• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

মন ভাঙার মন রাঙার মনোনয়ন


নিজস্ব প্রতিবেদক নভেম্বর ২৭, ২০২৩, ০১:০০ পিএম
মন ভাঙার মন রাঙার মনোনয়ন

ঢাকা : কৌশল অনুযায়ীই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নতুন মুখ রেখে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে নতুনদের প্রতি আস্থা রাখার প্রতিফলন ঘটল।

এ ছাড়া আগে থেকেই আলোচনায় থাকা বাদের তালিকাও একেবারে ছোট নয়। তিনজন প্রতিমন্ত্রীও রয়েছেন। নারী প্রার্থীর সংখ্যা আগেরবারের তুলনায় বেড়েছে। সব মিলিয়ে ২৯৮টি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ।

রোববার (২৬ নভেম্বর) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

যে দুটি আসনের প্রার্থীদের নাম প্রকাশ করা হয়নি সেগুলো হচ্ছে কুষ্টিয়া-২ ও নারায়ণগঞ্জ-৫। ওবায়দুল কাদের বলেন, দুটি আসন আজ (গতকাল) প্রকাশিত হচ্ছে না। এটি পরে প্রকাশ করা হবে। এ দুটি আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য (এমপি) যথাক্রমে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট ১৪ দলের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সেলিম ওসমান।

হাসানুল হক ইনু গতকাল তার আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করার পর বলেছেন, ১৪ দল জোটগত নির্বাচন করবে।

আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘেঁটে দেখা যায়, একাদশ সংসদে ২৬২ এমপির মধ্য থেকে ৭১ জনকে এবার মনোনয়ন দেয়নি আওয়ামী লীগ। মনোনয়ন পাওয়ার যে মানদণ্ড ও যোগ্যতা নির্ধারণ করেছে আওয়ামী লীগ, তাতে দলটির জাতীয় সংসদ নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ড ৭১ জনকে অযোগ্য হিসেবে চিহ্নিত করেছে। প্রায় চার দিন যাচাই-বাছাই শেষে বাদ দেওয়া হয়েছে ৭১ জনকে। দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন ৩ হাজার ৩৬২ জন।

গতবার ছেড়ে দেওয়া ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের ৮টি ও জাতীয় পার্টির ২৩টি আসনের মধ্যে ২৮টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছেন ওবায়দুল কাদের। তাদের সবাই নতুন মুখ।

ওবায়দুল কাদেরের ঘোষণায় দেখা যায়, নির্বাচনকালীন সরকারে থাকা শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ বাবু এবার মনোনয়ন পাননি। এ ছাড়া বর্তমান সংসদে হেভিওয়েটদের মধ্য চট্টগ্রাম-১ আসনে ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেনকে বাদ দিয়ে তার ছেলে মাহাবুব উর রহমানকে (রুহেল) দেওয়া হয়েছে। ফরিদপুর-৩ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে বাদ দিয়ে জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শামীম হককে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। মাগুরা-১ আসন থেকে সাইফুজ্জামান শিখরকে বাদ দিয়ে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে বেছে নেওয়া হয়েছে। বরিশাল-২ আসনে শাহে আলমকে বাদ দিয়ে জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনূস ও বরিশাল-৪ আসনে পঙ্কজ দেবনাথকে সরিয়ে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। চাঁদপুর-১ আসনে ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরকে সরিয়ে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। সুনামগঞ্জ-২ আসনে জয়া সেনগুপ্তাকে বাদ দিয়ে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মাহমুদকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, হেভিওয়েট এ নেতাদের বিরুদ্ধে যাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, তারা সবাই নতুন মুখ।

আওয়ামী লীগ ঘোষিত প্রার্থী তালিকায় দেখা যায়, মোট ১০৬টি আসনে নতুন প্রার্থীর মধ্যে ২৭ জন ফিরে এসেছেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া ৭৯ জনই নতুন মুখ। ২৯৮টি চূড়ান্ত মনোনীত নেতার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৪ জন নারী রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৯ জনই নতুন। গত সংসদের চার নারী বাদ পড়েছেন। পুরনোদের মধ্যে মনোনয়ন পেয়েছেন ১৯২ জন।

৭৯ জন নতুন মুখ : সংসদীয় ৩০০ আসনের প্রথমটি পঞ্চগড়-১ আসনে নাঈমুজ্জামান ভূঁইয়া (মুক্তা), ঠাকুরগাঁও-২ আসনের সংসদ সদস্য দবিরুল ইসলামের জায়গায় তার ছেলে মাজহারুল ইসলাম, রংপুর-৫ আসনে এইচএন আশিকুর রহমানের পরিবর্তে তার ছেলে রাশেক রহমান, ঢাকা-৭ আসনে হাজী মো. সেলিমের বদলে তার বড় ছেলে সোলায়মান সেলিম ও চট্টগ্রাম-১ আসনের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের জায়গায় তার ছেলে মাহবুব উর রহমান মনোনয়ন পেয়েছেন। এর মধ্যে মামলার সাজা হওয়ায় নির্বাচনে অযোগ্য হাজী মো. সেলিম। নতুন অন্যরা হলেন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মাহমুদ (সুনামগঞ্জ-২), আবদুল কাহার আকন্দ (কিশোরগঞ্জ-২), আফরোজা বারী (গাইবান্ধা-১), সংসদ সদস্য প্রয়াত গোলাম সবুর টুলুর স্ত্রী সুলতানা নাদিরা (বরগুনা-২), আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ (বরিশাল-৪), প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিলের স্ত্রী নিলুফার আনজুম (ময়মনসিংহ-৩), আওয়ামী লীগ নেতা প্রয়াত এমপি রহমত আলীর স্ত্রী রুমানা আলী (গাজীপুর-৩), কৃষি ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী (লক্ষ্মীপুর-৪), সাবেক এমপি রফিকুল আনোয়ারের মেয়ে খাদিজাতুল আনোয়ার (চট্টগ্রাম-২), আবুল কালাম আজাদ (জামালপুর-৫), মোহাম্মদ সাদিক (সুনামগঞ্জ-৪), প্রধানমন্ত্রীর সাবেক সামরিক সচিব সালাহউদ্দিন মিয়াজী (ঝিনাইদহ-৩), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ডা. কামরুল হাসান খান (টাঙ্গাইল-৩), মেজর জেনারেল (অব.) আবদুল হাফিজ মল্লিক (বরিশাল-৬), প্রধানমন্ত্রীর সাবেক প্রটোকল অফিসার আলাউদ্দিন আহম্মেদ চৌধুরী নাছিম (ফেনী-১), সৌমেন প্রসাদ পা-ে (কুড়িগ্রাম-৩), বিপ্লব হাসান (কুড়িগ্রাম-৪), তৌহিদুর রহমান (বগুড়া-২), সিরাজুল ইসলাম খান (বগুড়া-৩), হেলাল উদ্দিন কবিরাজ (বগুড়া-৪), সোরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী (নওগাঁ-৪) প্রমুখ।

ফের মনোনয়ন পেলেন ২৭ জন : অতীতে সংসদ সদস্য হয়েছেন বা মনোনয়ন পেয়েও নির্বাচিত হতে পারেননি এমন ২৭ জনকে আবার মনোনয়ন দিয়ে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এর মধ্যে চাঁদপুর-২ আসনে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, ঢাকা-১৩ আসনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, ফরিদপুর-১ আসনে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান, ঢাকা-৮ আসনে বর্তমান এমপি ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খানে মেননের স্থলে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। এ ছাড়া আবারও মনোনয়ন পেয়েছেন ইমদাদুল হক (ঠাকুরগাঁও-১), গোলাম মোস্তাফা (নীলফামারী-২), আবদুল ওয়াদুদ দারা (রাজশাহী-৫ আসনে), শফিকুল ইসলাম (সিরাজগঞ্জ-৪) চয়ন ইসলাম (সিরাজগঞ্জ-৬), ননী গোপাল মণ্ডল (খুলনা-১), তালুকদার মো. ইউনুস (বরিশাল-২), অনুপম শাহজাহান জয় (টাঙ্গাইল-৮), আবদুছ ছাত্তার (ময়মনসিংহ-৮), মোশতাক আহমেদ রুহী (নেত্রকোনা-১), সানজিদা খানম (ঢাকা-৪), আবদুল্লাহ আল কায়সার (নারায়ণগঞ্জ-৩), শফিকুর রহমান চৌধুরী (সিলেট-২), ফয়জুর রহমান (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫) এবং মোহাম্মদ আলী (নোয়াখালী-৬ আসনে)।

বাড়ল নারী প্রার্থী : বর্তমান সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ও উপনেতা মতিয়া চৌধুরীসহ আওয়ামী লীগের ১৯ জন নারী এমপি রয়েছেন। তাদের মধ্যে চারজন বাদ পড়েছেন। বাদ পড়াদের মধ্যে আছেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান, সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের মেরিনা জাহান কবিতা, নোয়াখালী-৬ আসনের আয়েশা ফেরদাউস ও জয়া সেনগুপ্তা।

নতুন মনোনয়ন পাওয়া নারীরা হলেন আফরোজা বারী (গাইবান্ধা-১), জান্নাত আরা হেনরী (সিরাজগঞ্জ-২), সুলতানা নাদিরা (বরগুনা-২), শাম্মী আহমেদ (বরিশাল-৪), নিলুফার আনজুম (ময়মনসিংহ-৩), রুমানা আলী (গাজীপুর-৩), কৃষি ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী (লক্ষ্মীপুর-৪), খাদিজাতুল আনোয়ার (চট্টগ্রাম-২)।

কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে ৩৭ জন প্রার্থী : আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ৭৮ সদস্যের মধ্যে দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ৩৭ জন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। একাদশের উপনির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া দুজনসহ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নতুন মনোনয়ন পেয়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটির ১৪ জন নেতা। অন্যদিকে একাদশ সংসদে মনোনয়ন পেয়েছিলেন এমন চার নেতা এবার মনোনয়ন পাননি।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সভাপতিমন্ডলীর ১৬ জন সদস্যের মধ্যে মনোনয়ন পেয়েছেন ১৪ জন। সম্পাদকম-লীর ৩৩ জন সদস্যের মধ্যে মনোনয়ন পেয়েছেন ১৮ জন। এর মধ্যে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক চারজনের সবাই এবং আট সাংগঠনিক সম্পাদকের ছয়জন মনোনয়ন পেয়েছেন। কমিটির ২৭ জন কার্যনির্বাহী সদস্যের মধ্যে ৭ জন মনোনয়ন পেয়েছেন।

আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা, সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফর উল্যাহ, পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য, ড. মো. আবদুর রাজ্জাক, ফারুক খান, শাজাহান খান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, কামরুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান ও সিমিন হোসেন রিমি মনোনয়ন পেয়েছেন। তাদের মধ্যে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আবদুর রহমান একাদশে মনোনয়ন পাননি। তবে নবম ও দশম সংসদে দলের এমপি ছিলেন।

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!