• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

এনবিআরের সঙ্গে বিসিআই’র প্রাক-বাজেট আলোচনা সভা


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৪, ০৫:৩৯ পিএম
এনবিআরের সঙ্গে বিসিআই’র প্রাক-বাজেট আলোচনা সভা

ছবি প্রতিনিধি

ঢাকা: বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মধ্যকার প্রাক-বাজেট আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ) বিসিআই এর প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন।

সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন- আবুল কালাম ভূইয়া, জিয়া হায়দার মিঠু, এম. এ রাজ্জাক খান,  রুসলান নাসির,  নাজমুল আনোয়ার,  মো. খায়ের মিয়া ও মো. মাহফুজুর রহমান পরিচালকবৃন্দ।

সভার শুরুতে চেয়ারম্যান জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে বিসিআই পরিচালনা পর্ষদের পক্ষ হতে দেশিয় পণ্য ব্যবহারে উৎসাহিত করার বিসিআই এর স্লোগান “আমার পণ্য আমার দেশ” এর একটি ফ্রেম উপহার দেওয়া হয়। আসন্ন জাতীয় বাজেটে (২০২৪-২০২৫) এ অন্তভুক্তির জন্য বিসিআই সভাপতি নিম্নলিখিত সুপারিশ উপস্থাপন করেন।

বিসিআই সভাপতি বলেন, বিসিআই সমগ্র বাংলাদেশ ভিত্তিক সর্বপ্রকার শিল্পের প্রতিনিধিত্বকারী একক এবং একমাত্র জাতীয় শিল্প চেম্বার। বিসিআই তরুণ শিল্প উদ্যোক্তা সৃষ্টি, মাইক্রো ও স্মল শিল্প উদ্যোক্তা সৃষ্টি, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, শিল্পায়নের প্রসার, দেশীয় শিল্পের সুরক্ষা এবং বিনিয়োগ ও শিল্পায়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র বিমোচন ছাড়াও স্থানীয় সকল শিল্পের সর্বপ্রকার প্রতিবন্ধকতা নিরসনে কাজ করে চলেছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বৈশ্বিক মন্দা ও ডলার সংকটের মধ্যে সরকারের জাতীয় উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা, প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১, এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন-২০৩০, ২০২৬ সনে স্বল্পোন্নত দেশ হতে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের প্রক্রিয়া এবং ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় পথ প্রদর্শক হিসেবে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট কাজ করবে বলে বিসিআই বিশ্বাস করে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বাংলাদেশের করপোরেট ব্যবস্থাকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে নেওয়ার ব্যাপারে কাজ শুরু করেছে এবং আমরাও এ ব্যবস্থাকে সাধুবাদ জানাই। এ ব্যবস্থা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে শিল্প খাতের নিম্নলিখিত সমস্যা সমূহের সমাধানের সুপারিশ পেশ করছি-

ধারা ৪৬ (৩) মোতাবেক বীমা দাবি, স্যালভেজ বা ক্ষতির পর উদ্ধারকৃত অংশ যদি পরিসম্পদের অবলোপিত মূল্য হইতে অধিক হয় সেক্ষেত্রে উক্ত অর্থের উপর সাধারণ কর হার (২২.৫%/২৭.৫%/৩০%) প্রয়োগ করা হয়, যদিও রপ্তানি ও টেক্সটাইল ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে ব্যবসায়িক কর হার ১০%/১২%১৫%। এক্ষেত্রে আমরা উক্ত আয়ের উপর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ের জন্য প্রযোজ্য ব্যবসায়িক কর হার নির্ধারনের প্রস্তাব করছি।

ধারা ৪৬ (১০) মোতাবেক প্রারম্ভিক মূলধন যদি ব্যবসা শুরুর ৫ বৎসরের মধ্যে কমে যায় তাহলে ওই কমে যাওয়া অংশকে আয় হিসেবে গণ্য করা হয় তথা স্বাভাবিক হারে আয়কর দিতে হয়। আমরা এই বিধান রহিত করনের প্রস্তাব করছি।

ধারা ৪৯ মোতাবেক বিবিধ খরচ অনুমোদনের কোন বিধান নেই কিন্তু প্রতিষ্ঠানের প্রবৃদ্ধির সাথে বিবিধ খরচ এবং অনবলোপিত খরচ অপরিহার্য যা কর্তৃপক্ষ বিবেচনায় নিতে রাজি নয়, আমরা বিবিধ খরচকে বিবেচনার প্রস্তাব করছি।

ধারা ৫৩ অনুসারে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য উৎস যেমন সিস্টার কনসার্ন বা সহযোগী প্রতিষ্ঠান থেকে ঋন গ্রহণের বিপরীতে প্রদেয় সুদের পরিমাণ ১৫ লাখ টাকার অধিক হলে খরচ হিসেবে অনুমোদনের জন্য বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত সীমা ও পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়। আমার এ ধরনের সুদ যে পরিমাণ হোক না কেন তাহা খরচ হিসেবে অনুমোদনের প্রস্তাব করছি। 

ধারা ৫৫ (ট) অনুসারে যেকোন ধরনের শ্রমিক/কর্মচারীর যেকোন পরিমাণ বেতন ভাতা/মজুরি ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধের বিধান করা হয়েছে। বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক অবস্থা বিবেচনা করে যাহা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য অনুসরণ করা বলতে গেলে প্রায় অসম্ভব। আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এর ধারা ৩০ অনুযায়ী ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত নগদে বেতন ভাতা/মজুরি প্রদান অনুমোদিত ছিল। আমরা আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এর বিধান ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব করছি।

ধারা ৫৫ (ত) অনুসারে মূলধনী প্রকৃতির কোন ব্যয় কোম্পানির প্রফিট এন্ড লস অ্যাকাউন্টে চার্জ করলে তাহা ধারা ৫৬ (১) অনুসারে বিশেষ ব্যবসা আয় হিসেবে গণ্য করা হয় এবং উক্ত আয়ের উপর সাধারন কর হার (২২.৫%/২৭.৫%/৩০%) হারে কর নির্ধারন করা হয়। পরবর্তীতে উক্ত অনঅনুমোদিত মূলধনী ব্যয়ের ক্ষেত্রে তৃতীয় তাফসিলের অংশ ২ এর প্যারা ৫ অনুযায়ী পরবর্তী করবর্ষ হতে ১০% শতাংশ হারে এমোর্টাইজেশন ভাতা হিসাবে অনুমোদিতা হয় এবং উক্ত ভাতার উপর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ের জন্য প্রযোজ্য ব্যবসায়িক কর হার অর্থাৎ ১০%/১২%/১৫% হারে সুবিধা প্রদান করা হয়।  আমরা ধারা ৫৬ (১) অনুসারে উক্ত বিশেষ ব্যবসা আয়ের উপর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ের জন্য প্রযোজ্য ব্যবসায়িক কর হার নির্ধারনের প্রস্তাব করছি।

ধারা ৫৫ (থ) অনুসারে যেকোন দায় যাহা সুস্পষ্টভাবে নিরুপিত নহে বলতে আয়কর পরিপত্র ২০২৩ এ কুঋণ সঞ্চিতিকে বুঝানো হয়েছে। কুঋণ সঞ্চিতি যে বছরে রাখা হয় তাহা উক্ত কর বছরে ধারা ৫৬ (১) অনুসারে “বিশেষ ব্যবসা আয়” হিসাবে গন্য করা হয় এবং উক্ত আয়ের উপর সাধারণ কর হার (২২.৫%/২৭.৫%/৩০%) হারে কর নির্ধারন করা হয়। পরবর্তী বছরে উক্ত কুঋণ সঞ্চিতি প্রকৃত কুঋণ ব্যয় হলে তাহা শর্ত সাপেক্ষে ব্যবসায়িক ব্যয় হিসাবে অনুমোদন করা হয় এবং এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ের জন্য প্রযোজ্য ব্যবসায়িক কর হার অর্থাৎ ১০%/১২%/১৫% হারে সুবিধা প্রদান করা হয়।  আমরা ধারা ৫৫ (থ) রহিত করনের প্রস্তাব করছি। 

ধারা ৫৫ (দ) অনুসারে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের সহিত সম্পর্কিত নহে এরূপ সকল প্রকার ব্যয় যেমন গিফট, ডোনেশনকে ধারা ৫৬ (১) অনুসারে “বিশেষ ব্যবসা আয়” হিসাবে গন্য করা হয় এবং উক্ত আয়ের উপর সাধারণ কর হার (২২.৫%/২৭.৫%/৩০%) হারে কর নির্ধারণ করা হয়। আমরা উক্ত আয়ের উপর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ের জন্য প্রযোজ্য ব্যবসায়িক কর হার নির্ধারনের প্রস্তাব করছি।

ধারা ৫৫ অনুসারে মার্কেটিং, এন্টারটেইনমেন্ট, সেম্পল, বিদেশ ভ্রমণ, এমপ্লয়ি পারকুইজিট, ইনসেনটিভ বোনাস, টেকনিক্যাল ফি ইত্যাদির ক্ষেত্রে খরচের সীমা রহিত করে প্রকৃত খরচ হিসেবে আমলে নেওয়ার প্রস্তাব করছি।

ধারা ৫৫ অনুসারে কোন খরচ বা বিয়োজন অনুমোদিত না হলে সাধারণ কর হার অর্থাৎ (২২.৫%/২৭.৫%/৩০%) হারে কর আরোপ করা হয় যা রপ্তানি ও টেক্সটাইল কোম্পানির জন্য প্রযোজ্য কর হারের প্রায় দ্বীগুন। এক্ষেত্রে আমরা সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ের জন্য প্রযোজ্য ব্যবসায়িক কর হার নির্ধারনের প্রস্তাব করছি।

ধারা ৫৬ (২) অনুসারে “বিশেষ ব্যবসা আয়” বা ব্যবসা হতে আয়ের বিশেষ ক্ষেত্রে আয়ের বিপরীতে কোন প্রকার ব্যয়, লোকসান সমন্ময় বা জের টানা বা ৩য় তফসিলের অধীনে কোন অবচয় ভাতা অনুমোদিত হবে না বরং এই আয়ের উপর সাধারণ কর হার নির্ধারন করা হয় (২২.৫%/২৭.৫%/৩০%)। আমরা উক্ত আয়ের উপর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ের জন্য প্রযোজ্য ব্যবসায়িক কর হার নির্ধারনের প্রস্তাব করছি।

ধারা ৬৭ (৭) অনুসারে, সম্পদ অর্জনের (Asset Acquisition) এর ক্ষেত্রে উৎসে কর কর্তন না করা হলে তা অন্যান্য উৎসের আয় হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং সাধারণ কর হারে কর আরোপ করা হয়। আমরা এ বিধান বাতিলের প্রস্তাব করছি।

ধারা ১৬৩ ও ১৬৪ অনুসারে যদি উৎসে কর্তিত কর বা অগ্রিম কর প্রযোজ্য হারে নির্ধারিত করের চেয়ে বেশি হয় তাহলে অতিরিক্ত পরিশোধিত কর ফেরত দেওয়া হয় না বরং এটাকে ন্যূনতম কর হিসেবে গণ্য করা হয়। এই ধারণা আয়কর আইনের মৌলিক মূলনীতির পরিপন্থী। আমার উক্ত ন্যূনতম করের বিধান রহিত করনের প্রস্তাব করছি।

ধারা ১৭৪ অনুসারে কোন করদাতা যথাসময়ে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে ব্যর্থ হলে মাসিক ৪% হারে গ্রস ট্যাক্স লায়াবেলিটির উপরে বিলম্ব সুদ আরোপ করা হয়। আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এর ধারা ৭৩ এ অনুযায়ী মাসিক ২% হারে নীট ট্যাক্স লায়াবেলিটির উপরে বিলম্ব সুদ আরোপ করার বিধান ছিল অর্থাৎ গ্রস ট্যাক্স লাইবেলিটি থেকে পরিশোধিত অগ্রিম কর বাদ দিয়ে অপরিশোধিত অর্থের উপরে মাসিক ২% হারে সুদ আরোপ করা হতো। আমরা আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এর বিধান ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব করছি।

চেম্বার বা এসোসিয়েশন যদি সরকারি টেকনিক্যাল বা ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে নূন্যতম ৫ থেকে ৬টা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে বছরে নূন্যতম ১০০ জন দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টির মাধ্যমে চাকুরির ব্যবস্থা করে দেয় সেক্ষেত্রে চেম্বার বা এসোসিয়েশনের যে চাকরি দাতা সদস্য প্রতিষ্ঠান কমপক্ষে ২৫ জনকে চাকরি দেবে সে প্রতিষ্ঠানকে ২% কর রেয়াতের সুপারিশ করছি।

কোন বৃহত শিল্পপ্রতিষ্ঠান সর্বনিম্ন ২৫ জন তৃতীয় লিঙ্গের শ্রমিক নিয়োগ দিলে ২% বিশেষ কর সুবিধা প্রদানের প্রস্তাব করছি ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান সর্বনিম্ন ১০ জন তৃতীয় লিঙ্গের শ্রমিক নিয়োগ দিলে ৫% বিশেষ কর সুবিধা প্রদানের প্রস্তাব করছি।

Gross Profit (GP) খাতভিত্তিক ভাবে নির্ধারণ করা হয়ে থাকে যা যুক্তিসংগত নয়। আবার GP কমে গেলে অথবা ব্যবসায় লস হলে বিবেচনায় নেয়া হয় না। এমনকি পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় বিক্রয় কম হলেও কর কর্তৃপক্ষ বিবেচনায় নিতে রাজি হয় না এ ধারনার সমাপ্তি টানা দরকার।

ব্যবসায় ক্ষতি হওয়া সত্ত্বেও টার্নওভারের উপর ০.৬০% হারে ন্যূনতম কর নির্ধারন করা হয়ে থাকে যা প্রতিষ্ঠানের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়; আমার উক্ত ন্যূনতম করের বিধান রহিত করনের প্রস্তাব করছি।

ন্যূনতম কর হিসেবে রপ্তানি থেকে প্রাপ্ত অর্থের উপর উৎসে কর কর্তন করা হয়ে থাকে। পরবর্তীতে কর নির্ধারণকালে যদি অতিরিক্ত করের উদ্ভব হয় তাহলে কোম্পানিকে উক্ত অতিরিক্ত কর পরিশোধ করতে হয়। আমরা রপ্তানি থেকে উৎসে কর কে চুড়ান্ত কর দায় বা Final Settlement হিসেবে গণ্য করার প্রস্তাব করছি।

ওয়াইএ

Wordbridge School
Link copied!