• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

পোশাক রপ্তানি : ক্রেতার বার্তায় চিন্তার রেখা


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ৭, ২০২৩, ১০:৩৭ পিএম
পোশাক রপ্তানি : ক্রেতার বার্তায় চিন্তার রেখা

ঢাকা : আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের ওপর আগেই ভিসানীতি প্রয়োগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। পরে শ্রম নীতিমালায় ভর করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরাও বিভিন্নভাবে সরকারকে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। এবার পশ্চিমা বিশ্বের পোশাকের ক্রেতাদের কাছ থেকেও ‘বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা’র বার্তাই আসছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়লে কোনো ঋণপত্রের অর্থ পরিশোধ করা হবে না বলে শর্ত দিয়েছে একটি আন্তর্জাতিক পোশাক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান।

প্রতিষ্ঠানটির শর্তে বলা হয়েছে, কোনো দেশ, অঞ্চল বা দল নিষেধাজ্ঞায় পড়লে কোনো লেনদেন করা হবে না। তারা এটিও বলেছে, কোনো বিলম্ব বা নন-পারফরম্যান্স সম্পর্কিত সমস্যার জন্য তারা দায়ী থাকবে না।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান প্রতিষ্ঠানটির নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘ক্রেতা প্রতিষ্ঠানটি খুচরা ও ব্র্যান্ডের বিক্রেতা। অতীতে তারা এ ধরনের কোনো শর্ত দেয়নি।’

বুধবার (৬ ডিসেম্বর) দিনের শুরুতে ফারুক হাসান গণমাধ্যমে বলেন, নতুন শর্ত দেওয়ায় দুশ্চিন্তা একটু বাড়ল। কারণ, এতে করে অনেক ব্যাংক মূল ঋণপত্রের বিপরীতে ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্র খুলতে না-ও পারে। তার কারণ হচ্ছে, নতুন এই শর্তের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির পর অর্থপ্রাপ্তির বিষয়টিতে কিছুটা অনিশ্চয়তা থেকে যায়। আবার ক্রেতা পণ্য না নিলে স্টক হয়ে যেতে পারে। অনেক ব্যাংক আবার ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্র স্বাভাবিকভাবে খুলবে। এটিকে বড় করে দেখবে না। কারণ, তাদের এ খাতের ওপর বিশ্বাস রয়েছে। ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্র খুলতে যাতে কোনো সমস্যা না হয়, সে জন্য সরকারের ওপরমহলে কথা বলবেন বলেও জানান বিজিএমইএর সভাপতি।

তবে রাতে গণমাধ্যমে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টিকে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের চিঠির ভুল ব্যাখ্যা বলে দাবি করেছেন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান। তিনি বলেন, এই ধারাটির ব্যাখ্যায় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একটি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে বলে উদ্বেগ ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে, যা সঠিক নয়।

উল্লেখ্য যে এলসি একটি নির্দিষ্ট ক্রেতার কাছ থেকে এসেছে এবং এটি কোনো দেশের দ্বারা সংবিধিবদ্ধ আদেশ বা বিজ্ঞপ্তি নয়। সুতরাং এটিকে বাংলাদেশের ওপর বাণিজ্য প্রয়োগ বা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার পরিমাপ হিসেবে ভুল ব্যাখ্যা করা উচিত নয়। আমরা বাণিজ্যিক উপকরণে এ ধরনের ধারা অন্তর্ভুক্ত করাকে সমর্থন করি না, যদি এটি শুধু বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত ১৬ নভেম্বর নতুন শ্রম আইনে স্বাক্ষর করেছেন। আন্তর্জাতিক শ্রম আন্দোলনে শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় এ আইনটি পাস করা হয়েছে। এতে সতর্ক আছেন তৈরি পোশাক কারখানার মালিকরা।

ফারুক হাসান বলছেন, স্মারকলিপিতে কূটনৈতিক ও সহায়তার সরঞ্জামগুলোর সম্পূর্ণ পরিসর স্থাপন এবং যথাযথভাবে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা, বাণিজ্য জরিমানা, ভিসা বিধিনিষেধ এবং অন্যান্য পদক্ষেপসহ বেশ কয়েকটি পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে, তবে এটি বাংলাদেশের জন্য গৃহীত নয়; বরং এটি শ্রমিক অধিকার ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা অবস্থান।

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, শ্রমিকদের অধিকার এবং কল্যাণ আমাদের জন্য একটি সর্বোচ্চ বিবেচ্য বিষয়। বাংলাদেশ সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে একটি শ্রম রোডম্যাপ বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং ২০১৩, ২০১৮ ও ২০২৩ সালে শ্রম আইনের সংশোধনসহ এটি বাস্তবায়নের জন্য সব প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। শ্রম বিধিগুলো ২০১৫ সালে জারি এবং ২০২২ সালে সংশোধন করা হয়েছিল।

ফারুক হাসানের মতে, আমাদের অনেক রপ্তানি বাজারের জন্য মানবাধিকার এবং পরিবেশের দাবিটি দিনে দিনে বাড়ছে। বাংলাদেশ সরকার বাণিজ্য অংশীদারদের সঙ্গে সরাসরি জড়িত।

বিশ্ববাণিজ্যের দৃশ্যপট দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে; মানবাধিকার ও পরিবেশগত কারণে ক্রমবর্ধমান অগ্রাধিকার পাচ্ছে। অন্যদিকে ভূরাজনৈতিক বিষয়গুলোও বাণিজ্যকে প্রভাবিত করছে। যেহেতু বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং এর প্রবৃদ্ধি বাণিজ্যের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল, তাই বাণিজ্য নীতির বিষয়ে উদ্বেগ রয়েছে দেশের ব্যবসায়ীদের।

বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক থেকে। এর মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশ আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। এর বাইরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাজ্য থেকে আসে ৫০ শতাংশ। তবে সুষ্ঠু নির্বাচন ও যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক অনুমোদন দেওয়া শ্রমনীতির কারণে দেশের রপ্তানির ওপর হুমকি তৈরি হচ্ছে।

গত অক্টোবরের শেষ দিকে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকরা মজুরি বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলনে নামেন। বেশ কয়েকটি কারখানায় আগুন ও ভাঙচুরের পর আন্দোলন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। পরে শ্রমিকদের দাবির মুখে ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও তা মানেননি তারা।

গত সপ্তাহে ওয়াশিংটনে অবস্থিত বাংলাদেশের কাউন্সেলর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে বাণিজ্যে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে সরকারকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন। যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতির বিষয়ে গত ২০ নভেম্বর ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে ‘শঙ্কা’ প্রকাশ করে বাণিজ্য সচিবকে একটি চিঠি পাঠানো হয়। ওই চিঠিতে বলা হয়, শ্রম অধিকারবিষয়ক নতুন এ নীতির লক্ষ্যবস্তু হতে পারে বাংলাদেশ। কারণ, শ্রমিক অধিকার লঙ্ঘিত হলে এই নীতি ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান কিংবা রাষ্ট্রের ওপর আরোপের সুযোগ রয়েছে।

ইতিমধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উগান্ডা ও জিম্বাবুয়েতে মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!