প এখন মানুষের মুখে মুখে ফেরে।
পিএস







































