ঢাকা : দুই বছর আগে ২০২০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারী বাজারে প্রতি লিটার ভোজ্য তেলের মূল্য ছিল ৭৮ টাকা লিটার। আজ ঠিক দুই বছর পরে ভোক্তাকে এই তেল ক্রয় করতে গুনতে হচ্ছে ১৪৬ টাকা। দুই বছরে প্রায় দিগুন বৃদ্ধি পেয়েছে খোলা সয়াবিন তেলের দাম। এক বছর আগেও এই তেল বিক্রি হয়েছে ১১২ টাকায়। টিসিবি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে দেশের প্রায় প্রতিটি ভোগ্যপণ্যের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি। ভোজ্যতেল ছাড়াও বাজারে এখন মুরগির দাম বেশ চড়া। বেড়েছে চিনির দামও। স্বল্প আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। তারা টিসিবির ট্রাকের সামনে ভিড় করছেন। এমন সময়ে ভোজ্যতেলের দাম আরেক দফা বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়বে মানুষ। ফলে শুধু রান্নার তেলের পেছনেই এখন বাড়তি ব্যয় করতে হবে তাদের। গত দেড় মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে স্বল্প আয়ের মানুষের। ব্যয় বৃদ্ধির চাপ সইতে না পেরে পরিবর্তন আনছে জীবনধারার। খাদ্যাভ্যাস ও আবাস্থল পরিবর্তন করে টিকে থাকতে নানা কৌশল অবলম্বন করতে হচ্ছে তাদের।
জানতে চাইলে কনজুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, আর্ন্তজাতিক বাজারে তেলে দাম বেড়েছে। কিন্তু মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়েনি। আমাদের কর্মসংস্থান কমেছে। করোনার প্রভাবে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। বেতন কমে গেছে। সরকার দেশের পদ্মা সেতু, পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা বন্দরসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু আমার ক্রয় ক্ষমতা না বাড়লে এই উন্নয়ন আমার কি কাজে আসবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, সয়াবিন তেলের দাম নিয়ে মিল মালিকদের কারসাজি দীর্ঘদিনের। তাদের এই কারসাজি ধরতে অতীতে কয়েকবার রিফাইনারি কারখানার প্রধান কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়েছে। এই অভিযান থেকে ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ ও টিকে গ্রুপও বাদ যায়নি। এছাড়া, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত মনিটরিং টিম মেঘনা ও সিটি গ্রুপের মিলও পরিদর্শন করেছে।
দেশের ভোজ্যতেলের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে ৫টি পরিশোধনকারী কারখানা। এই ৫ কারখানার মালিকই নির্ধারণ করেন বাজারে সয়াবিন তেলের মূল্য কত হবে। তারা ঠিক করেন, দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নিলে কত কমবে, আদৌ কমবে কি না। বর্তমানে দেশের ১১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ভোজ্যতেল আমদানিতে সবগুলো প্রতিষ্ঠান সক্রিয় নেই। সক্রিয় প্রতিষ্ঠানগুলোই মূলত বাংলাদেশের ভোজ্যতেলের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে বলে জানা গেছে।
দেশে ১৬ কোটি মানুষের জন্য বছরে ভোজ্যতেলের মোট চাহিদা হচ্ছে ১৫ লাখ টন। এর মধ্যে সয়াবিনের চাহিদা ১১ লাখ টন, পামঅয়েলের চাহিদা ৩ লাখ টন এবং সরিষা তেলের চাহিদা ১ লাখ টন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে দাম নির্ধারণ করা হচ্ছে। যখন আর্ন্তজাতিক বাজারে দাম কমবে, তখন দেশের বাজারেও কমানো হবে। বিভিন্ন সময় আর্ন্তজাতিক বাজারে দাম কমলেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দাম কমায়নি। এই বছরের শুরুতে ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করলে সরকার তাতে সায় না দিয়ে কিছুদিন সময় নেয়। তবে ব্যবসায়ীরা সরকারের কথা শোনেনি। বরং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মৌন সম্মতিতে খোলা তেলের দাম তাদের সুবিধা অনুযায়ী বাড়িয়ে নিয়েছে।
ক্রেতাদের অভিযোগ, ভোজ্যতেলের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার যেভাবে ব্যবস্থাপনা করা দরকার, তা হয় না। হাতেগোনা কয়েকটি ব্যবসায়ী গ্রুপ এ পণ্যটির ব্যবসা করছে। সরকার ওইসব কোম্পানির সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে ভোক্তা স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা করছে। এখন যে পরিস্থিতি, তাতে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে তেলে শুল্ক প্রত্যাহার করা যেতে পারে।
সোনালীনিউজ/এসআই/এমএএইচ
আপনার মতামত লিখুন :