• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
সাক্ষাৎকারে আরিফুল ইসলাম

পুঁজিবাজারে এক নতুন মাত্রা অর্জন করবে ‘ফিক্সড ইনকাম নো ডিভিডেন্ড ফান্ড’


আবদুল হাকিম জুলাই ১৯, ২০২২, ০৩:৩৮ পিএম
পুঁজিবাজারে এক নতুন মাত্রা অর্জন করবে ‘ফিক্সড ইনকাম নো ডিভিডেন্ড ফান্ড’

ঢাকা : দেশের পুঁজিবাজারে সন্ধানী এসেট ম্যানেজমেন্ট তাদের প্রথম মিউচ্যুয়াল ফান্ড সন্ধানী এএমএল এসএলআইসি ফিক্সড ইনকাম ফান্ড বাজারে নিয়ে এসেছে। এটি দেশের প্রথম ফিক্সড ইনকাম সিকিউরিটিজ ভিত্তিক নো ডিভিডেন্ড ওপেন-এন্ডেড ফান্ড। নতুন এই ফান্ডটি বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে সক্ষম হবে। নতুন এই ফান্ড নিয়ে সোনালী নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন সন্ধানী অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মীর আরিফুল ইসলাম।

সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সোনালীনিউজের স্টাফ রিপোর্টার আবদুল হাকিম।

সোনালীনিউজ : ফিক্সড ইনকাম নো ডিভিডেন্ড ফান্ডে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে আপনারা কি কি পরিকল্পনা নিয়েছেন?

আরিফুল ইসলাম: দেশের পুঁজিবাজারে একটি নতুন মাত্রা অর্জন করতে যাচ্ছে ফিক্সড ইনকাম নো ডিভিডেন্ড ফান্ড। আমরা আমাদের ফান্ডটিকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি ফিক্সড ইনকাম নো ডিভিডেন্ড ওপেন-এন্ডেড ফান্ড হিসেবে। সাধারণত বাজারে বিদ্যমান মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো তাদের প্রকৃতি অনুযায়ী তাদের বিনিয়োগকারীদের নির্দিষ্ট সময় পরপর লভ্যাংশ (Dividend) প্রদান করে থাকে। কিন্তু আমাদের ফান্ডটি হবে সকল বিদ্যমান ফান্ডগুলোর চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। ফান্ডটি বিনিয়োগকারীদের সরাসরিভাবে কোন ডিভিডেন্ড প্রদান করবে না। এই ফান্ডের প্রাথমিক ফিচার হচ্ছে কমপক্ষে ট্রেজারি, এফডিআর, করপোরেট বন্ডে ৩০ শতাংশ ইনভেস্টমেন্ট করতেই হবে। তবে সর্ব্বোচ্চ ১০০ শতাংশ পর্যন্ত করা যাবে। এরপর ক্যাপিটেল মার্কেট এবং মানি মার্কেটের ওঠা নামার গতি অনুযায়ী পোর্টফোলিও সাজাবো। কখনো বাড়াবো আবার কখনো কমাবো কারণ এখন ইক্যুইটি মার্কেট খুব ভালো করবে তা বলা যায় না তবে এ সময় ফিক্সড ইনকাম ফান্ডে রিটার্ন ভালোই আসে। আমাদের টার্গেট যারা দীর্ঘ মেয়াদী বিনিয়োগ করতে চায় এবং স্থায়ী ইনকাম করতে চায় তাদের কাছে পৌছা। আমাদের প্রথম টার্গেট এফডিআরে যে ইনকাম দেয় তার থেকে বেশি দেওয়া এবং ডাবল ডিজিট ইনকাম দেওয়া। এই দুইটা বিষয় মাথায় রেখে রিটার্ন দেওয়ার চেষ্টা থাকবে।

সোনালীনিউজ: প্রচারণা না থাকায় আমাদের মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাত অনেক পিছিয়ে, সেক্ষেত্রে আপনাদের কোন মাস্টার প্লান আছে কিনা? 

আরিফুল ইসলাম: আমাদের বাজারে অনেক ফান্ড আছে যাদের নামও অনেকে জানে না। কিন্তু আমরা প্রথম দিনেই একটা প্রমোশনাল প্রোগ্রাম করেছি। কারণ আমরা চাই নতুন প্রোডাক্ট সম্পর্কে মানুষ জানুক। একটা সময় আসবে জেনে বুঝে মানুষ এদিকে ধাবিত হবে। এরপর আমরা রিটেইল লেভেলে যাবো। আমরা এখন পর্যন্ত ১৪টি সেলিং এজেন্টের সঙ্গে চুক্তি করেছি। কিন্তু অন্যদের দেখবেন এটা একজন অথবা দুইজনের বেশি নেই, এমনকি কারো কারো একেবারেই নেই। বাংলাদেশে এই প্রথম ব্রোকার, মার্চেন্ট ব্যাংক এবং লাইফ ইন্সুরেন্সকেও রিটেইলার হিসেবে নিয়েছি যা এর আগে কেউ নেয়নি। এরপর আমাদের টার্গেট ব্যাংক। ইতোমধ্যে আমরা বেশ কয়েকটি ব্যাংকের কাছে আমাদের প্রস্তাবনা পৌছে দিয়েছি। তারাই হবে আমাদের সেলিং এজেন্ট। এই নেটওয়ার্কিংটা কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন এএমসি করেনি। সামনে হয়তো অনেকে করবে কিন্তু এখন এটা আমরা করতেছি। হয়তো আগামী ৬ মাসের মধ্যে ব্যাংকগুলো আমাদের সেলিং এজেন্ট হয়ে যাবে। এর মধ্যে সম্ভবত থাকবে বিকাশ রকেটের মতো প্রতিষ্ঠান।

সোনালীনিউজ: সন্ধানী অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের যাত্রার তৃতীয় দিন চলছে, এক্ষেত্রে প্রত্যাশা অনুযায়ী সাড়া কেমন পাচ্ছেন?

আরিফুল ইসলাম: এখন পর্যন্ত আমরা ভালোই সাড়া পাচ্ছি। যে কোন কাজ শুরু করলে একটু সময় দিতে হয়। আমরা সেই অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছি। আমরা প্রমোশনাল কাজগুলো করছি এবং যে পরিকল্পনা সাজিয়েছি সে তুলনায় কাজের অগ্রগতি খুবই ভালো। এক কথায় ভালোই ফিডব্যাক পাচ্ছি। বিশেষ করে আমরা এখন বেশি জোর দিচ্ছি সেলিং এজেন্ট বৃদ্ধি করতে। এখন যেহেতু আমাদের সক্ষমতার অভাবে আমরা বিভিন্ন জায়গায় ব্রাঞ্চ করতে পারছি না। তাছাড়া এই খাতটি আমাদের সবার কাছে পরিচিত না। যদিও এখানে ভালো রিটার্ন পাওয়া যায় কিন্তু এটার প্রচারণা তেমন না থাকায় একটু সমস্যা হচ্ছে। কারণ সবাইকে আগে বুঝাতে হবে এটা সম্পর্কে। সেক্ষেত্রে আমরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে সেলিং এজেন্ট করে তাদের মাধ্যমে আমরা ফান্ডটি সেল করবো। এতে করে আমরা কাঙ্খিত জায়গায় পৌঁছাতে বেশি সমস্যা হবে না এবং সময় কম লাগবে। কারণ ব্রোকার, মার্চেন্ট ব্যাংক এবং লাইফ ইন্সুরেন্সের তাদের নিজস্ব ক্লায়েন্ট আছে সেক্ষেত্রে আমরা ফান্ডটি তাদের মাধ্যমে সহজে বিক্রি করতে পারবো।


সোনালীনিউজ: আপনাদের ফিক্সড ইনকাম নো ডিভিডেন্ড ফান্ডটি বিনিয়োগকারীদের জন্য কতটুকু নিরাপদ?

আরিফুল ইসলাম: নিরাপত্তার কথা আসলে আমি বলবো ফিক্সড ইনকাম নো ডিভিডেন্ড ফান্ডে ব্যাংকের থেকে অধিক নিরাপদ। কারণ এখন বেশ কয়েকটা ব্যাংকে টাকা রাখাটা ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু আমাদের সেক্টরে এখন পর্যন্ত কোন ফান্ড ম্যানেজার টাকা মেরে দেওয়ার মত ঘটনা ঘটেনি। আর এটা সম্ভবও না। আমরা এ্যাসেট ম্যানেজ করি তবে আমাদের হাতে কিছু থাকে না, সব থাকে কাস্টডিয়ানের কাছে। কাস্টডিয়ান সব কিছু সংরক্ষণ এবং রক্ষণাবেক্ষণ করে। সুতারাং আমাদের টাকা পয়সা নিয়ে চলে যাওয়ার সুযোগ নেই। সব অ্যাসেটের হেফাজতকারী হলো কাস্টডিয়ান এ ক্ষেত্রে আমাদের কাস্টডিয়ান হলো ব্রাক ব্যাংক। 

গত ৪-৫ বছরের মধ্যে যতগুলো ফান্ড আছে বেশির ভাগই ভালো রিটার্ন দিয়েছে। মার্কেট যখন পড়ে যায় তখন অন্যান্য ফান্ডগুলো ইক্যুইটি নির্ভর হওয়ায় তারাও ইফেক্টেট হয়। এখানে ফিক্সড ইনকাম ফান্ড ঘোষণা অনুযায়ী রিটার্ন দিবে। তবে আবার মার্কেট যখন ভালো হবে তখন আবার এই ফান্ড বেশি ইনকাম দিতে পারবে না ঐ নির্দিষ্ট লাভই জেনেরেট হবে। অর্থাৎ আপনারা মার্কেট থেকে বিভিন্ন শেয়ার কিনলে তা যদি দর পতন হয় আপনাদের লস হবে কিন্তু যত ট্রেজারি বন্ড কিংবা করপোরেট বন্ড কিনেছেন সেটা কিন্তু স্টেইবল বা স্থায়ী রিটার্ন দিবে। এটাই হচ্ছে এই ফান্ডের বড় ফিচার। যেখানে ফান্ডের রিটার্ন নির্দিষ্ট।

সোনালীনিউজ: ডিভিডেন্ড পাওয়ার আশা বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কিনে থাকে, আপনাদের ফান্ডটি বিনিয়োগকারীদের সেই সুযোগ থেকে বিরত রাখছে কি?

আরিফুল ইসলাম: আপাতদৃষ্টিতে, তাই মনে হলেও খেয়াল করে দেখবেন যে ফান্ডটি বিনিয়োগকারীদের সেই সুযোগ থেকে বিরত রাখছে না। ফান্ডটির বিনিয়োগকারীরা ক্রয়কৃত ইউনিট নিয়মিতভাবে বা যেকোনো সময় সারেন্ডার করে নগদায়ন করতে পারবে। নো ডিভিডেন্ড এর ফলে একজন বিনিয়োগকারী শুধু নিজের মত করে ডিভিডেন্ড তৈরিই করছে না পাশাপাশি অধিকতর Tax Benefit (কর রেয়াত) ও পাচ্ছে।

ধরুন, একজন ব্যক্তি বিনিয়োগকারী তার মিউচ্যুয়াল ফান্ড বিনিয়োগে প্রাপ্ত ডিভিডেন্ড আয় এর প্রথম ২৫ হাজার টাকা কর অব্যাহতি (Tax Exemption) পেলেও, অবশিষ্ট ডিভিডেন্ড আয়ের ১০-১৫ শতাংশ কর দিতে হয়। কিন্তু নো ডিভিডেন্ড প্রকৃতির কারনে ফান্ডটির সকল আয় ক্যাপিটাল গেইন হিসেবে ধরা হয় এবং তা ব্যক্তি বিনিয়োগকারীর জন্য সম্পূর্ণ কর অব্যাহতি দেওয়া হয়। এখানে ঐ বিনিয়োগকারী ফান্ডের এই বৈশিষ্ট্যের জন্য ১০-১৫ শতাংশ কর কম দিচ্ছে। একইভাবে, মিউচ্যুয়াল ফান্ডে একটি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী তার ঐ বিনিয়োগের আয়ের ১০ শতাংশ পর্যন্ত কর অব্যাহতি পাচ্ছে।

সোনালীনিউজ: আপনাদের ফান্ডের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী আপনাদের টার্গেট ইনভেস্টর কারা?

আরিফুল ইসলাম: স্বাভাবিকভাবে আপনি যদি লক্ষ্য করেন দেখবেন যে আমাদের দেশের বেশিরভাগ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তাদের টাকাকে ফিক্সড ডিপোজিট করে একটা ফিক্সড রিটার্ন পেতে চায়। কিন্তু দেশের স্বনামধন্য ব্যাংকগুলোর ইন্টারেস্ট রেট পর্যালোচনা করলে দেখা যে তাদের ইন্টারেস্ট রেট আমাদের মূল্যস্ফীতি কে অতিক্রম করতে পারে না। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানের নামে ফিক্সড ডিপোজিট করলে অর্জিত ইন্টারেস্টের উপর ট্যাক্স দিতে হয়।

এজন্য আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে ওই ধরনের বিনিয়োগকারীদের কাছে আমাদের ফান্ড উপস্থাপন করা যারা তাদের ক্যাপিটালকে সুরক্ষিত রাখার পাশাপাশি এ স্ট্যাবল রিটার্ন অর্জন করতে চায়।

সোনালীনিউজ/এনএন

Wordbridge School
Link copied!