লালমনিরহাট: থানায় হামলা ও ভাংচুর চালিয়ে সাজাপ্রাপ্ত দুই আসামিকে ছিনিয়ে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় থানার ওসিসহ অন্তত ২৩ জন আহত হয়েছেন।
গুরুতর আহত দুই পুলিশ সদস্যকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। গতকাল বুধবার রাত ১০টার দিকে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম থানায় এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় পাটগ্রামের সরোরবাজার এলাকায় চাঁদাবাজির দায়ে বেলাল ও সোহেলকে হাতেনাতে আটক করা হয়। পরে পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উত্তম কুমার দাশ তাদের এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। এরপর তাদের নিয়ে এসে থানা হাজতে রাখা হয়।
পরে রাত ১০টার দিকে হঠাৎ দুই শতাধিক লোকজন জড়ো হয়ে থানায় প্রবেশ করে হামলা ও ভাংচুর চালায়। তারা থানার চেয়ার, টেবিল, কম্পিউটার, ল্যাপটপ ভাঙচুর করে এবং গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র তছনছ করে। ইট-পাটকেল ছুঁড়ে জানালার কাঁচ ও দরজা ভেঙে ফেলে।
এসময় পুলিশ বাধা দিলে উভয়পক্ষে সংঘর্ষ বাঁধে। ঘটনার পর থেকে পুরো থানা এলাকা ঘিরে রেখেছে অতিরিক্ত পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনী। আরো জানা গেছে, আসামী বেলাল ও সোহেল স্থানীয় শ্রমিক দল নেতা। তাদের মুক্ত করতেই বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা পরিকল্পিত এই হামলা চালায়।
এ বিষয়ে পাটগ্রাম থানার ওসি মিজানুর রহমান জানান, “দুর্বৃত্তরা পুলিশের কাছ থেকে জোরপূর্বক থানা হাজতের তালা চাবি নিয়ে সাজাপ্রাপ্ত দুই আসামি বেলাল হোসেন ও সোহেল রানা চপলকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করা হলে উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়।
পরে লালমনিরহাট, হাতীবান্ধা ও কালীগঞ্জ থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিজিবি সদস্য এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তিনি আরো বলেন, হামলায় জড়িতদের অনেককে চিহ্নিত করা গেছে এবং তারা স্থানীয় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
তবে বিএনপির পাটগ্রাম উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ওলিউর রহমান সোহেল দাবি করে বলেন, “এটি বিএনপির সঙ্গে পুলিশের কোনো সংঘর্ষ নয়। মূল বিষয়টি পাথর কোয়ারি ইজারাদারদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।”
এদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টির উত্তরাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লিখেছেন, “বিএনপি নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে পাটগ্রামে পরিবহন থেকে চাঁদা আদায় করে আসছে। হাতেনাতে ধরা পড়ার পর তাদের ছিনিয়ে আনতেই এই পরিকল্পিত হামলা হয়েছে।”
ঘটনার পরপরই লালমনিরহাটের পুলিশ সুপার মো. তরিকুল ইসলাম, রংপুর ডিআইজি ও জেলা প্রশাসক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পুলিশ জানিয়েছে, হামলায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করা হবে।
এআর
আপনার মতামত লিখুন :