• ঢাকা
  • শনিবার, ১১ মে, ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থ মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে সু বার্তা না আসায় শেয়ারবাজারে বড় পতন


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ৮, ২০২১, ০৩:১৯ পিএম
অর্থ মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে সু বার্তা না আসায় শেয়ারবাজারে বড় পতন

ফাইল ছবি

ঢাকা: শেয়ারবাজারের অস্থিরতা নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বৈঠকের বিষয়ে আশানুরূপ কোন বার্তা না পাওয়ায় বুধবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বড় পতন হয়েছে। 

মঙ্গলবার বহুল প্রতীক্ষিত এই বৈঠকের বিষয়ে গণমাধ্যমকর্মীদেরকে তেমন কিছুই জানানো হয়নি। ফলে বুধবার (৮ ডিসেম্বর) শেয়ারবাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছে বাজার সংশ্লিষ্টরা।

আজ ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স ৯৬ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৬ হাজার ৫৯২ পয়েন্টে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই৩০ সূচক ৩৯ পয়েন্ট এবং ডিএসইএস বা শরীয়াহ সূচক ১৩ পয়েন্ট কমেছে।

এদিন ডিএসইতে ১ হাজার ১৫২ কোটি ৩৯ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। যা আগের দিন থেকে ১৭৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা কম। গতকাল ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৩৩১ কোটি ৪ লাখ টাকার।

বুধবার ডিএসইতে মোট ৩৭৪টি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৯৭টির, দর কমেছে ২৫৭টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ২০টি কোম্পানির।

অন্যদিকে অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচকের পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। সিএসই সার্বিক সূচক ২৪৯ পয়েন্ট কমে ২০ হাজার ৩৬০ পয়েন্টে অবস্থান করছে। সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৫৩ কোটি টাকার শেয়ার।
 
মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এবং শেয়ারবাজার কার্যক্রম সমন্বয় ও তদারকি কমিটির আহ্বায়ক মফিজ উদ্দীন আহমেদের সভাপতিত্বে বহুল প্রতীক্ষিত বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির পক্ষে উপস্থিত ছিলেন নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান ও মাহবুবুল আলম। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন অফ সাইট সুপারভিশন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক আনোয়ারুল ইসলাম।

এসময় বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বিএসইসির প্রতিনিধি ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, অর্থ বিভাগ এবং রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আইসিবির প্রতিনিধি।

বৈঠক শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকরা বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমানের কাছে বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বৈঠকের বিষয়ে নাহিদ ভাই (আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম সচিব ড. নাহিদ হোসেন) কথা বলবেন।’

এরপর সাংবাদিকরা যুগ্ম সচিব নাহিদ হোসেন এবং অতিরিক্ত সচিব মফিজ উদ্দীন আহমেদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা কথা বলতে চাননি।

তবে যুগ্ম সচিব নাহিদ হোসেন এবং বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, বৈঠকে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, শেয়ারবাজারের চলমান অস্থিরতা নিয়ে অর্থমন্ত্রণালয়ের চলমান বৈঠকে কোন সিন্ধান্ত হয়নি। তবে আলোচনা ইতিবাচক হয়েছে। ২০১৯ সালের যে বিষয়গুলো নিয়ে অর্থমন্ত্রীর সাথে আলোচনা হয়েছিল সেই বিষয়গুলো নিয়ে আজকে আলোচনা হয়েছে। আগামী একমাসের মধ্যে যার যার অস্থানের প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এ মাসে বা আগামী একসপ্তাহের মধ্যে আরও একটি বৈঠক হতে পারে। সেই বৈঠকের পর শেয়ারবাজারে দৃশ্যমান কিছু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এদিকে কয়েক মাস ধরে দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের মতো বিভিন্ন ইস্যুতে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে শেয়ারবাজারে। দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিরোধ প্রকাশ্য রূপ নেয়ায় টানা আট কার্যদিবস দরপতন হয় শেয়ারবাজারে।

এ পরিস্থিতিতে ৩০ নভেম্বর বৈঠকে বসে এই দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থা। বৈঠক শেষে বিএসইসি কমিশনার শেখ শামসু‌দ্দিন আহমেদ বলেন, পুঁজিবাজারের অদা‌বিকৃত ডিভিডেন্ড নি‌য়ে গঠিত স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের ব্যাপারে একমত বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে বিষয়‌টি নিয়ে কিছু আইনগত অস্পষ্টতা রয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে কথা হয়েছে। বিএসই‌সি-বাংলাদেশ ব্যাংক উভয়পক্ষ এ বিষ‌য়ে আন্তরিক। আমা‌দের কা‌রও সঙ্গে কারও কোনো মতবিরোধ নেই।

বিএসইসির এই কমিশনার বলেন, বৈঠকে আমার মনে হয়েছে শেয়ারবাজারের উন্নয়নে বাংলাদেশ ব্যাংক খুবই আন্তরিক। যে কারণে তারা বন্ডে বিনিয়োগকে বিনিয়োগ সীমার বাহিরে রাখার অঙ্গীকার করেছেন। এছাড়া বিনিয়োগ সীমা গণনায় বাজার দরের পরিবর্তে কস্ট প্রাইসকে বিবেচনায় নেয়ার যে দীর্ঘদিনের চাহিদা রয়েছে, সেটাও তারা সমাধান করবে। এ জন্য যা করণীয় তারা তাই করবেন।

বিএসইসির পক্ষ থেকে এমন বক্তব্য আসার পর ১ ডিসেম্বর শেয়ারবাজারে বড় উত্থান হয়। ডিএসইর প্রধান সূচক একদিনে বেড়ে যায় ১৪৩ পয়েন্ট। তবে সন্ধ্যার দিকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, বৈঠকে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।

বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়, শেয়ারবাজারে তফসিলি ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয়ে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

এতে আরও বলা হয়, ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ১৯৯৩-এ শেয়ারবাজারে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগের বিষয়ে বিদ্যমান কতিপয় আইনি সীমাবদ্ধতার বিষয়ে বিএসইসির প্রতিনিধি দলকে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সভার পরে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের প্রতিনিধির বরাত দিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ওই সভার কতিপয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের যে সংবাদ প্রচার করা হয়েছে, তা সঠিক নয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর একেএম সাজেদুর রহমান খানের সভাপতিত্বে বিএসইসির সঙ্গে পূর্ব নির্ধারিত এ সভা কেন্দ্রীয় ব্যাংক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়।সভায় বিএসইসির উদ্যোগে ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড গঠনের ফলে তফসিলি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সৃষ্ট জটিলতা নিরসন এবং পুঞ্জিভূত লোকসান বিদ্যমান থাকলেও সংশ্নিষ্ট বছরের মুনাফা হতে নগদ লভ্যাংশ বিতরণের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

এছাড়া সভায় ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ এর ৩৫(১)(গ) ধারা ও ২২ ধারা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন ১৯৯৩ এর ১০ ধারার বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করে ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অদাবিকৃত তহবিল স্থানান্তর এবং পুঞ্জিভূত লোকসান থাকা সত্ত্বেও নগদ লভ্যাংশ দেওয়া আইনসম্মত নয় বলে অভিহিত করা হয়েছে। এ বিষয়ে বিএসইসির নির্দেশনায় প্রয়োজনীয় সংশোধন আনতে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এমন সংবাদ বিজ্ঞপ্তি আসার পর ওইদিন রাতেই শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন গ্রুপে বিনিয়োগকারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এতে বিনিয়োগকারীদের এক ধরনের আতঙ্কের চিত্র উঠে আসে।

আর পরের দিন ২ ডিসেম্বর লেনদেন শুরু হতেই বাজারে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ডিএসইতে লেনদেন শুরুত হতেই প্রধান মূল্য সূচক ৮৬ পয়েন্ট পড়ে যায়। তবে শেযারবাজার নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বৈঠকের তথ্য প্রকাশ হওয়ার পর ওইদিনই শেয়ারবাজারে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। শুরুর বড় পতন কাটিয়ে বড় ধরনের উত্থান দিয়ে দিনের লেনদেন শেষ হয়। ওইদিন ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক বাড়ে ৮৯ পয়েন্ট। 

এর পরে প্রত্যেক কার্যদিবসই সূচকের উত্থানে লেনদেন হয়েছে। তবে আজ আবার পতনে মোড় নিলো শেয়ারবাজার।

সোনালীনিউজ/এমএইচ

Wordbridge School
Link copied!