চাঁপাইনবাবগঞ্জ: চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নতুনহাট টিকরামপুর এলাকার মোহনপুর গ্রামের হায়াত আলী। জীবিকার সন্ধানে ২০১৪ সালে তিনি পাড়ি জমান বিদেশে। কাতারপ্রবাসী হায়াত আলী তিন মাস আগে ছুটিতে দেশে ফিরে আসেন।
গত বুধবার হায়াত আলী চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে যান। সেখানে গিয়ে তিনি ৮ বছর আগে বিনা টিকিটে ট্রেনে ওঠার ভাড়া পরিশোধ করতে চান।
ওই সময় স্টেশন মাস্টারের কাছে তিনি জানান, ২০১৪ সালের ১৭ অক্টোবরের দিকে বিনা টিকিটে ঢাকা থেকে রাজশাহী পর্যন্ত এসেছিলেন। সেই টিকিটের টাকা তিনি পরিশোধ করতে চান। পরে স্টেশন মাস্টার তাকে ওই দিনের টিকিটের সমমূল্যের একটি টিকিট করে দেন। মূল্য পরিশোধের পর সেই টিকিট ছিঁড়ে ফেলেন হায়াত আলী।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে হায়াত আলী বলেন, ‘বিদেশে যাওয়ার জন্য ইন্টারভিউ দিতে ২০১৪ সালের অক্টোবরের দিকে ঢাকা গিয়েছিলাম। যতদূর মনে আছে অক্টোবরের ১৭ তারিখ রাতে এয়ারপোর্ট স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠি বাড়ি আসার জন্য। ঢাকা-রাজশাহী পর্যন্ত চলা রাত ১২টার ওই ট্রেনে কোনো সিট ছিল না। স্ট্যান্ডিং টিকিট করতে পারতাম, মিথ্যা কথা বলব না; পকেটে টাকাও ছিল, কিন্তু তখন মনে হলো ট্রেনে ওঠে যাই, পরে চেকারকে টাকা দিয়ে দেব। ট্রেনে উঠে দুই সিটের মাঝে যে ফাঁকা জায়গা থাকে, সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম।
‘সেখানে ওয়ালে একটু হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। পরে যখন ঘুম ভাঙে, দেখি চেকার চলে গেছে। এরপর সকালে রাজশাহীতে নেমে বাড়ি চলে আসি। এরপর ২০১৪ সালের শেষের দিকে আমার বিদেশে যাওয়ার সবকিছু ঠিক হয়ে যায়, তখন বিদেশ চলে যাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘পরে কয়েক বছর পর একবার দেশে ছুটিতে এসেছিলাম, তারপর আবার বিদেশ চলে যাই। এ বছর আবার ছুটিতে এসেছি। তিন মাস হয়ে গেল বিদেশ থেকে আসা। একদিন মোবাইলে ওয়াজ শুনছিলাম, ঋণের বিষয়ে কথা বলছিল হুজুরে যে, দেশের টাকা মেরে খেতে হয় না। এটা ওয়াজে শুনে সেদিন ট্রেনে টিকিট ছাড়া ওঠা ও টাকা না দেয়ার কথা মনে পড়ে। তারপর থেকে মনটা কেমন কেমন করছিল।
‘তাই দুই-তিন দিন আগে স্টেশনে টাকা দিতে গিয়েছিলাম। স্টেশনে যারা ছিল, তাদেরকে ঘটনাটা খুলে বলি এবং টিকিটের টাকা পরিশোধ করতে চাই বলি। ৩৪০ টাকা দিলে তারা একটা টিকিট দেন, পরে সেই টিকিট ছিঁড়ে ফেলে দেয়া হয়, যাতে তা আবার বিক্রি করতে পারেন। এভাবেই আমার টাকাটা নেন স্টেশন মাস্টার।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার মোহাম্মদ ওবাইদুল্লাহ বলেন, ‘একজন যাত্রী প্রায় ৮ বছর আগে রেলে বিনা টিকিটে ভ্রমণের কারণে গত ৭ জুন টিকিটের দাম পরিশোধ করতে এসেছিলেন। ঢাকা-রাজশাহী পর্যন্ত একটি টিকিট কেটে দিয়ে তার কাছে সেই টিকিটের দাম নেয়া হয়েছে।
‘সেই সঙ্গে নতুন করে কাটা টিকিটটা পুনরায় বিক্রির জন্য সিস্টেমে দেয়া হয়। এতে করে তার পুরনো ভ্রমণের টাকা পরিশোধও হলো নতুন করে আবারও অন্য যাত্রীর কাছে সেই টিকিট বিক্রিও করতে পারল রেলওয়ে।’
সোনালীনিউজ/আইএ
আপনার মতামত লিখুন :