চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে মাটি ও বালি কাটার মহৌৎসব চলছে, প্রশাসন নিরব 

  • চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মে ২৫, ২০২৫, ০৬:০৯ পিএম
চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে মাটি ও বালি কাটার মহৌৎসব চলছে, প্রশাসন নিরব 

চুয়াডাঙ্গা: জীবননগর উপজেলার উথলী ইউনিয়নের একতারপুর বাওড়ের আশেপাশের তিন ফসলি জমির (টপ সয়েল)  বিলীন হচ্ছে।  

ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু ও মাটি উত্তোলন করে বিক্রির মহোৎসব চলছে। উৎপাদন হ্রাসের শঙ্কা। বিনষ্ট হবে প্রায় ৭০০ বিঘা কৃষি জমি ও হাইওয়ে’র সড়ক। এতে ফসল উৎপাদন ব্যাপকহারে হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা করছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। এসব জমিতে বছরে মৌসুমে ধান, পাট, ভুট্টা, আখ ও শীতকালীন সবজি ব্যাপকভাবে উৎপাদন হয়। 

১৫ টি ট্রাক ও ১০টি ট্রাক্টরে মাটি যাচ্ছে ইটভাটা ও অপরিকল্পিত বাড়ির কাজে । এভাবেই উপজেলার ৮ ইউনিয়নে চলছে প্রায় ৫টি ভেকু ১ টি ড্রেজার। ড্রেজিং বন্ধে প্রশাসনের দুর্বল ভূমিকা নিয়ে সচেতন মহলে চলছে নানা গুঞ্জন। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার প্রায় ৮ টি ইউনিয়নের কোন কোননা  গ্রামের কোন না কোন স্থানে ড্রেজার ও ভেকু দিয়ে মাটি উত্তোলন করছেন। কৃষি জমির মাটি কেটে উজাড় করা হচ্ছে। ভেকুতে জমির টপ সয়েল ও ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে তিন ফসলি  জমিগুলোকে ৪০ থেকে ৫০ ফুট গভীর গর্ত করা হচ্ছে। এতে আশ-পাশের ফসলী জমি ভেঙ্গে হতে পারে  জলাশয়। যেভাবে মাটি বিক্রি হচ্ছে তাতে করে ফসল উৎপাদন আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পেতে পারে।

উপজেলার রায়পুর গ্রামে নজরুল মেম্বার পুকুর সংস্কারের নামে বালি উত্তোলন করে বিক্রি করছেন  দেদারছে। বিভিন্ন ইট ভাটায় প্রায় ৮ থেকে ১০ টি ট্রাকে যাচ্ছে দিনে এবং রাতের বেলায়। অভিযুক্ত অবৈধ বালি উত্তোলন কারী নজরুল ইসলামের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বললে তিনি জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট থেকে অনুমতি নিয়ে পুকুর সংস্কার করছেন বিনিময়ে স্যারকে ১৫ থেকে ২০ গাড়ী বালি দিচ্ছেন স্যার বালি কি করছেন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন স্যার উপজেলা পরিষদের টু পার্সেন্টের টাকায় রাস্তার কাজ করছেন সেখানে ব্যবহার করছেন।

বাঁকা ইউনিয়ন ভুমি অফিসের সহকারী তহশিলদার আশরাফুল ইসলাম বলেন, বালি উত্তোলন করছেন শুনেছি আমি ইউ এন ও স্যারের অফিসের সিও সাহেবের সাথে কথা বললে তিনি বলেন স্যার বিষয় টি অবগত আছেন আপনার কথা বলার দরকার নাই। 

এছাড়া উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের ধোপাখালী গ্রামের  টিপু মেম্বার ভৈরব নদীতে ড্রেজার ও ভেকু ভিড়িয়ে মাটি ও বালি উত্তোলন করছেন দীর্ঘ দিন ধরে। রাতে ও দিনে ১০ টি ট্রাকটার দিয়ে উপজেলার বিভিন্ন ভাটায় বিক্রি করছেন বালি ও মাটি।ধোপাখালী গ্রামের সাবেক মেম্বার দোজা উদ্দিন বলেন যে ভাবে পুকুর খননের নামে মাটি ও ভৈরব নদ থেকে বালী উত্তোলন করা হচ্ছে এলাকার কৃষি  জমি যেমন হুমকির মধ্যে পড়বে ঠিক গ্রাম টি এক সময় জলশয়ে পরিনত হতে পারে। তিনি আরো বলেন উপজেলা প্রশাসনের নিকট অভিযোগ করে কোন লাভ হয়নি।

উথলী ইউনিয়নের ভূমি অফিসের সহকারী তহশিলদার ইউনুসের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি শুনেছি একতার পুর বাওড় থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালি উত্তোলন করা হচ্ছে বিষয়টি  ইউ এন ও স্যার অবগত আছেন আমি কিছুই বলতে পারবো না। ধোপাখালী গ্রামে বালি ও মাটি কাটা হচ্ছে শুনেছি  আমি ওই খানে আগামীকাল যাবো।

এছাড়াও মনোহরপুর আবাসন প্রকল্পের পুকুর থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে ৫০ থেকে ৮০ ফিট গভীর করে বালি উত্তোলন করে বিক্রি করা হয়েছে আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দা সাবানা, মুসা, মধু ও আমীর হোসেন বলেন পুকুর থেকে বালু উত্তোলন করার কারণে যে কোন সময় ধসে পড়তে পারে আবাসন প্রকল্পের ১২০ টি বাড়ী পথে বসতে পারে ১২০ টি পরিবার।

সরজমিনে আরও দেখা যায় আন্দুলবাড়িয়া ইউনিয়নের পাকা গ্রামে পুকুর খননের নামে বলি উত্তোলন করা হচ্ছে। মনোহরপুর গ্রামের মাটি বাবা খ্যাত বাবলু ওরফে মাটি বাবলু ভেকু দিয়ে মাটি উত্তোলন করছেন।

তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে মাটি কেটে বিভিন্ন ভাটায় বিক্রি করছেন। এ যেন মাটি ও বালি উত্তোলনের মহা উৎসব। মোবাইল ফোনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলামিন হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন জীবননগরে কোথাও মাটি কাটার বা বালি উত্তোলনের অনুমতি দেওয়া হয়নি কেউ বালি উত্তোলন করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

এআর

Link copied!