গাছের সঙ্গে এ কেমন শত্রুতা?

  • পঞ্চগড় প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: আগস্ট ১৩, ২০২২, ০৬:২৪ পিএম
গাছের সঙ্গে এ কেমন শত্রুতা?

পঞ্চগড়: পঞ্চগড় সদর উপজেলায় রাতের আঁধারে এক প্রবাসীর চা বাগানের ভেতরের পেপে, সুপারি, নারিকেল ও মেহগনির প্রায় পাঁচ হাজার গাছ নির্বিচারে কেটে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। এতে ওই প্রবাসীর প্রায় ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি। 

গত বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) গভীর রাতে জেলার সদর উপজেলার চাকলারহাট ইউনিয়নের দক্ষিণ ভাটিয়া পাড়া এলাকায় সিদ্দিকী টি স্টেটে এ ঘটনাটি ঘটে৷ তবে এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। 

জানা গেছে, জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার বাসিন্দা মিজানুর রহমান সিদ্দিকী তিন দশকের বেশি সময় ধরে রয়েছেন আমেরিকাতে। প্রবাসে থেকে কষ্টের টাকা পাঠিয়ে পঞ্চগড় সদর চাকলাহাট ইউনিয়নের প্রায় ২২ একর জমি কিনে সেখানে গড়ে তোলেন চা বাগান। 

পরিচ্ছন্ন ও দৃষ্টিনন্দন চা বাগানের ভেতরেই করেছে পেঁপে সুপারি, পেয়ারা, মেহগনি, নারিকেল ও আমের বাগানও। ৬০ জন নারী পুরুষের কর্মসংস্থান হয়েছে সেখানে। বাগানটি সৌন্দর্য দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করেন স্থানীয়রা। বৃহস্পতিবারও সব ঠিকঠাক ছিল। শুক্রবার সকালে চা বাগানে পাতা তুলতে গিয়ে বাগানের দৃশ্য দেখে চমকে উঠেন। রাতের আঁধারে পেঁপে, সুপারি, নারিকেল ও মেহগনির প্রায় ৬ হাজার গাছ নির্বিচারে কেটে ফেলে গেছে দুর্বৃত্তরা। 

বাগানের এমন চিত্র দেখে শ্রমিকরা নির্বাক হয়ে যান। স্থানীয়রাও এমন নৃসংসতার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এমনকি এ ঘটনায় বাগানটির শ্রমিক কর্মচারীরও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। স্থানীয়রা দুর্বৃত্তদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। 

এ বিষয়ে ওই বাগানের দায়িত্বে থাকার ম্যানেজার আনিছুর রহমান আনিছ বলেন, আমরা শুক্রবার সকালে চা বাগানে চা প্লাকিং করার চা শ্রমিকরা বাগানে কাজ করতে গেলে এসময় হঠাৎ তারা বাগানের সব গাছ কাটা দেখতে পায়৷ পরে আমরা বাগানে গিয়ে দেখি বাগানের কয়েক হাজার গাছ কেটে ফেলা হয়েছে৷ আমরা জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দ্রুত বিচারের দাবি জানাচ্ছি। 

এদিকে মিজানুর রহমান সিদ্দিকী জানান, আমি বিদেশে থেকে যা আয় করেছি তা দিয়ে তিলে তিলে ওই বাগানটি চাকলারহাট এলাকায় গড়ে তুলেছি৷ আমার বাগানটাই একমাত্র সম্পদ ও স্বপ্ন। আমার হাতে গড়া সেই বাগানের প্রায় ৬ হাজার পেঁপে, নারিকেল, সুপারী ও মেহগনির গাছ রাতের আধারে কেটে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা৷ এ ঘটনায় আমি দিশেহারা হয়ে পড়েছি৷ আমি স্থানীয় প্রশাসনের কাছে এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও জড়িতেদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
 
এদিকে খবর পেয়ে বিকেলে পঞ্চগড় পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী, জেলা পরিষদ প্রশাসক আনোয়ার সাদাত সম্রাট, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ মিয়াসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ক্ষতিগ্রস্ত বাগানটি পরিদর্শন করেছেন।

পরিদর্শন শেষে জেলা পরিষদের প্রশাসক আনোয়ার সাদাত সম্রাট বলেন, একজন প্রবাসী বিদেশে থেকে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে গ্রামে একটি বাগান গড়ে তুলেছেন। কিন্তু হঠাৎ ওই প্রবাসীর বাগানের কয়েক হাজার গাছ কেটে ফেলা হয়েছে ঘটনাটি দুঃখ জনক৷ আমি আশাবাদী প্রশাসন এঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িতদের বের করে বিচারের আওয়াতায় নিয়ে আসবে৷ 

এদিকে পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ মিয়া জানান, আমরা সরেজমিনে প্রবাসীর ওই বাগানটি পরিদর্শন করেছি। যারা বাগানের গাছ কেটেছেন তারা একটি অমানবিক কাজ করেছেন৷  এঘটনাটি অনেক দুঃখজনক ঘটনা৷ আমরা ঘটনাটি তদন্ত করে দেখতেছি। যারাই জড়িত থাকুক না কেন তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে৷ 

সোনালীনিউজ/এম

Link copied!